ন্যাভিগেশন মেনু

১৫ বছরে চট্টগ্রাম ওয়াসায় পানি উৎপাদন সক্ষমতা বেড়েছে ৫৬ কোটি লিটার: এমডি ফজলুল্লাহ


১৯৬৩ সালে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত নগরবাসীকে সুপেয় ও নিরাপদ পানি সরবরাহ করে যাচ্ছে। এছাড়াও শিল্প ও বাণিজ্যিক স্থাপনায় পানি সরবরাহ করে থাকে।

২০০৯ সালে ওয়াসার সার্ভিস এরিয়ায় ৩৭ কোটি লিটার চাহিদার অনুযায়ী উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ১২ কোটি লিটার। সেখানে ২০২৩ সালে ৪৮ কোটি লিটার সার্ভিস এরিয়ার চাহিদায় উৎপাদন সক্ষমতা ৫৬ কোটি লিটারে দাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম ওয়াসায় বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির কথাও স্বীকার করেছেন। সরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো ওয়াসায় অনিয়ম আছে, তবে তা সহনীয় পর্যায়ে। গ্রাহক হয়রানি কমিয়ে আনতে আমরা চেষ্টা করছি। চলমান ও অপেক্ষামান প্রকল্পগুলো শেষ হলে চট্টগ্রাম ওয়াসার কাজের মান বাড়বে বলে জানান তিনি।

বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে আয়োজিত গণশুনানি ও সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ভুক্তভোগী এক গ্রাহকের প্রশ্নে তিনি বিষয়টি স্বীকার করেন।

এর আগে লিখিত বক্তব্য তিনি বলেন, চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির উৎস মূলত ভূগর্ভস্থ ও ভূ-উপরিস্থ। হালদা নদী ও কর্ণফুলি নদী হচ্ছে ভূ-উপরিস্থ পানির চাহিদা। বর্তমানে মোহরা পানি শোধনাগার ও শেখ রাসেল পানি শোধনাগারে হালকা নদী থেকে এবং শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-১ ও ২ পানি উত্তোলন কর্ণফুলী নদী থেকে ট্টিটমেন্ট করে সুপেয় এবং নিরাপত পানি চট্টগ্রাম শহরে সরবরাহ করা হচ্ছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম ওয়াসা ৯২% পানি ভূ-উপরিস্থ উৎস থেকে আহরণ করে সরবরাহ করে থাকে। ৮% পানি ভূ-গর্ভস্খ উৎস থেকে আহরণ করা হয়। কিন্ত মাটির সাথে পাথর থাকায় গভীর নলকূপ খননও কষ্টসাধ্য।

ওয়াসার এমডি বলেন, বাংলাদেশে সরকার, চট্টগ্রাম ওয়াসা ও জাইকা অর্থায়নে ১৮৪৯ কোটি ব্যয়ে কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প (ফেজ-১), ৩০৮৩ কোটি ব্যয়ে (ফেজ-২) এবং বাংলাদেশে সরকার, চট্টগ্রাম ওয়াসা, বিশ্ব ব্যাংক অর্থায়নে ১৮৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন ও স্যানিটেশন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে।

আগামী ২০২৪ সালের জুনে বাংলাদেশ সরকার, ইডিসিএফ, দক্ষিণ কোরিয়, চট্টগ্রাম ওয়াসা অর্থায়নে ১৯৯৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন ভান্ডাল জুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্প। অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ প্রকল্প, চট্টগ্রাম মহানগরীর পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন প্রকল্প (ক্যাচমেন্ট-২ ও ৪), ক্যাচমেন্ট-৩ ফতেয়াবাদ, ক্যাচমেন্ট-৫ দক্ষিণ কাট্টলী, ক্যাচমেন্ট-৬ পতেঙ্গা ও মেঘনা নদী হতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে পানি সরবরাহ প্রকল্প।
ওয়াসার অনিয়ম বিষয়ে তিনি বলেন, কেউ অভিযোগ দিলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করি। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় চট্টগ্রাম ওয়াসায় অনিয়মের পরিমাণ অনেক কম।

আমাদের দরজা খোলা আছে, যেকোনও সময় যে কেউ আমাদের কাছে আসতে পারে। আমার কাছে এসে যদি কেউ প্রতিকার না পায়, তাহলে বলার সুযোগ থাকে আমি দুর্নীতিতে জড়িত আছি। কিন্তু আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করছি।

গণশুনানিতে চট্টগ্রাম ওয়াসার অনেক গ্রাহক পানির বিল নিয়ে অভিযোগের দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন।

শুষ্ক মৌসুমে ওয়াসার পানিতে লবণাক্ততার বিষয়ে আরেক গ্রাহকের প্রশ্নের উত্তরে এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, ওয়াসার পানি মূলত দুইটি নদী থেকে তোলা হয়। শুষ্ক মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় পানির স্রোত কম থাকে। অন্যদিকে সমুদ্রের নোনা পানি ওপরে উঠে আসে। ফলে লবণাক্ততা বাড়ে। প্রাকৃতিক এসব সমস্যার কারণে মিষ্টি পানির সংকট হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে আরও একটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন আছে। কাপ্তাই লেকে ড্রেজিং করার প্রস্তাব দেন তিনি।

গণশুনানিতে ওয়াসার বোর্ড সদস্য, প্রধান প্রকৌশলী, বিভিন্ন বিভাগের প্রকৌশলী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে ২০০০ সালে এ কে এম ফজলুল্লাহ অবসর নেন। ২০০৯ সালের ৬ জুলাই চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে এক বছরের জন্য নিয়োগ পান। এরপর আবার এক বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০১১ সালে চট্টগ্রাম ওয়াসাতে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ তৈরি করা হয়। ওয়াসা বোর্ডও পুনর্গঠন করা হয়। তখন ব্যবস্থাপনা পরিচালকে পদে নিয়োগ পান তৎকালীন চেয়ারম্যান এ কে এম ফজলুল্লাহ। সেই থেকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।