ন্যাভিগেশন মেনু

জীবননগরে অর্ধকোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা স্টার গোল্ড ইলেকট্রনিকস


চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে স্টার গোল্ড ইলেকট্রনিকস এন্ড স্টার গোল্ড এগ্রো ফার্ম লিমিটেড নামের একটি ভূয়া বহুজাতিক কোম্পানির কর্মকর্তারা শতাধিক বেকার যুবকের কাছ থেকে ওই কোম্পানিতে চাকরি দেওয়ার নামে অর্ধকোটি টাকা জামানত নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছে।

ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, গত বছরের ১ অক্টোবর চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলা শহরের আঁশতলা পাড়ার মো. ইকতিয়ার উদ্দিনের বহুতল বাড়িটির দ্বিতীয় তলা জীবননগর উপজেলা জোনাল অফিসের নামে ভাড়া নেয় প্রতারক চক্রটি। এরপর ওই বাড়িতে স্টার গোল্ড ইলেকট্রনিকস এন্ড স্টার গোল্ড এগ্রো ফার্ম লিমিটেড নামে একটি বিশাল সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয়। পরবর্তীতে ভুয়া ওই কোম্পানির কর্মকর্তারা উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের উচ্চশিক্ষিত বেকার যুবকদেরকে টার্গেট করে কোম্পানিতে মোটা অংকের বেতনের লোভ দেখায়। একপর্যায়ে বেকার যুবকরা চাকরি করতে আগ্রহ প্রকাশ করলে ভুয়া ওই কোম্পানির কর্মকর্তারা তাদের কাছ হতে ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জামানত নেয়। এভাবে তারা শতাধিক বেকার যুবকের কাছ থেকে অর্ধকোটি টাকা সংগ্রহ করে। পরে জামানতের টাকা দেওয়া যুবকদের হাতে নিয়োগপত্র দেওয়া হলেও তাদের কোনো কাজ দেওয়া হয়নি এবং কোনো বেতনও দেওয়া হয়নি। পরে নিয়োগপ্রাপ্তরা বেতনের জন্য চাপ সৃষ্টি করলে ভুয়া ওই কোম্পানির কর্মকর্তারা অফিসে আসা বন্ধ করে দিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়।

রবিবার (৭ মার্চ) বিকেলে ক্ষতিগ্রস্ত চাকরি প্রত্যাশি যুবকরা অফিসটিতে তালা লাগিয়ে দেন এবং বেতনসহ জামানতের টাকা ফেরত পেতে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং জীবননগর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।

এছাড়া প্রতারক চক্রটি এলাকাবাসীর মধ্যে নিজেদের বিশ্বস্ততা ও আস্থা অর্জন করতে প্রতারণার অপকৌশল হিসেবে শীতের সময় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে দরিদ্রদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করেন।

আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত জীবননগর উপজেলার খয়েরহুদা গ্রামের সুজন হোসেন জানান, 'সূর্যের হাসি চিহ্নিত ক্লিনিকে কর্মরত মো. মোস্তাক আহম্মদের কাছ থেকে জানতে পারি স্টার গোল্ড ইলেকট্রনিকস কোম্পানিতে লোক নিয়োগ করা হবে। তারপর আমি ওই অফিসে যোগাযোগ করার পর মোস্তাক আহম্মদের মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকা জামানত দিয়ে ২০ হাজার টাকা বেতনে শাখা ব্যবস্থাপকের চাকরি নিই। কিন্ত আজ অবধি আমাকে কোনো কাজও দেওয়া হয়নি এবং কোনো বেতনও দেওয়া হয়নি। এখন বুঝতে পারছি আমি প্রতারণার স্বীকার হয়েছি। গত ১০ দিন ধরে ওই কর্মকর্তারা আর অফিসে আসছেন না এবং মোবাইল ফোনে কল করলেও ফোন রিসিভ করছে না।'

একই অভিযোগ করেন, ওই কোম্পানির এরিয়া ম্যানেজার হাসিব ইকবাল এবং প্রকল্প সহকারী বখতিয়ার উদ্দীন।

তারা জানান, মোস্তাক আহম্মদের মাধ্যমে তারা ৩০ হাজার ও ১২ হাজার টাকা জামানত দিয়েছেন চাকরির জন্য। কিন্তু আজ অবধি তারা কোনো বেতন পাননি। এখন জানতে পেরেছেন তারা প্রতারকের খপ্পরে পড়েছেন।

এছাড়া বিভিন্ন পদে চাকরির জন্য জামানত হিসেবে নাজিবুল হক ২০ হাজার টাকা, নাসের আলী ২০ হাজার, রুবিনা আক্তার ১৫ হাজার, রেবেকা সুলতান ২০ হাজার, নাদিয়া জাহান তানিয়া ১৫ হাজার, আশরাফুল হক ১০ হাজার, সাগরিকা আক্তার ৮ হাজার টাকাসহ শতাধিক ব্যক্তি অর্ধকোটি টাকা দিয়েছেন।

এভাবে প্রতারকচক্রটি শতাধিক চাকরি প্রত্যাশি যুবকদের কাছ থেকে জামানত হিসেবে প্রায় অর্ধকোটি টাকা সংগ্রহ করে লাপাত্তা হয়ে গেছে।

উথলী গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত রুবিনা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, 'স্টার গোল্ড ইলেকট্রনিকস নামের ভুয়া কোম্পানির কাছে বাড়ি ভাড়া দেওয়া মালিক ইকতিয়ার উদ্দীন দায় এড়াতে পারেন না। তিনি খোঁজ-খবর না নিয়ে ভূয়া কোম্পানির কাছে বাড়ি ভাড়া দিয়ে আমাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন।'

এ ব্যাপারে জানতে অভিযুক্ত ওই ভূয়া কোম্পানির ডিভিশনাল ম্যানেজার শাকিল আহম্মেদের মুঠোফোনে (০১৯৭৬২৫৯৫৩৫) একাধিকবার কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ঘটনার ব্যাপারে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মুনিম লিংকন জানান, এ ব্যাপারে একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর প্রতারকচক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে বলা হয়েছে।

এসকে/ ওয়াই এ/এডিবি