ন্যাভিগেশন মেনু

করোনাকালে অনলাইনে যৌন হয়রানি বেড়েছে ৪ শতাংশ


বৈশ্বিক কোভিড-১৯-এর কারণে মানুষ যখন ঘরবন্দী তখনই দেশে বেড়েছে যৌন হয়রানি। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে- বিগত বছরগুলোতে দেশে শতকরা ৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ মেয়ে শিশু অনলাইনে যৌন শোষণ, হয়রানি এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছে। অথচ কোভিড পরবর্তী জরিপ পরিচালনায় দেখা যায় এই হার বেড়েছে প্রায় চারগুণ।

সম্প্রতি ঢাকায়  জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানায় আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। ২০২০ সালে শিশুদের বিরুদ্ধে অনলাইনে যৌন হয়রানির ফলে সৃষ্ট ঝুঁকি ও পরিস্থিতি যাচাই এবং প্রবণতা বিশ্লেষণ বিষয়ক এক গবেষণা পরিচালনা করে।

সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির শিশু অধিকার ইউনিটের সমন্বয়ক অম্বিকা রায় বলেন, দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ পাশ হয়েছে ঠিকই কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এই আইনে অনলাইনে শিশুদের দ্বারা শিশু নির্যাতন বিষয়টিকে চিহ্নিত করে আলাদা কোনো বিধান রাখা হয়নি।

ফলে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা বেড়েই চলেছে। যদিও বেশি বয়সী শিশুরা কম বয়সী শিশুদের চেয়ে অধিক মাত্রায় অনলাইনে নিপীড়নের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। তবে সার্বিকভাবে সব শিশুই ক্ষতিকর কনটেন্ট, যৌন হয়রানি এবং নিপীড়নের আশঙ্কায় রয়েছে।

আসক জানায়, জানুয়ারি মাসে শিশু অধিকার ইউনিট চারটি বিভাগের ৫টি জেলায় একটি সংক্ষিপ্ত জরিপ পরিচালনা করেছে।  এই জরিপের মূল লক্ষ্য ছিল করোনাকালে শিশুদের অনলাইনে ঝুঁকির মাত্রা ভয়াবহতা সম্পর্কে বাস্তবিক তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা।  জরিপ কার্যক্রমটি যথাক্রমে- ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সাতক্ষীরা জেলায় পরিচালিত হয়েছে।

জরিপের প্রাপ্ত ফল থেকে জানা যায়, ৩০ শতাংশ  শিশু জানিয়েছেন, করোনাকালে তারা কোনো না কোনোভাবে ইন্টারনেটে নিপীড়ন বা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এছাড়া ১২ শতাংশ শিশু এ বিষয়ে কোনো তথ্য জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। নিপীড়িত শিশুদের ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ হচ্ছে কন্যা শিশু এবং ৪৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ ছেলে শিশু।

করোনাকালে শিশুরা যেসব ধরণের নির্যাতিত হয়েছিল তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল শিশুদের ব্যক্তিগত ও অসংবেদনশীল তথ্য ইন্টারনেটে প্রকাশ করা, অনলাইনে যৌন হয়রানি ও যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়া, অশালীন প্রস্তাব দেওয়া, সাইবার বুলিং ব্ল্যাকমেইলিং, পর্নোগ্রাফি এবং কোনো না কোনোভাবে অনলাইনে যৌনতা বিষয়ক ছবি বা তথ্য দেখতে পাওয়া ইত্যাদি।

আসক জানায়, করোনাকালে অনলাইনে নিপীড়নের শিকার শিশুদের মধ্যে ৮৮ শতাংশ  জানিয়েছেন তারা অপরিচিত ব্যক্তি দ্বারা অনলাইনে হয়রানির শিকার হয়েছে। অনলাইনে নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হওয়া শিশুদের মধ্যে মাত্র ৪১ শতাংশ শিশু তা তাদের অভিভাবক ও পরিবার পরিজনকে অবহিত করেছে। নির্যাতিত শিশুদের মধ্যে মাত্র ৬ শতাংশ নিপীড়িত শিশু বা তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযুক্তর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

জরিপে তথ্যদানকারী ১০৮ জন অংশগ্রহণকারী শিশুদের ৫৪ শতাংশ জানিয়েছে তারা নিজস্ব ডিভাইস মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, ট্যাব ইত্যাদি থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এদের মধ্যে ৮৪ শতাংশ শিশু সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে। এদের সবাই ফেসবুক মেসেঞ্জার ব্যবহার করে। এছাড়া ৩৮ শতাংশ শিশু ইমো ব্যবহার করে এবং ১৬ শতাংশ শিশু হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে।

জরিপের মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে আসক অনলাইনে শিশু নিপীড়নের ঘটনা প্রতিরোধে কিছু সুপারিশসমূহ উপস্থাপন করেছে। এর মধ্যে-শিশুদের মধ্যে নিরাপদ ইন্টারনেট বিষয়ে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে সাইবার নিরাপত্তা; অনলাইনে শিশু যৌন নির্যাতনের ধরণসমূহচিহ্নিত করে সে সম্পর্কিত বিষয়সমূহ পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্তিকরণ।

সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে অভিভাবকসহ সব পর্যায়ের অংশীদারদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা; অভিভাবকদের তাদের শিশুদের নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল অ্যাপস ব্যবহারে উৎসাহী করতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহণ; অনলাইনে শিশুদের প্রতি যৌন সহিংসতা সংক্রান্ত মামলাগুলো সাইবার ট্রাইব্যুনালের অধীনে পৃথকভাবে শিশু বিষয়ক মামলাসমূহ পরিচালনার ব্যবস্থা করা উল্লেখযোগ্য।

এছাড়া প্রাসঙ্গিক আইনগুলো (শিশু আইন ২০১৩-সংশোধিত ২০১৮), তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৩), পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮, অনলাইনে শিশু ও নারীদের যৌন হয়রানি ও নির্যাতন প্রতিরোধে ও প্রতিকারে সংশোধনী আনার জন্যও বলা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আসকের সিনিয়র ডেপুটি ডিরেক্টর অ্যাডভোকেট নীনা গোস্বামী।

এস এস