ন্যাভিগেশন মেনু

জলাবদ্ধতায় অনিশ্চিত ৪৬ হাজার হেক্টর জমির বোরো চাষ


জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের ফলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা এখন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরায়। জেলার অভ্যন্তরীন নদী ও খালগুলো পানি নিষ্কাশন ক্ষমতা হারিয়েছে। ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ৪৬ হাজার হেক্টর জমির বোরো চাষ।

ষাটের দশকের  স্লুইস গেট এখন অভিশাপে পরিণত হয়েছে। পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় সাতক্ষীরার কয়েক লক্ষ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ফলে বোরো উৎপাদন নিয়ে হতাশায় পড়েছে হাজার হাজার কৃষক।

জলাবদ্ধতার কারণে শুধু সাতক্ষীরা জেলার ৪৬ হাজার ৮০৪ হেক্টর নিচু জমিতে বোরোর আবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানায় একাধিক সূত্র।

সূত্রমতে, জেলার অধিকাংশ বিলের নিচু জমি পানিতে তলিয়ে আছে। পানি সরানোর জন্য কোথাও কোথাও সেচযন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে।

সূত্রমতে, সাতক্ষীরায় মোট এক লক্ষ ৭৭ হাজার ৮১৪ হেক্টর জমির মধ্যে আবাদি জমির পরিমাণ এক লক্ষ ৩১ হাজার ৭৮৮ হেক্টর। এর মধ্যে স্থায়ী পতিত জমি রয়েছে ৪৫ হাজার ১১০ হেক্টর। এর বাইরে চাষযোগ্য জমির মধ্যে মাঝারি ও নিচু জমির পরিমাণ ৩৬ হাজার ৮০৪ হেক্টর। এসব জমির বেশির ভাগ অংশ এখনো পানিতে নিমজ্জিত। ফলে জলাবদ্ধতায় রূপ নিয়েছে জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল।

কৃষকরা জানান, খাল, বিল ও নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করার কারণে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। রবি মৌসুমে ধান, আলু, কপি, পেঁয়াজ, বেগুন, টমেটো, গম, খেশারীসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ করি। পানির কারণে এখন তা করতে পারছি না।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, ‘সাতক্ষীরা সদর উপজেলার পশ্চিমে জেলার সর্ববৃহৎ বিল দাঁতভাঙ্গা, মালিনি ও পদ্মবিলসহ ১৩টি বিল এখনও ফসলশূন্য। এসব বিল ও গ্রামের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ সীমান্তের ইছামতি নদীর শাখরা স্লুইস গেট। ওই গেট দিয়ে পানি তো সরছেই না বরং স্লুইস গেটের নীচ দিয়ে নদীর জোয়ারের পানি উল্টো এলাকায় ঢোকে। এই গেটটির সংস্কার হলে এলাকা বোরো চাষের উপযোগী হবার সম্ভাবনা ছিলো।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরার সাত উপজেলায় ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ২৪ হাজার ৫০০ হেক্টর, কলারোয়ায় ১৪ হাজার হেক্টর, তালায় ২০ হাজার হেক্টর, দেবহাটায় ৬ হাজার হেক্টর, কালীগঞ্জ উপজেলায় ৫ হাজার ৫০০ হেক্টর, আশাশুনিতে ৮ হাজার হেক্টর ও শ্যামনগরে ২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। যেখানে গত বছর আবাদ হয়েছিল ৭৬ হাজার হেক্টর জমিতে। জেলায় বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লক্ষ ৫১ হাজার ২০০ মেট্রিক টন।

কৃষি বিভাগের হিসাব মতে, জেলায় ৩ লক্ষ ৮১ হাজার ৭৩০ হেক্টর ফসলি জমি আছে। এসব জমিতে ৩ লক্ষ ৫৮ হাজার ৫৫০টি পরিবার কৃষি কাজ করে। এরমধ্যে ভুমিহীন চাষী রয়েছে ৬৭ হাজার ২৩০ জন, প্রান্তিক চাষী রয়েছে এক লক্ষ ৩১ হাজার ৩৭ জন, ক্ষুদ্র চাষীর সংখ্যা এক লক্ষ ৯৫৭ জন, মাঝারি চাষী রয়েছে ৪৪ হাজার ৮৪২ জন এবং বড় চাষী রয়েছে ১৪ হাজার ৪৮৪ জন। মোট ১৪ লক্ষ ৩৪ হাজার ২০০ জন মানুষ সরাসরি কৃষির সাথে জড়িত। এসব কৃষকের মধ্যে বর্তমান বোরো চাষের সাথে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ জড়িত।

কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। তবে পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানোর কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। যেমন, বৈরী জলবায়ুর (লবণাক্ততা, বন্যা, খরা, জলাবদ্ধতা ও অধিক তাপ সহিষ্ণু) সাথে খাপ খাওয়ানোর মতো উচ্চফলনশীল ফসলের নতুন নতুন জাতের উদ্ভাবন ও ব্যবহার এবং এগুলোর চাষাবাদ বাড়াতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি সমন্বিত পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে সরকার। নতুন শস্যপর্যায় ও অভিযোজন কৌশলের ওপর ব্যাপক গবেষণা জোরদার করা হয়েছে। কৃষিতে তথ্য প্রযুক্তি, স্যাটেলাইট, মলিকুলার ও বায়োটেকনোলজি প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হচ্ছে। শস্যবীমা চালু করার কথা ভাবছে সরকার।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নূরুল ইসলাম আজকের বাংলাদেশ পোস্টকে বলেন, জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে বোরোর আবাদ হতে চলেছে। প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও জেলার চাষিরা ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ করে রের্কড সৃষ্টি করবে। জলাবদ্ধতা না থাকলে বোরোর আবাদ আরও বৃদ্ধি হতো বলে তিনি মনে করেন।

তিনি আরও জানান, জেলা খামারবাড়ির দরজা কৃষকদের জন্য খোলা আছে। কৃষকদের সার্বিক খোঁজ খরব নেওয়া হচ্ছে। তাদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

এসএমএসআই/এসএ/এডিবি