ন্যাভিগেশন মেনু

কেরুজ ডিস্টিলারিতে ৩ কোটি টাকার হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদন


মহামারী করোনাভাইরাসের সংক্রামন রোধে স্বাস্থ্য বিভাগ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হাত ধোয়া এবং পরিস্কার রাখতে পরামর্শ দেওয়ার পরে দেশে হ্যান্ড স্যানিটাইজার সঙ্কট দেখা দেয়। ব্যাপক চাহিদা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন বেসরকারি ওষুধ প্রতিষ্ঠান হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদন ও অধিক মূল্যে বাজারজাতকরণে ব্যস্থ হয়ে পড়ে।

এরপরও প্রতিষ্ঠানগুলো দেশে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়। এ অবস্থায় বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের একমাত্র ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান দর্শনা কেরুজ চিনিকলের ডিস্টিলারি বিভাগ ইথাইনাল, ডিস্টিল ওয়াটার, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, গ্লিসারিন, কালার ও ফ্লেবারের সমন্বয়ে শতভাগ জীবাণুশাক হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করার উদ্যোগ গ্রহণ করে।

তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহেদ আলী আনসারী এ উদ্যোগ বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন মৌখিক অনুমতি নিয়ে উৎপাদন শুরু করে। কিছু স্যাম্পপল পাঠান সদর দফতরে। পরে সদর দফতর দেশের বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হ্যান্ড স্যানিটাইজারের সঙ্গে কেরুজ হ্যান্ড স্যানিটাইজারের পার্থক্য নির্ণয় করে বাজারজাতকরণের অনুমতি প্রদান করে।

অনুমতি পেয়ে মিল কর্তৃপক্ষ গত ২৩ মার্চ থেকে ডিস্টিলারি বিভাগের ঔষধাগারে শুরু হয় উৎপাদন। প্রথম দিনেই স্বল্প পরিসরে কেরুজ হ্যান্ড স্যানিটাইজার নামে ৬০ টাকা খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে পরীক্ষামূলকভাবে ১০০ মিলিলিটারের ৩ হাজার বোতল উৎপাদন করে বাজারে ছাড়া হয়।

চার মাসে কেরু অ্যান্ড কোম্পানি হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদন করেছে ৫৭ হাজার ১৬৪ লিটার। যার বাজার মূল্য ২ কোটি ৮৪ লাখ ৮২ হাজার টাকা। এর মধ্যে বিক্রি হয়েছে ৫০ হাজার ৭০১ লিটার। যার বাজারমূল্য ২ কোটি ৫৩ লাখ ৫০ হাজার ৫০০ টাকা। কারখানায় বর্তমানে মজুদ রয়েছে ৬ হাজার ৪৬৩ লিটার।

এ বিষয়ে কেরুজ মহাব্যবস্থাপক ডিস্টিলারি (ক্যামিস্ট) ফিদা হাসান বাদশা বলেন, ‘করোনা মহামারীর সময় সদর দফতরের নির্দেশে ইথাইনাল, ডিস্টিল ওয়াটার, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, কালার এবং ফ্লেবারের সমন্বয়ে তৈরি করা হয় কচি কলাপাতা রঙের কেরুজ হ্যান্ড স্যানিটাইজার। যার মধ্যে উপাদান রয়েছে ৭০ ভাগ ইথাইনাল, ২৫ ভাগ ডিস্টিল ওয়ার্টার, ২ ভাগ হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ও ৩ ভাগ কালার/ফ্লেবার। এ হ্যান্ড স্যানিটাইজার মানব দেহের বাইরের অংশে যে কোনো ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে শতভাগ জীবাণুমুক্ত করতে সক্ষম।’

মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) শেখ শাহাবুদ্দিন জানান, ‘মানুষের হাত থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। একমাত্র কেরুজ হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের মাধ্যমে শতভাগ জীবাণুমুক্ত থাকা যায়। সেই সাথে মূল্যও নির্ধারণ করা হয়েছে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার কথা মাথায় রেখে।’

এ বিষয়ে চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সাঈদ বলেন, ‘করোনাভাইরাসে যখন গোটা দেশের মানুষ চিন্তিত কিভাবে সুরক্ষিত থাকা যায়, ঠিক সেই সময় বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের কেরুজ চিনিকল প্রতিষ্ঠানের ডিস্টিলারি বিভাগের ওষুধ কারখানা শাখা কর্তৃক হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করার উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং স্বল্পমূল্যে  বাজারজাত শুরু করে। ক্রান্তিময় মুহূর্তে বাণিজ্যিক নয়, বরং সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে মানব কল্যাণে এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ফলে কেরুজ হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেশ ব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বিষয়টি সরকারের উচ্চমহল পর্যন্ত অকিবহাল আছে। অর্থ নয় সেবাই ছিলো এ প্রতিষ্ঠনের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।’

এনআই/এমআইআর