ন্যাভিগেশন মেনু

খেয়া ঘাটের মাঝি মিলন নেছার নৌকাতেই কেটে গেছে ৩০ বছর


শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার জয়ন্তী নদীর খেয়া ঘাটের নারী মাঝি মিলন নেছা। দীর্ঘদিন ধরে নৌকা টানেন তিনি। নদীর এপার আর ওপার করতে করতে মিলন নেছার কেটে গেছে দীর্ঘ ৩০ বছর। থাকা, খাওয়া, রান্না বান্না করতে করতে ৩০ বছর পার করেছে মিলন নেছা।

উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে দুইশত গজ দুরে ধীপুর গ্রামের মৃত কালু ব্যাপারীর বড় মেয়ে মিলন নেছা (৫২)। জীবনের শেষ সঞ্চয় দিয়ে ৪ শতক জমি কিনেছে। কিন্তু ঘর তুলতে পারেনি। বড় ইচ্ছা তার একটি ঘর হলে সন্তান নিয়ে থাকতে পারতো ।

মিলন নেছা নৌকা দিয়ে মানুষ পারাপার করছেন। ছোটা বড় সবাই তাকে খালা বলে ডাকছেন। একজন নদী পার হলে ৫ টাকা করে দিচ্ছেন তাকে। দুপুরের সময় লোক কম থাকায় ভাসমান নৌকায় বসে রান্না করছেন মিলন।

বড় কস্টের জীবন তার, তবুও মুখে যেন হাসি লেগেই আছে। আজকের বাংলাদেশ পোস্টের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা হয় মিলন নেছার।

তিনি জানান,  জয়ন্তী নদীর খেয়া ঘাটে তার বাবা কালু ব্যাপারী মাঝির কাজ শুরু করেন। মিলন নেছা মাঝির বয়স যখন ২২ বছর তখন তাঁর বাবা মারা যান। তারা তিন বোন, তিন ভাই। সংসার ও ভাই-বোনদের মানুষ করতে, ওই বয়সেই অভাবের সংসারের হাল ধরতে মাঝির কাজ শুরু করেন মিলন। প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ টাকা আয় করেন তিনি। তাছাড়া দুই পারের কিছু মানুষ বছরে যা ফসল পায় তার একটি অংশ দিয়ে সহযোগিতা করেন মিলনকে।

বাবা কালু ব্যাপারী মাঝির ঘরে জন্ম নেন মিলন নেছাসহ ছয় ছেলে মেয়ে। বাব দাদার কোন জমি না থাকায় তিনি স্ত্রী সন্তান নিয়ে থাকতেন নদীর পাড়ের ছাউনি নৌকায়। নৌকার মাঝেই সংসার, সেই সংসারে জন্ম নেয় সন্তানরা। মিলন নেছাসহ ছয় সন্তানেরই বিয়ে হয়েছে। বাবার পথ অনুসরণ করে বেছে নেয়া নৌকার মাঝির কাজে কোনোভাবে জীবন আর জীবিকা চালিয়ে অভাব-অনটনে দিন কাটছে মিলন নেছার।

মিলন নেছা মাঝির স্বামী রহম আলী সরদার ১৫ বছর আগে তাকে ও দুই ছেলেকে রেখে অন্যত্র বিয়ে করে চলে যায়। বড় ছেলে আব্দুল খালেক (২৬) বিয়ে করে আলাদা থাকে। আর তিনি নদীর পাড়ে ছাউনি নৌকায় ছোট ছেলে আব্দুল মালেককে (২২) নিয়ে থাকছেন।

তবুও যেন হাল ছাড়ার পাত্রী নন তিনি। তাই কষ্ট হলেও নৌকার মাঝির কাজ করছেন তিনি। করোনাকালে কিছু সরকারি খাদ্যসামগ্রী পেয়েছেন। তাছাড়া কোন সরকারি-বেসরকারি কোন সাহায্য সহযোগিতা পাননি তিনি।

তিনি আরও বলেন, নৌকাতেই রান্না-খাওয়া, নৌকাতেই আমার বসবাস। ২২ বছর নৌকা পরাপার করে কিছু টাকা সঞ্চয় করেছি। জীবনের শেষ এ সঞ্চয় দিয়ে ছয় শতক জমি কিনেছি। কিন্তু ঘর তুলতে পারিনি। বড় ইচ্ছা একটি ঘর হলে সন্তান নিয়ে থাকতাম।

মিলনের ছোট ছেলে আব্দুল মালেক বলেন, আমার মার বয়স হয়েছে। তবুও নদীতে নৌকা চালান। যে অর্থ পান, তা দিয়ে চলছে আমাদের সংসার। মাঝে মাঝে ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করি আমি। বড় কষ্টে চলছে আমাদের জীবন। সরকারিভাবে যদি একটি ঘর পেতাম মাকে নিয়ে সুখেই কাটতো পরবর্তী দিনগুলো।

নৌকা পারাপার হওয়া গোসাইরহাট পৌরসভার পারাপার হওয়া যাত্রীরা বলেন, মিলন সরকার খালা সহজ-সরল মানুষ। তিনি এ ঘাটে বিদ্যালয়, কলেজের শিক্ষার্থীসহ দুই পারের মানুষ পারাপার করেন। আমরাও পারাপার হই। তাকে ছাড়া নদীর ওই ঘাট শূন্য লাগে। সরকার বা কোনো বৃত্তবান ব্যক্তি যদি তাকে একটি ঘর দিতো, তাহলে ভালো হতো।

গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও গোসাইরহাট পৌরসভার প্রশাসক মো. আলমগীর হুসাইন বলেন, মিলন নেছা একজন নারী নৌকার মাঝি জানতাম না। বিষয়টি জেনে পৌরসভার পক্ষ থেকে তার খোঁজ নিতে বলা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান বলেন, ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারি গোসাইরহাট উপজেলার একটি মহিলা যিনি নৌকা চালিয়ে জীবন যাপন করছেন, যার ঘর নেই তার জন্য মুজিব শতবর্ষের উপলক্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্পের 'খ' তালিকাভুক্ত যারা ভুমিহীন আছে তাদের তালিকায় তাকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করছি, আশা করছি তিনি একটি ঘর পাবেন।

আর এইচ আর/ এস এ/ওআ