ন্যাভিগেশন মেনু

জলদস্যুদের কবলে থাকা জাহাজ সোমালিয়ার উপকূলে, নাবিকরা অক্ষত


ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ সোমালিয়া উপকূলে পৌঁছেছে। পুরো অঞ্চলটি জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রণাধীন। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে জাহাজটি গ্যারাকাদ নোঙর এলাকা থেকে ২০ নটিক্যাল মাইল দূরে দস্যুরা নোঙর করে রেখেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএমওএ)।জলদস্যু নিয়ন্ত্রিত জাহাজটি সোমালিয়া উপকূল গারাকাদ বন্দর থেকে আনুমানিক ২০ মাইল দূরে নোঙ্গর করেছে।

সোমালি জলদস্যুদের কাছে জিম্মি এমভি নাবিকদেরকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রাখা হয়েছে। অস্ত্রের মুখে দস্যুদের কথা মেনে চলতে বাধ্য করা হচ্ছে। এই অবস্থায় জিম্মিরা মানসিকভাবে চাপ আছে। 

বৃহস্পতিবার বিকেলে পরিবারের কাছে পাঠানো এক অডিও বার্তায় এমনটাই জানিয়েছেন অপহরণের শিকার জাহাজের চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান।

জাহাজটি সোমালিয়া উপকূলে পৌঁছায় বলে নিশ্চিত করেছেন জাহাজটি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম।

তিনি বলেন, জাহাজের চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান সাথে আমাদের কথা হয়েছে। জাহাজটি সোমালিয়া উপকূলে নোঙর করেছে। আমরা তৃতীয় একটি পক্ষের সাথে যোগাযোগ শুরু করেছি। জলদস্যুরা যোগাযোগ করা মাত্রই আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারি। আমরা সবসময় নাবিকদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ রাখছি। যাতে তাদের মনোবল দুর্বল না হয়। জলদস্যুরা নাবিকদের কোনো ক্ষতি করেনি। তাদের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় আমরা সেই চেষ্টা করছি।

তবে মুক্তিপণ চাওয়ার বিষয়টিকে তিনি গুজব দাবি করে বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কোনো দাবি-দাওয়া জানায়নি জলদস্যুরা। হয়তো জাহাজটিকে তাদের সেফ জোনে নেওয়ার পর তারা দাবির বিষয়টি জানাবে। জলদস্যুরা তাদের ওপর শারীরিক কিংবা মানসিক কোনো ধরনের চাপ প্রয়োগ করছে না। যেহেতু তারা অনেকটা জিম্মি অবস্থায় আছেন, স্বাভাবিকভাবে মানসিক চাপ থাকবে। এখানে তিনটা পক্ষ আছে। আমরা একটা পক্ষ, আমাদের সঙ্গে দেশের সরকার আছে। আরেকটি পক্ষ বীমা প্রতিষ্ঠান এবং জলদস্যুদের প্রতিনিধি হিসেবে তৃতীয় পক্ষ। আমাদের সঙ্গে মূলত যোগাযোগ হবে তৃতীয় পক্ষের। আগেও আমাদের একটি জাহাজ জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল। তখন দেখেছি, জলদস্যুরা জাহাজ সেইফ জোনে না নেওয়া পর্যন্ত তাদের দাবি জানাননি।

লন্ডন ও কুয়ালালামপুরভিত্তিক জলদস্যুতা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ব্যুরো (আইএমবি) থেকে তথ্য নিয়ে জাহাজটির বর্তমান অবস্থান জানিয়েছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি নাবিকসহ জাহাজটির অবস্থান বৃহস্পতিবার ভোর ৬টায় শনাক্ত করা গেছে। জাহাজটি ওই সময় সোমালিয়া থেকে ৭২ নটিক্যাল মাইল দূরে ছিল। পরে দুপুরের দিকে জলদুস্যরা সেটিকে সোমালিয়ায় নিয়ে যেতে সক্ষম হয়। হয়তো এরপর জলদস্যুরা তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে যোগাযোগ হতে পারে।

সমুদ্রগামী জাহাজের অবস্থান পর্যবেক্ষণকারী ‘শিপফিক্স’ এর ওয়েবসাইটে দেখা যায়, জাহাজটি সাড়ে ১০ নটিক্যাল মাইল গতিতে চলেছে। সোমালিয়ার উপকূলের কাছে অবস্থান করছে জাহাজটি।

জাহাজে থাকা নাবিকেরা হলেন- জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চীফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চীফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ এবং ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মোহাম্ম শ্মসুদ্দিন, মো . আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. নুর উদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ।

চট্টগ্রামভিত্তিক কবির গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিং লিমিটেডের মালিকানাধীন জাহাজটি। কেএসআরএম গ্রুপের মোট ২৩টি জাহাজ আছে। এসব বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রুটে চলাচল করছে। গোল্ডেন হক নামে পরিচিত এমভি আবদুল্লাহ গত বছর কেএসআরএম গ্রুপের মালিকানায় আসে।

মোজাম্বিক থেকে ৫০ হাজার টন কয়লা নিয়ে দুবাই যাওয়ার পথে গত মঙ্গলবার দুপুরে এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজটি সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে।