ন্যাভিগেশন মেনু

চিনির গুদামে অগ্নিকান্ডের প্রভাব বাজারে পড়বে না: এস আলম গ্রুপ


দেশের অন্যতম শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন চিনি কারখানা ‘এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজে’ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। অপরিশোধিত এক লক্ষ চিনির বাজার মূল্য প্রায় ৭ শত ১৪ কোটি টাকা।

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানার মইজ্জারটেক সংলগ্ন ইছাপুর এলাকায় ১১ মেগাওয়াটের এস আলম পাওয়ার প্লান্টের পাশেই এস আলম রিফাইন্ড সুগার মিল। পাওয়ার প্ল্যান্টের বিদ্যুৎ দিয়েই চিনি কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম চলে। এ কারখানার দৈনিক পরিশোধন ক্ষমতা ২২০০ টন। এস আলম রিফাইন্ড সুগার মিলের গুদামে আগুন  লেগে এক লাখ টন অপরিশোধিত চিনি পুড়েছে। এ কারণে আসন্ন রোজায় চিনির বাজারে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে আশ্বস্ত করলেন দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ। সোমবার বিকালে চিনির এ গুদামে আগুন লাগে, যেখানে এক লাখ টন অপরিশোধিত চিনি ছিল।

মঙ্গলবার বিকালে পুড়ে যাওয়া গুদাম বিষয়ে জানতে চাইলে এস আলম গ্রুপের মানবসম্পদ ও এইচআর ম্যানেজার মোহাম্মদ হোছাইণ বলেন,  সোমবার বিকালে আগুন লেগেছে, যা এখনো আগুন পুরোপুরি নেভেনি। আগুন কীভাবে হল এবং ক্ষয়ক্ষতি কত তা এখন আমরা বলতে পারছি না। তবে এটা নিশ্চিত করতে পারি, বাজারে প্রভাব পড়বে না। আমাদের এখনো ১০-১৫ দিনের মত ফিনিশড (পরিশোধিত) চিনি হাতে আছে। 

ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিট প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় রাত সাড়ে ১০ টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু মঙ্গলবার বিকালেও তা পুরোপুরি নেভানো যায়নি।

জানা যায়, আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে মিলের চারটি গুদামে মোট চার লাখ টন অপরিশোধিত চিনি মজুদ করা হয়েছিল। পরিশোধনের পর ওই চিনি বাজারে যাওয়ার কথা। এর মধ্যে ১ নম্বর গুদামের এক লাখ টন চিনি পুড়ে গেছে।
তিনি বলেন, আমরা কিছুদিনের মধ্য বাজারে ফিরে আসব। আমাদের পাইপলাইনে ৬-৭ লাখ টন চিনি আছে। শুধু একটি গোডাউন পুড়েছে। আরো চারটি গোডাউন আছে। বাজারে কোনো প্রভাব পড়বে না। গুদামে আগুন লেগেছে তাতে এক লাখ টন র সুগার ছিল। ব্রাজিল থেকে আমদানি করা হয়েছিল ওই চিনি। রোজায় যে পরিমাণ চিনি লাগে, তার চেয়েও অনেক বেশি চিনি আছে। তিনটা গুদা। অক্ষত আছে। আরেকটা গুদাম ফিনিশড সুগারের, সেটাও অক্ষত আছে।

আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ হারুন পাশা বলেন, চিনির গোডাউন ভর্তি ছিল। পাঁচতলা ভবনের মতো উঁচু গোডাউনটির আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসলেও অনেকটাই কমে এসেছে। সুগার মিল ও পাওয়ার প্ল্যান্ট মিলিয়ে কর্মী সংখ্যা এক হাজারের মতো বলে জানান তিনি।

কিছুদিন আগেও নগরীর বাকলিয়া এক্সেস রোডের কাছে এস আলম গ্রুপের নির্মাণাধীন একটি কোল্ড স্টোরেজে আগুন লেগেছিল।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জহরুল হক ঘাঁটির ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট হাবীবের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের বিমান বাহিনীর একটি দল আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেয়। এছাড়া র‍্যাব-০৭, নৌবাহিনী, সেনাবাহিনী, সিএমপি পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক টিম আগুন নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করছে।

কারখানার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রমজানে বাজারে সরবরাহ করতে পরিশোধনের জন্য কমবেশি এক লাখ মেট্রিক টন কাচামাল গুদামটিতে মজুদ করা ছিল। আগুনে প্রায় সব চিনি পুড়ে গেছে। কী কারণে অগ্নিকাণ্ডর সূত্রপাত, তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেনি। তবে বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হতে পারে বলে ধারণা করছেন কারখানার কর্মকর্তারা।

গত দুইদিন আগে নগরীর বাকলিয়া এক্সেস রোড এলাকায় এস আলম গ্রুপের নির্মাণাধীন একটি কোল্ড স্টোরেজে আগুন লেগেছিল। ওই অগ্নিকাণ্ডে কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।

কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহির হোসেন জানান, সোমবার সুগার মিলে আগুন লাগার খবর পাওয়ার পর ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করে যাচ্ছে। ঘটনাস্থলে পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও র‌্যাব রয়েছে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অগ্নিকাণ্ডের পরপরই প্রথমে আগুনের লেলিহান শিখা ও ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে চিনি কারখানার গোডাউন। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে প্রাণপণ চেষ্টা চালান। আগুনের লেলিহান শিখায় আশেপাশে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।