ন্যাভিগেশন মেনু

‘আমরা ২০ বছর আগের তালেবান নই’


আফগানিস্তান দখল নেওয়ার পর তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, 'বিশ বছর আগেও আমাদের দেশ মুসলিম রাষ্ট্র ছিল। আজও আছে। কিন্তু অভিজ্ঞতা, পরিপক্কতা এবং দৃষ্টিভঙ্গির বিচারে বিশ বছর আগের তালেবানের সাথে আজকের তালেবানের বিশাল তফাত রয়েছে।

মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) রাতে মুজাহিদ তাদের প্রথম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'আমরা এখন যেসব পদক্ষেপ নেবো তার সাথে সেসময়কার তফাত রয়েছে। এটা বিবর্তনের ফসল।'

এর আগে তালেবানের রাজনৈতিক দপ্তরের প্রধান মোল্লা বারাদার তালেবান শীর্ষ নেতাদের নিয়ে আফগানিস্তানের কান্দাহারে পৌঁছেন।

তারা কোথা থেকে সেখানে পৌঁঁছেছে তা স্পষ্ট জানা যায়নি। তবে বেশিরভাগ নেতাই কাতারের দোহায় ছিলেন এবং মার্কির বাহিনী প্রত্যাহারের পর দেশ শাসনের রূপরেখা নিয়ে আমেরিকানদের সাথে আলোচনা করছিলেন।

তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, 'বিশ বছরের সংগ্রামের পর আমরা (দেশকে) মুক্ত করেছি এবং বিদেশিদের বহিষ্কার করেছি, গোটা জাতির জন্য এটা গর্বের মুহূর্ত।

তিনি বলেন, 'আফগানিস্তান যাতে একটা যুদ্ধ ক্ষেত্র বা সংঘাতের দেশ না হয় সেটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। আমাদের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করেছে, তাদের সবাইকে আমরা ক্ষমা করেছি। আমরা শত্রুতার অবসান চাই। আমরা ঘরে ও বাইরে কোথাও কোন শত্রু চাই না। কাবুলে আমরা কোনও বিশৃঙ্খলা চাই না।'

তালেবান মুখপাত্র বলেন, আফগানিস্তানের মাটি কারো বিরুদ্ধে ব্যবহার হবে না।

আফগানিস্তান আল-কায়দা যোদ্ধাদের আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠার ঝুঁকি আছে কি-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মুজাহিদ বলেন, 'আফগানিস্তান কোন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঘাঁটি হবে না, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আমরা এই নিশ্চয়তা দিচ্ছি।'

তালেবান নিয়ন্ত্রিত এলাকায় অপহরণ ও হত্যার ঘটনা খবর প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তালেবান মুখপাত্র বলেন,  'সারাদেশে পূর্ণ নিরাপত্তা বজায় রয়েছে। কেউ কাউকে অপহরণ করতে পারবে না। প্রত্যেকদিন আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করবো।'

তিনি বলেন, 'আমরা চাই না কেউ দেশ ছেড়ে যাক। সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে। কোনরকম শত্রুতা বা প্রতিশোধ নেওয়া হবে না।'

যারা বিদেশিদের জন্য দোভাষীর কাজ করেছে বা বিদেশিদের সাথে চুক্তিতে কাজ করেছে তাদের প্রতি ভবিষ্যত আচরণ সম্পর্কে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে মুজাহিদ বলেন, 'কারও প্রতি প্রতিশোধ নেওয়া হবে না। যারা এদেশে বড় হয়ে উঠেছেন তারা এদেশেরই সন্তান। আমরা চাই না তারা চলে যাক। তারা আমাদের সম্পদ।'

তিনি আরও বলেন, ‘‘কেউ কারও বাসার দরজায় টোকা মেরে জিজ্ঞেস করবে না যে ‘আপনি কাদের সাথে কাজ করতেন?”

তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, তারা নিরাপদ থাকবে। কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না, কাউকে হয়রানি করা হবে না।

নারীর অধিকার প্রশ্নে তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'আমরা নারীদের বাইরে কাজ করার এবং পড়াশোনার অনুমতি দেবো, তবে সেটা হতে হবে আমাদের কাঠামোর মধ্যে।'

'আমাদের সমাজে নারীরা খুবই সক্রিয় থাকবেন, সেটা আমাদের কাঠামো ও ব্যবস্থার মধ্যে থেকে,' তিনি বলেন।

তালেবান মুখপাত্র বলেন, 'আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আমি আশ্বস্ত করতে চাই যে কারও ক্ষতি করা হবে না।'

মুজাহিদ বলেন, 'আমাদের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী চলার অধিকার আমাদের আছে। অন্য দেশের অন্য দৃষ্টিভঙ্গি, ভিন্ন নিয়ম, ভিন্ন বিধান থাকবে... আফগানদের মূল্যবোধের নিরিখে তাদের নিজস্ব আইন এবং বিধান আছে। শরিয়া আইনের অধীনে নারীর অধিকার রক্ষায় আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।'

তিনি বলেন, 'নারীরা আমাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েকে আমরা এই আশ্বাস দিতে চাই যে নারীদের প্রতি কোন বৈষম্য করা হবে না।'

মিডিয়ায় ইসলামী মূল্যবোধের পরিপন্থী কিছুই প্রচার করা যাবে না জানিয়ে তালেবান মুখপাত্র বলেন, বেসরকারি সংবাদমাধ্যমকে তালেবান প্রশাসনের অধীনে কাজ করতে হবে।

'আমি মিডিয়াকে আশ্বস্ত করতে চাই এই বলে যে, আমরা চাইবো আমাদের সাংস্কৃতিক কাঠামোর মধ্যে থেকে মিডিয়া কাজ করবে, বলেন মুজাহিদ।

তিনি বলেন, 'বেসরকারি মিডিয়া স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারবে, তবে মিডিয়ায় ইসলামী মূল্যবোধের পরিপন্থী কিছুই প্রচার করা যাবে না।

মিডিয়াকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, 'আমাদের যেখানে ঘাটতি থাকবে, দেশের কল্যাণে সেই ঘাটতি আপনারা পূরণ করবেন। কিন্তু মিডিয়াকে আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করতে দেওয়া হবে না। সংবাদমাধ্যম দেশ ও জাতির ঐক্যের লক্ষ্যে কাজ করবে।'

দেশ কোন আইনে চলবে এমন প্রশ্নের জবাবে তালেবান মুখপাত্র সংবাদসম্মেলনে বলেন, 'সরকার গঠনের পর আমরা সিদ্ধান্ত নেব দেশ কোন আইনে চলবে। আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতা ও শান্তির জন্য আমরা সবাইকে ক্ষমা করেছি। আমাদের যোদ্ধা, আমাদের জনগণ, সব পক্ষ, সব উপদল, সবার অন্তর্ভুক্তি আমরা নিশ্চিত করবো।'

তিনি বলেন, 'যুদ্ধে যারা প্রাণ হারিয়েছে, যারা মারা গেছে শত্রুপক্ষের হয়ে লড়াই করতে গিয়ে, তারা প্রাণ হারিয়েছে নিজেদের দোষে। আমরা মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে গোটা দেশ জয় করে নিয়েছি।'

সরকার গঠনের পর সব কিছু পরিষ্কার হবে জানিয়ে তিনি বলেন, 'সরকার গঠনের পর আমরা সিদ্ধান্ত নেবো এবং দেশের জনগণকে জানাবো দেশ কোন আইনে চলবে।'

তিনি বলেন, 'আমি স্পষ্ট বলতে চাই, সরকার গঠনের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমাদের কাজ সম্পূর্ণ হলে আমরা এ বিষয়ে ঘোষণা দেবো।'

এডিবি/