ন্যাভিগেশন মেনু

চালকদের দক্ষতায় বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেল ঢাকা-কক্সবাজারগামী দুটি ট্রেন


বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারগামী দুটি ট্রেন। কক্সবাজার এক্সপ্রেস ও পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনের দুটি চালকের যোগাযোগের দক্ষতায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা বাচঁলো ট্রেন। বাচঁলো অনেক ক্ষয়ক্ষতি ও মানুষের জীবন। কিন্তু স্টেশন মাস্টারদের পেপার লাইন ক্লিয়ার দিয়েছিল। হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হলেও সিগন্যাল ব্যবস্থা না থাকাতে পেপার লাইন ক্লিয়ার দিয়ে চলে কক্সবাজার রেললাইনে ট্রেনগুলো।  এতে দোহাজারী স্টেশন থেকে কক্সবাজার স্টেশন পর্যন্ত পেপার লাইন দিয়ে চলাচল করে ট্রেন।

নিরাপদ বাহন হিসেবে রেলপথ অনেক জনপ্রিয় মাধ্যম হলেও নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা এবং চালক ও সংশ্লিষ্টদের গাফিলতির কারণে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে রেল দুর্ঘটনা।

হাজার কোটি টাকার প্রকল্পেও ঝুঁকিমুক্ত হচ্ছে না রেলপথ। ঘটছে একের পর এক দুর্ঘটনা। যেখানে বিশ্বব্যাপী রেলপথ যাতায়াতের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে সুপরিচিত, সেখানে বাংলাদেশের রেলপথ এখনো অনিরাপদ।

কক্সবাজারে রেললাইন চলাচলে কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলক সিগন্যাল সিস্টেম এবং ডিজিটাল টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম ব্যবস্থা নেই। কাগজে লেখা পেপার লাইন ক্লিয়ারেন্স দিয়ে দিয়ে কক্সবাজার থেকে দোহাজারী পর্যন্ত। কক্সবাজারে রেললাইনে কোন সিগন্যাল ব্যবস্থা নেই। এতে স্টেশন মাস্টারের পেপার লাইন দিয়ে কক্সবাজার এক্সপ্রেস ও পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনগুলো। চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে ছেড়ে ষোলশহর, জানআলী হাট, পটিয়া, দোহাজারী, সাতকানিয়া, চকরিয়া, ডুলহাজারা ও রামু স্টেশন দিয়ে কক্সবাজারে চলাচল করে কক্সবাজার রেলপথ। গত ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে যাত্রী পরিবহন শুরু করে কক্সবাজার এক্সপ্রেস। পরে এই বছরে ঢাকা থেকে কক্সবাজার রুটে পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেন চালু করা হয়।

গত শুক্রবার (৫ এপ্রিল) দুপুর ১.২০ মিনিট কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেন আপ নং ৮১৩, লোকো নং- ৩০০১, লোড ২২/৪৪ ট্রেনটি চকরিয়া থেকে লাইন ক্লিয়ার দেওয়া হয় লোহাগাড়া পর্যন্ত। একই সময়ে অপর প্রান্ত থেকে পর্যটক স্পেশাল ট্রেন নং ৮১৬, লোকো নং- ৩০১৩, লোড ২০/৪০ ট্রেনটি একই সিঙ্গেল লাইনে হারবাং যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু দুই ট্রেনের চালকদের যোগাযোগের দক্ষতায় বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে ট্রেন দুটি।

ট্রাফিক কন্ট্রোল এবং স্টেশন মাস্টারের ভুলে একই লাইনে ২টি ট্রেন চালিয়ে দেয়ার ফলে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটতে পারতো। শুধুমাত্র উভয় ট্রেনের চালকদের পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যমে মুখোমুখি সংঘর্ষের মত ভয়াবহ দূর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেল রেল। বাঁচলো কোটি কোটি টাকার রেল সম্পদ এবং ক্রু সহ কয়েক হাজার যাত্রীর প্রাণ।

কক্সবাজার এক্সপ্রেস লোকোমাস্টার জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা কাগজ দেখে ট্রেন চালায়। চকরিয়া স্টেশন থেকে লোহাগাড়া পর্যন্ত পেপার ক্লিয়ার দিছে। কোন স্টেশনে ক্রসিং আছে সে সম্পর্কে জানে না চালকরা। কিন্তু আমরা অপর দিকে আসা পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনের চালক গোলাম রসুল সাথে যোগাযোগের কারণে বড় দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে পারলাম। রামু থেকে যখন লোহাগাড়া আসার সময় কথা বলি, তখনই হারবাং স্টেশন খোলা ছিল না। কিন্তু হারবাং স্টেশন পর্যন্ত পর্যটক এক্সপ্রেসকে অনুমতি দেয়া হয়েছিল।

 তিনি বলেন, সবসময় লোকোমাষ্টারদের এককভাবে দায়ী করে চাকুরীচ্যুত করা হয়। একটি দূর্ঘটনা কখনো একজনের ভূলে সংঘটিত হয়না।  স্টেশনমাস্টার যে মারাত্মক ভূল করলো অথচ লোকোমাষ্টার একক কৃতিত্বের মাধ্যমে সেই ভয়াবহ দূর্ঘটনা থেকে রক্ষা করলো। কিন্তু ভৈরব দূর্ঘটনা, হাসানপুর দূর্ঘটনা, ফৌজদার হাট দূর্ঘটনাসহ আরো অনেক দূর্ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় না এনে শুধুমাত্র চালকদের দায়ী করায় এসব ধরনের দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হোক এবং চালকদের পুরুষ্কৃত করা হোক। উল্লেখ্য, কক্সবাজার রেললাইনটি একক লাইন, এখানে কোন সিগনাল পোস্ট নাই। কোন স্টেশন খোলা, কোন স্টেশনে ক্রসিং হবে তা চালকদের জানেনা। আমরা অনেক বছর চেষ্টার বলেছি চালকদের বিশ্রামের ব্যবস্থা রাখা হোক। কিন্তু চালকদের বিশ্রামের জন্য কোন রেস্ট হাউসে কোন বিছানা দেয়া হয়নি, ফ্লোরে ঘুমাতে হয়। এভাবেই চলছে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় কক্সবাজারের রেললাইনের ট্রেনগুলো।