ন্যাভিগেশন মেনু

পাঞ্জশিরে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করছে তালেবান


আফগানিস্তানের পাঞ্জশিরে অন্তত ২০ জন বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে তালেবান। এই পাঞ্জশিরে তালেবানের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল বিরোধী বাহিনী।

বিবিসি জানায়, পাহাড়ি ওই উপত্যকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়ায় সেখানকার সংবাদ জানা কঠিন হয়ে পড়েছে। 

তবে বিবিসির কাছে এমন কিছু তথ্যপ্রমাণ এসেছে যেখানে দেখা যাচ্ছে যে, প্রতিশোধ না নেওয়ার অঙ্গীকার সত্ত্বেও তালেবান হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।

একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, পাঞ্জশিরের একটি ধুলিময় রাস্তার পাশে সামরিক পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তিকে তালেবান যোদ্ধারা ঘিরে রেখেছে। এরপর গুলির আওয়াজ শোনা যায় এবং সেই ব্যক্তিকে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

এটা পরিষ্কার নয় যে ওই ব্যক্তি কোনও সামরিক বাহিনীর সদস্য কিনা। ওই অঞ্চলে সামরিক পোশাক পরা খুব সাধারণ একটি ঘটনা। ভিডিও করার সময় পাশে দাঁড়ানো এক ব্যক্তি জোর দাবি করছেন, ওই ব্যক্তি একজন বেসামরিক নাগরিক।

বিবিসি নিশ্চিত হয়েছে যে, পাঞ্জশিরে এরকম অন্তত ২০ জনকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। তাদের একজন হচ্ছেন একটি দোকানের মালিক ও দুই সন্তানের জনক আবদুল সামি।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, তালেবান যখন অগ্রসর হচ্ছিল, তখন ওই ব্যক্তি পালিয়ে যাননি। তিনি বলেছিলেন, 'আমি সামান্য একজন দরিদ্র দোকান মালিক, যুদ্ধের সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই।'

কিন্তু তাকে গ্রেপ্তার করা হয়, প্রতিরোধ গড়ে তোলা যোদ্ধাদের কাছে সিম কার্ড বিক্রির অভিযোগ তোলা হয়। কয়েকদিন পর তার মরদেহ বাড়ির কাছে ফেলে যাওয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শী যারা তার মৃতদেহ দেখেছেন তারা বলেন, তার শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন দেখা গেছে।

গত মাসে তালেবান যখন আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে, তখন শুধুমাত্র এই একটি অঞ্চল তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল।

পাঞ্জশির উপত্যকা দীর্ঘদিন ধরে আফগানিস্তানে প্রতিরোধ যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। কমান্ডার আহমদ শাহ মাসউদের অধীনে এই অঞ্চলটি সোভিয়েত বাহিনী এবং তালেবানের প্রথম শাসনামলে প্রতিরোধ গড়ে তুলে তাদের ঠেকিয়ে দিয়েছিল। উপত্যকার চারপাশে পাহাড়ের চূড়াগুলোর কারণে এটি দখল করা কঠিন।

আহমদ শাহ মাসুদের সন্তান আহমদ দ্বিতীয় দফায় আফগানিস্তানে তালেবান শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। তবে গত সপ্তাহে তালেবান সেখান বিজয় দাবি করে তাদের যোদ্ধারা তালেবানের পতাকা উত্তোলন করেছে বলে ভিডিও প্রচার করেছে।

অন্যদিকে, প্রতিরোধ যোদ্ধারা তাদের লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। তালেবানের বিরুদ্ধে 'দেশজুড়ে প্রতিরোধ' গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন আহমদ মাসুদ।

তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা নেওয়ার পর দেশের অন্যান্য এলাকার মতো পাঞ্জশিরে কী ঘটতে যাচ্ছে, সেদিকে সবার নজর রয়েছে।

তালেবান যখন উপত্যকায় প্রবেশ করে, তখন তারা স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন করার আহ্বান জানিয়েছিল। তবে ওই এলাকা থেকে পাওয়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, একসময়ের ব্যস্ত বাজারঘাট জনশূন্য হয়ে পড়েছে। মানুষজন পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। উপত্যকার লম্বা পাহাড়ি চূড়াগুলোর নীচে গাড়ির লম্বা লাইন দেখা যাচ্ছে। সেখানে খাবার ও ওষুধের স্বল্পতাও তৈরি হয়েছে বলে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।

তবে বেসামরিক বাসিন্দাদের লক্ষ্যবস্তু করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে তালেবান।

তবে সংখ্যালঘু হাজারা সম্প্রদায়ের সদস্যদের গণহত্যা ও একজন নারী পুলিশ সদস্যকে হত্যার খবর সামনে আসার পর বোঝা যাচ্ছে, প্রতিশোধমূলক হামলা না করার জন্য তালেবান যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেখানকার বাস্তব চিত্র তার চেয়ে আলাদা। সূত্র: বিবিসি

এডিবি/