চট্টগ্রামের আনোয়ারায় জালে ধরা পড়েছে প্রায় সাত ফুট লম্বা ১৫০ কেজি ওজনের একটি হাঙ্গর মাছ। মানুষ এটাকে বড় মাছ মনে করে খেয়ে ফেলেন। দেশে আইনতভাবে হাঙ্গর মাছ ধরা এবং বিক্রি নিষিদ্ধ রয়েছে। নানা সেমিনারে এটা নিয়ে সতর্ক করার পরেও হাঙ্গর শিকার থেমে নেই বলে জানিয়েছেন আনোয়ারা উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা রাশিদুল হক।
উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের খোর্দ্দ গহিরার উঠান মাঝির ঘাট এলাকায় শনিবার রাতে দিকে কাইয়ুম মাঝির জালে ধরা পড়া মাছটি দেখতে গভীর রাত পর্যন্ত স্থানীয়দের ভিড় লেগে যায়।
জানা যায়, সন্ধ্যার দিকে নির্দিষ্ট সময় শেষে জেলেরা জাল তুলতে গেলে প্রচণ্ড চাপ অনুভব করেন। মুহূর্তেই তাদের চোখে মুখে ভেসে উঠে উজ্জ্বলতা। জাল বোটে তুলতেই দেখেন বিশাল আকারের হাঙ্গর। পরে রাত ৮টার দিকে মাছটি উঠান মাঝির ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়।
স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছর এমন বড় মাছ ধরা পড়ে। এই বছর এখন পর্যন্ত ধরা পড়া মাছের মধ্যে সবচেয়ে বড়।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ এর তফসিল সংশোধন করে বিপন্ন হাঙ্গর ও রে মাছের ৫২ প্রজাতিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আইনের ৩৯ ধারা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে এসব প্রাণী আহরণ ও বিক্রির অভিযোগ প্রমাণিত হলে এক বছরের কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। কোন ব্যক্তি একই অপরাধ দ্বিতীয়বার করলে শাস্তির পরিমাণ দ্বিগুণ হবে। এমনকি এ অপরাধ সংঘটনে সহায়তাকারী বা প্ররোচনাকারীও নির্ধারিত দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান ট্রাফিক’র জরিপ অনুযায়ী, নিষিদ্ধ হলেও হাঙ্গর রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ২০তম। বাংলাদেশের জলসীমা থেকে এ পর্যন্ত ২২টি পরিবারের অন্তর্গত মোট ৪৬ প্রজাতির হাঙর মাছ রেকর্ড করা হয়েছে। সামুদ্রিক প্রাণীর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠী হাঙ্গর ৩৬ শতাংশ বিলুপ্তির ঝুঁকি রয়েছে।
বাণিজ্যিকভাবে হাঙ্গরের মাংস, চামড়া, পাখনা রপ্তানি হয়। সিঙ্গাপুর, হংকং, থাইল্যান্ড, তাইওয়ান, চীনসহ বেশ কয়েকটি দেশে এর বেশ চাহিদা রয়েছে। ২০০৮-২০০৯ সালে বাংলাদেশে ৩,৯৩৩ মেট্রিক টন হাঙ্গর ধরা হয়েছিল। তবে এরপর দেশে হাঙ্গর শিকারের কোনো জরিপ হয়নি। বঙ্গোপসাগরে যান্ত্রিক, অ-যান্ত্রিক এবং শিল্প ট্রলারের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা অতিরিক্ত মাছ ধরার প্রাথমিক কারণ। যার ফলে হাঙ্গরসহ বিপন্ন প্রজাতির মাছের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে।