ন্যাভিগেশন মেনু

পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছেন না জীবননগরের কৃষকরা


শ্রাবণ মাসের ২০ দিন হয়ে গেল পানি হচ্ছে না। খাল-বিলে একটুও পানি নেই চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে যে সেখানে পাট জাঁগ (পঁচানো) সম্ভব। চলতি বছর পাট নিয়ে বিপাকে পড়েছেন জীবননগরের হাজারও কৃষক।

পানির অভাবে তারা সবাই পাট জাঁগ দিতে পারছেন না। এমন দুর্ভোগে পড়ে অনেকের রাতের ঘুম হারাম হওয়ার অবস্থা। বর্ষার ভরা মৌসুমেও পর্যাপ্ত পরিমান বৃষ্টি না হওয়ায় জেলার ডোবা-নালা, খাল-বিল ও পুকুরগুলোতে একটুও পানি জমেনি। ফলে পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছেন না কৃষকরা।

এদিকে জমি থেকে পাট কেটে নেওয়ার সময়ও পেরিয়ে যাচ্ছে। তারপরও চুয়াডাঙ্গার অধিকাংশ কৃষক এখনও পাট কাটা শুরু করেননি। হাতেগোনা কয়েকজন কৃষক যারা শুরু করেছেন তারাও পাট জাঁগ দেওয়ার জন্য পানি পাচ্ছেন না। অনেক কৃষকের কাটা পাট ক্ষেতেই পড়ে রয়েছে। কাঙ্খিত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এবার চুয়াডাঙ্গার নিচু এলাকাগুলো রয়েছে পানিশূন্য।

কেউ কেউ শ্যালোমেশিন দিয়ে পানির ব্যবস্থা করলেও তাতে বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে। নিশ্চিত লাভ জেনেও পানির অভাবে কৃষকের স্বপ্ন অধরা থেকে যাচ্ছে। পানি সংকটের এই চিত্র শুধু চুয়াডাঙ্গা জেলাতেই না, পার্শ্ববর্তী মেহেরপুর ও ঝিনাইদাহ জেলাতেও পানি সংকটে পাট জাগ দিতে না পারায় কৃষকরা পড়েছেন মহাবিপাকে।

কৃষকদের দাবি, গত বছর পাটের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় এ বছর স্থানীয় কৃষকদের মাঝে পাট চাষে আগ্রহ বেড়েছে। এর ফলে চলতি মৌসুমে চুয়াডাঙ্গা জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি পাটের আবাদ হয়েছে। সার, বীজ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ কম হওয়ায় এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর সোনালি আঁশের বাম্পার ফলনও হয়েছে।

পাট চাষে বাম্পার ফলন হয়ে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করলেও এখন পাট কাটার ভরা মৌসুমে পানির অভাবে পাট নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। চলতি মৌসুমে কৃষকরা পাট জাগ দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি না পেয়ে কেউ কেউ হাঁটু পানিতে পাট জাগ দিয়ে পঁচানোর চেষ্টা করছেন। এতে পাটের গুনগত মান নষ্ট হওয়াসহ পাটের দাম কম পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জমি থেকে পাট কেটে নেওয়ার সময় পেরিয়ে গেলেও জাঁগ দেবার পানি না থাকায় কৃষকরা ক্ষেত থেকে পাট কাটছেন না।

কৃষকরা জানান, ‘এবছর বৃষ্টিপাত না হওয়ায় খাল-বিল শুকিয়ে গেছে। মাঝে মধ্যে ২-৩ বৃষ্টি হলেও তা মাটি শুষে নিচ্ছে, জমতে পারছে না। এ কারণে পাট পঁচানোর মতো পানি না থাকায় কৃষকরা পাট কাটছেন না। জেলার চারটি উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মাঠের পর মাঠ বিস্তীর্ণ পাটের ক্ষেত। মৃদু বাতাসের দোলে দুলছে পাট গাছ। আলমডাঙ্গা ও দামুড়হুদা উপজেলার কয়েকটি মাঠের চিত্র বলছে বেশ আগেই পাট কাটার সময় পেরিয়ে গেছে।’

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চুয়াডাঙ্গার মাটি ও আবহাওয়া পাট চাষের জন্য খুবই উপযোগী। প্রতি বছর এ জেলার কৃষকরা অন্য ফসলের মতোই পাট চাষ করে থাকেন। গত বছর পাটের বাজার দর ভালো হওয়ায় চলতি বছরও পাট চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেন কৃষকরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে দেওয়া তথ্য মতে, গত বছর পাটের দাম ভাল পাওয়ার কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৩ হাজার ৭৯৭ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ বেশি হয়েছে। গত মৌসুমে পাটের আবাদ হয়েছিল ১৬ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে আর এবার আবাদ হয়েছে ২০ হাজার ৫২৭ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ১ হাজার ৫০ হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৭ হাজার ২৪৫ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ১০ হাজার ৫৩৫ হেক্টর এবং জীবননগর উপজেলায় ১ হাজার ৬৯৭ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। চলতি মৌসুমে হেক্টর প্রতি পাটের ফলন ধরা হয়েছে ৩ দশমিক ৫ মেট্রিক টন।

চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার নাগদাহ গ্রামের কৃষক মাহফুজুর রহমান বলেন, বাপ-দাদার আমল থেকে পাট চাষ করে আসছি। গত বছরের মতো ভালো লাভের আশায় এবারও ৫ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছি। বিস্তীর্ণ ক্ষেতের সবুজ পাতা স্বপ্ন দেখাচ্ছিল সোনালী আঁশ ঘরে তোলার কিন্তু তা বিধি বাম। বৃষ্টির দেখা নেই কোথাও। পাট জাগ দিতে পারছি না। ফলন ভালো এবং বাজার দর ভালো থাকলেও সময় মত পাট জাঁগ দিতে না পারায় চিন্তায় আছি।

চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলার বোয়ালমারী গ্রামের কৃষক রাজু আহমেদ বলেন, আমি দেড় বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছি। পাট ভাল হয়েছে। বিঘা প্রতি ১২-১৩ মন ফলন হবে। এলাকায় পাট জাগ দেয়ার জায়গার ভীষণ সংকট। এ সময়ে পুকুরে পানি থাকে না। পানি কিনে পাট জাগ দিতে হয়। সেক্ষেত্রে পরিবহন ও কামলা খরচ বেশি পড়ে যাবে। পানির অভাবে পাট জাগ দিতে না পারায় মাঠ থেকে দূরে নদীতে পাট নিয়ে যেতে হবে। এতে উৎপাদন খরচ বেশি পড়বে। গত বছর খাল-বিলে পানি ছিল। এবারও পানি হবে সে আশায় এখনও পাট কাটা শুরু করিনি। এ বছর পাটের বাজার ভাল। বর্তমানে প্রতি মন পাট ২ হাজার টাকা থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাশডাঙ্গা গ্রামের কৃষক আব্দার আলী জানান, তিনি দুই বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। অন্য বছরের তুলনায় এবছর পাটের বাম্পার ফলনও হয়েছে। কিন্তু গত এক সপ্তাহ আগে বৃষ্টির পানিতে খাল-বিল কিছুটা ভরাট হলেও তা ধীরে ধীরে শুকিয়ে গেছে। তাই বাধ্য হয়ে আমরা শ্যালো মেশিনের পানি দিয়ে পাট জাঁগ দিয়েছি।

এস কে/এমআইআর/ওআ