ন্যাভিগেশন মেনু

চট্টগ্রামে ব্যবসায়ীর পেটালেন চসিকের দুই কর্মকর্তা, সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনার ঝড়


চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) দুই কর্মকর্তার এক ব্যবসায়ীকে মারধরের ঘটনা শুক্রবার রাতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। চসিকের দুই কর্মকর্তা হলেন- আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম এবং প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা মো. লতিফুল হক কাজমী।

শুক্রবার (৫ এপ্রিল) রাতে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।

জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) দুপুরে নগরীর আগ্রাবাদে চসিকের মালিকানাধীন সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক মার্কেটের দোকান মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতির কার্যালয়ে মারধরের শিকার হন সমিতির প্রচার সম্পাদক ব্যবসায়ী মনির হোসেন বাপ্পী। ওই মার্কেটে চসিকের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুল মালেকের একটি দোকান আছে। দোকানের ভাড়া এক ব্যবসায়ীকে দিয়েছিলেন। কিন্তু সাত মাস আগে ওই ব্যবসায়ী দোকানে তালা দিয়ে চলে যান।

মার্কেটের অন্যান্য ব্যবসায়ীরা মালেকের কাছে গিয়ে দাবি করেন, ওই দোকানি অনেকের টাকা মেরে লাপাত্তা হয়ে গেছেন। জামানতের টাকা থেকে মালেককে সেই টাকা পরিশোধ করতে হবে।

তবে মালেক এসব দাবি না মেনে দোকানটি আবার ভাড়া দেওয়ার চেষ্টা করলে ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে বিরোধ তৈরি হয়। আবদুল মালেক পরে সিটি করপোরেশনের দ্বারস্থ হন। এরপর চসিকের দুই কর্মকর্তা দোকান বুঝিয়ে দিতে গেলে মারধরের ঘটনা ঘটে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, চসিকের দুই কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম ও লতিফুল হক কাজমী একটি কার্যালয়ে আলাপ করছিলেন। এসময় বাকবিতণ্ডা জড়িয়ে পড়েন। সেখানে মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ থামানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু রেজাউল করিম আসন ছেড়ে মনির হোসেনের দিকে তেড়ে যান। থাপ্পড় দিতে থাকেন। এরপর লতিফুল হকও চড় থাপ্পড় দেন। পরে সিটি করপোরেশনের এক নিরাপত্তা কর্মী লাঠি দিয়ে মারতে মারতে সমিতির কার্যালয়ের বাইরে নিয়ে যান।
সিঙ্গাপুর ব্যাংকক মার্কেট দোকান মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ বলেন, 'মার্কেটের একটি দোকানের মালিক সিটি করপোরেশনের সাবেক এক কর্মকর্তা। তিনি দোকানটি ১১ লাখ টাকা জামানতে এক ব্যবসায়ীকে ভাড়া দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই ব্যবসায়ী অনেকের টাকা পয়সা নিয়ে পলাতক। এরপর মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতি ওই দোকান বন্ধ রাখে। ১১ লাখ টাকা দোকানের মালিক সিটি করপোরেশনের সাবেক কর্মকর্তাকে দেয়ার জন্য বলেন। কিন্তু নিয়ম নীতি না মেনে ওই কর্মকর্তা টাকাও দেবেন না, আবার তিনি দোকানও খুলতে চান। তাই ক্ষমতার প্রভার খাটিয়ে করপোরেশনের লোকজন নিয়ে আসেন। তার কথামতো কাজ না করায় চসিকের কর্মকর্তারা এক ব্যবসায়ীকে মারধর এবং হুমকি দিয়ে যান।’

চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা লতিফুল হক কাজমী জানান, আমরা মেয়রের নির্দেশে সেখানে গিয়েছিলেন। দোকান মালিক সমিতির সঙ্গে আলোচনার একপর্যায়ে সমিতির এক ব্যক্তি খারাপ আচরণ করায় তাকে হয়তো চড়-থাপ্পড় দিয়েছেন।

চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক মার্কেটে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ একটি দোকান মালিককে বুঝিয়ে দিতে গিয়েছিলেন চসিকের দুই কর্মকর্তা। কিন্তু দোকান মালিক সমিতির এক সদস্য তাদের বাধা দেন। এতে বাকবিতন্ডায় সেখানে ধাক্কাধাক্কি হয়। কাউকে মারধর করা হয়েছে এ রকম অভিযোগ কেউ করেনি। তবে আমরা বন্ধের কারণে এ বিষয়ে নিয়ে দুই পক্ষের সাথে আলোচনা করতে পারিনি। কিন্তু সরকারি কাজে কেউ বাধা দিতে পারে না। আমরা ব্যবসায়ী সমিতি ও চসিক দুই কর্মকর্তাকে নিয়ে আগামী সোমবার (৮ এপ্রিল) বসবো। ঘটনায় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সিটি করপোরেশনের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুল মালেক বলেন, ‘ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ী চলে যাওয়ার পর দোকানটি আরও একজনকে ভাড়া দেওয়ার চেষ্টা করলে ব্যবসায়ী সমিতির লোকজন বাধা দেন। তাদের জামানতের টাকা বুঝিয়ে দিতে বলেন। ভাড়াটিয়ার দেনা-পাওনার দায়ভার মালিকের ওপর বর্তায় না। পরে দোকান বুঝে পেতে সিটি করপোরেশনের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। সিটি করপোরেশনের ম্যাজিস্ট্রেট দোকান বুঝিয়ে দিতে গেলে একজন খুব অসদাচরণ করায় হট্টগোল হয়েছে।’

উল্লেখ্য, সিঙ্গাপুর ব্যাংকক মার্কেটের ৩৭১ নম্বর দোকানটির মালিক সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রকৌশলী আবদুল মালেক। দোকানটি মনির ও জাকির হোসেন নামে দুই ভাই ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করতেন। ব্যবসায়ীক টানাপোড়েনের জন্য তারা দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যান। তাদের ১১ লাখ টাকা জামানত ছিল দোকান মালিকের কাছে। ভাড়াটিয়া ও মালিকের মধ্যে কোনো সমস্যা দেখা দিলে নিয়ম অনুযায়ী সমিতিমে অভিযোগ মাধ্যমে সমাধান করে দেয়। কিন্তু সমিতি তা গেলে দোকান মালিক তার প্রভাব দেখান সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের নিয়ে। একপর্যায়ে দলবল নিয়ে হামলার ঘটনা ঘটে।