ন্যাভিগেশন মেনু

নাব্যতা সংকটে বাঘাবাড়ী নৌবন্দর


নাব্যতা সংকটে পড়েছে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ী নৌবন্দর। যমুনা নদীর নাব্যতা সঙ্কট মারাত্মক আকার ধারণ করায় জ্বালানি তেলসহ অন্যান্য পণ্যবাহী জাহাজ পূর্ণলোড নিয়ে নগরবাড়ী, বেড়া ও বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে পৌঁছাতে পাড়ছে না।

সোমবার (১১ জানুয়ারি) যমুনা নদীতে গিয়ে দেখা গেছে, জ্বালানি তেলসহ অন্যান্য পণ্যবাহী ১৫ থেকে ২০টি কার্গো জাহাজ ও অয়েল ট্যাংকার বিচ্ছিন্নভাবে যমুনার ডুবোচরে আটকা পড়েছে এবং যমুনার নিরাপদ গভীর পানিতে প্রায় শতাধিক পণ্যবাহী জাহাজ নোঙ্গর করে মিনি কার্গোজাহাজ, লাইটার অয়েল ট্যাংকার ও নৌকায় পণ্য আনলোড করে নগরবাড়ী, বেড়া ও বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে পৌঁছানো হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বেড়ার কাজীরহাট ঘাট থেকে আরিচা ঘাটের মধ্যবর্তী, বিশেষ করে বেড়া উপজেলার যমুনা পূর্বপাশে মোল্লার চর এবং পশ্চিমে কাজীরহাট ঘাটের এক কিলোমিটার দক্ষিন-পূর্ব এই এলাকায় নাব্যতা সংঙ্কট চরম আকার ধারণ করেছে। মানিকগঞ্জের আরিচা থেকে পাবনার বেড়ার কাজিরহাট ঘাট এলাকায় ৩টি ড্রেজার নৌ চ্যানেল সচল রাখতে লাগাতার ড্রেজিং করে যাচ্ছে।

নাব্যতা সংকট এতোটাই নাজুক হয়েছে যে, আরিচা থেকে কাজিরহাট এবং কাজিরহাট থেকে আরিচা চলাচলকারী লঞ্চ ধীরগতিতে যাতায়াত করছে। একেবারেই নাব্যতা হ্রাস ও সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে আরিচা-কাজিরহাট, নগরবাড়ী, বেড়া-বাঘাবাড়ী নৌ চ্যানেল।

যমুনার বিভিন্ন পয়েন্টে ডুবোচরে আটকা পড়েছে অন্তত ২৫টি জাহাজ। কার্গোজাহাজগুলো জ্বালানি তেল, রাসায়নিক সার, সিমেন্ট, কয়লা, গম ও চাল নিয়ে এই বন্দরগুলোতে যাওয়ার পথে ডুবোচরে আটকা পড়ে।

স্থানীয়রা জানান, স্রোতের টানে বালু এসে ডুবোচরের সৃষ্টি করছে।

নগরবাড়ী, বেড়া ও বাঘাবাড়ী বন্দর সূত্রে জানা যায়, নৌপথে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় জ্বালানি তেল, রাসায়নিক সারসহ অন্যান্য মালামাল পরিবহনের একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর মাধ্যম। এ নৌপথে জ্বালানি তেলবাহী ট্যাংকার, রাসায়নিক সার ও বিভিন্ন পণ্যবাহী কার্গো জাহাজ চলাচল করে।

বাঘাবাড়ী বন্দর থেকে উত্তরাঞ্চলে চাহিদার ৯০ ভাগ জ্বলানি তেল ও রাসায়নিক সার এবং বেড়া ও নগরবাড়ী বন্দর থেকে সিমেন্ট, কয়লা, পাথর, গম, চালসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য সরবরাহ হয়ে থাকে। আবার উত্তরাঞ্চল থেকে বেড়া ও নগরবাড়ী নৌবন্দরের মাধ্যমে চাল ও গম পাটসহ অন্যান্য পণ্যসামগ্রী রাজধানী ঢাকাসহ দেশের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়।

উত্তরাঞ্চলের ১৪টি বাফার গুদামে রাসায়নিক সার চাহিদার ৯০ ভাগ বাঘাবাড়ী বন্দর থেকে যোগান দেয়া হয়। এখান থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার বস্তা রাসায়নিক সার সড়ক পথে বাফার গুদামগুলোতে সরবরাহ করা হয়। যমুনা নদীর নাব্যতা সঙ্কটে বাফার গুদামগুলোতে আপদকালীন সারের মজুদ গড়ে তোলার কাজ বিঘ্নিত হওয়ার আশংকায় নগরবাড়ী নৌবন্দরের মাধ্যমে সার পৌঁছানোর চেষ্টা করা হয়। যমুনা নৌরুটে নাব্যতা সঙ্কট সৃষ্টি হওয়ায় আপদকালীন সার মজুদের কাজ কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে।

বিআইডব্লিউটিএ আরিচা অফিস সূত্রে জানা যায়, রাসায়নিক সার ও পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলের জন্য ১০ থেকে ১১ ফুট পানির গভীরতা প্রয়োজন হয়। কিন্তু বর্তমানে এ নৌপথে কোথাও কোথাও ৮ থেকে ৯ ফুট পানির গভীরতা রয়েছে। আগামী ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে পানির স্তর কমে ৭ থেকে ৮ ফুট পর্যন্ত নেমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নাব্যতা সঙ্কটে জাহাজগুলো বন্দরে আসতে পারছে না। আটকেপড়া জাহাজ থেকে জ্বালানি তেল লাইটারেজ জাহাজে করে বাঘাবাড়ী ডিপোতে আনা হচ্ছে।

যমুনায় পর্যাপ্ত পানি প্রবাহ না থাকায় অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করায় নদীর তলদেশে পলি পড়ে তৈরী হচ্ছে ডুবোচর।

যমুনা সেতুর উপর চাপ কমাতে এবং পাবনা-নাটোরবাসীর সুবিধার্থে জানুয়ারি মাসেই কাজিরহাট-আরিচা ফেরি চলাচলের লক্ষ্যে বিআইডাব্লিউটিএ ফেরিঘাট নির্মাণ, নৌ চ্যানেলে গভীরতা বাড়াতে ড্রেজিংসহ প্রয়োজনীয় কাজ সম্পর্ণ করতে দ্রুত কাজ করে যাচ্ছে।

এনএস/ ওয়াই এ/ এডিবি