ন্যাভিগেশন মেনু

চুয়াডাঙ্গায় ৮ বীর মুক্তিযোদ্ধার স্মরণে শহীদ দিবস পালন


৫ আগস্ট। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় স্থানীয় শহীদ দিবস। চুয়াডাঙ্গা জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এ দিনটি মর্মান্তিক ও অন্যতম স্মরণীয় দিন। 

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে এই দিনে জেলার ৮ জন মুক্তিযোদ্ধা সম্মুখ সমরে শহীদ হন।

প্রতিবছর ৫ আগষ্ট স্থানীয় শহীদ দিবস হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন কর্মসূচি পালন করে থাকে।

প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও দিবসটি পালনের লক্ষ্যে উপজেলা প্রসাশন স্বাস্থ্যবিধি মেনে সিমিতভাবে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। 

কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও শহীদ বেদীতে পুস্পমাল্য অর্পন।

জানাগেছে, স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সলের ৩ আগষ্ট মুক্তিযোদ্ধার গেরিলা গ্রুপের একদল বীর মুক্তিযোদ্ধা দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম জয়পুর গ্রামের শেল্টার ক্যাম্পে অবস্থান করছিল। ৪ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধারা পার্শবর্তী বাগোয়ান গ্রামের মুসলিম লীগের দালাল কুবাদ খাঁ কে ধরে নিয়ে আসে। মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর উপর আক্রমণ করার পরিকল্পনা করছিল।

৫ আগষ্ট সকালে পাকিস্তানী দালাল কুবাদ খাঁর দু’জন লোক মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে এসে খবর দেয়, রাজাকাররা তাদের ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এ খবর শুনে মুক্তিযোদ্ধা হাসান জামানের নেতৃত্বে  একদল মুক্তিযোদ্ধা রাজাকারদের শায়েস্তা করার জন্য অস্ত্র নিয়ে আনুমানিক ২ কিলোমিটার দুরে বাগোয়ান গ্রামের মাঠে দক্ষিন পশ্চিমে দু’দলে বিভক্ত হয়ে অগ্রসর হতে থাকে।

মুক্তিযোদ্ধাদের রেকি দল ফিরে আসার সাথে সাথে নাটুদহ ক্যাম্পের পাকসেনারা পুর্ব পরিনকল্পনা অনুযায়ি মাঠের আখ ক্ষেতে ‘ইউ’কাটিং অ্যাম্বুস করে রাখে। মুক্তিযোদ্ধার কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাদের অ্যাম্বুসে পড়ে যায়। এখানে পাকসেনাদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রায় আড়াই ঘন্টাব্যাপি যুদ্ধ হয়। পাকবাহিনীর কাছে থাকা আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের উপর ব্যবহার করতে থাকে। অবস্থা বেগতিক দেখে মুক্তিযোদ্ধারা কৌশলে দুটি দলে বিভক্ত হয়ে আক্রমন করতে থাকে। এ অবস্থায় যেকোন একজনকে কাভারিং ফায়ার দিয়ে নিজ দলকে বাঁচাতে হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান জামান স্বাভাবিক ফায়ারের দায়িত্ব নিয়ে শহীদ হন। তারা অন্য সাথীদের বাঁচাতে পারলেও শহীদ হন ৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। 

শহীদ ৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধারা হলেন, হাসান জামান, সাইফুদ্দিন তারেক, রওশন আলম, আলউল ইসলাম খোকন, আবুল কাশেম, রবিউল ইসলাম, কিয়ামুদ্দিন ও আফাজ উদ্দীন। 

এই সম্মুখ যুদ্ধে পাকবাহিনীর অনেক সদস্য মারা যায় এবং আহত হয়। পরে পাকবাহিনী ও উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের মানুষ রাস্তার পাশে দুইটি কবরে চারজন করে আটজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার মরদেহ কবর দেয়।

কালক্রমে এই আটজন মুক্তিযোদ্ধার কবরকে ঘিরেই এ স্থানটির নামকরন হয়েছে আটকবর।

বিবেকতাড়িত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও বর্তমান চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক হুইপ সোলাইমান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের  প্রচেষ্টায় ১৯৯৮ সালে এলজিইডি’র তত্বাবধানে সরকারি সহায়তায় ওই গণকবরের উপর স্মৃতিসৌধ গড়ে তোলেন। নাম দেওয়া হয় আটকবর।

দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলারা রহমান জানান, করোনা মহামারির কারনে এবার সিমিত আকারে পালিত হবে শহীদ দিবস সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, শহীদ ব্যদিতে পুস্প মাল্য অর্পন ও মসজিদে মসজিদে দোয়া। এ সময় উপস্তিত থাকবেন বীর মুক্তিযোদ্ধা চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলাইমান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন ও চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার।

এনআই/এডিবি