ন্যাভিগেশন মেনু

প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতা ভেদ করে সাফল্য অর্জনকারী নারী (কৃষি কর্মকর্তা) শাহিদা শারমিন


আরিফ হোসেন,বাবুগঞ্জ: বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা ইউনিয়নের প্রতাপপুর সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের মেয়ে মোসা. শাহিদা শারমিন আফরোজ। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী আবদুল আজিজ ও গৃহিনী নাসিমা বেগম এর দুই কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের মধ্যে তিনি সবার বড়। তিনি  বর্তমানে উপজেলা কৃষি অফিসার হিসেবে রাজাপুরে আছেন এবং প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী হিসেবে জনগণের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। বলছিলাম শিক্ষা ও চাকুরীর ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ জয়িতা মোসা. শাহিদা শারমিন আফরোজ এর কথা। 

আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও  বেগম রোকেয়া দিবস -২০২৩  উপলক্ষে "শিক্ষা ও চাকুরির ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী" ক্যাটাগরিতে জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলা থেকে  উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা সম্মাননা দেওয়া হয় তাকে ।

৯ ডিসেম্বর বাবুগঞ্জ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে শেষ্ঠ জয়িতাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে  উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাকিলা রহমান  সসম্মাননা ক্রেস্ট ও সনদপত্র তুলে দেন রাজাপুরের কৃষি অফিসার শাহিদা শারমিন আফরোজ এর হাতে।

আজকে তিনি শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সফল নারী হলেও শুরু থেকেই তাকে বিভিন্ন রকম প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিকূলতার  সম্মুখীন হতে হয়েছে।  তবে  তাকে তার বাবা মা সবসময় সাহস যুগিয়েছেন, সফল হওয়ার জন্য  সঠিকভাবে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, পাশে ছিলেন এবং সব রকমের সহায়তা করেছেন। সর্বদা যে মানুষটি তাকে সবচেয়ে বেশি  অনুপ্রেরণা দিয়েছেন তিনি হলেন, আর এক জন নারী, তার মা। 

জানাগেছে, উপজেলার প্রতাপপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে  (তৎকালীন প্রতাপপুর প্রি ক্যাডেট স্কুল) শিক্ষাজীবন শুরু হয়। এরপরে শিশুনিকেতন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও পরবর্তীতে রহমতপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুল বৃত্তিসহ এসএসসি বিজ্ঞান বিভাগে  স্টারমার্ক পেয়ে স্কুল জীবন শেষ করেন। এরপরে সরকারি মহিলা কলেজ থেকে  বিজ্ঞান বিভাগে কৃতিত্বের সাথে প্রথম বিভাগে এইচ এসসি পাশ করেন। 

২০০৩-০৪সেশনে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদে  ভর্তি হন এবং সফলতার সাথে বিএসসি ( এজি) ইন এগ্রিকালচার ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জেনেটিক্স এ্যন্ড প্লান্ট ব্রিডিং এ ২০০৯-১০ সেশনে মাস্টার্স ডিগ্রীতে ভর্তি হন। উল্লেখ্য, মাস্টার্স এ অধ্যয়নরত অবস্থায় তিনি  একটি সড়ক দুর্ঘটনায় মেরুদণ্ডে  মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন । এতে করে  তিনি শিক্ষা জীবন থেকে এক বছর পিছিয়ে যান। কিছুটা সুস্থ হয়ে আবার শুরু করেন এবং সাফল্যের সাথে ২০১২ সালে জেনেটিক্স এ্যন্ড প্লান্ট ব্রিডিং এ মাস্টার্স ডিগ্রী সম্পন্ন করেন। 

 ইতোমধ্যেই একটি ব্যাংকে চাকুরিতে যোগদান করেন এবং বিসিএস এর জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন। এরপরে ৩২তম বিসিএস এ তিনি তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হন এবং তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা হিসেবে ২০১৪ সালে যোগদান করেন ঢাকা সদর দপ্তরে । তখন ডা.  আবদুল্লাহ শুভ এর সাথে পারিবারিকভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

 পরবর্তীতে ৩৪ তম বিসিএস এর চুড়ান্ত ফলাফলে বিসিএস (কৃষি)  ক্যাডারে কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার হিসাবে সুপারিশপ্রাপ্ত হন এবং  ঝালকাঠি সদরে যোগদান করেন।

 তিনি  বর্তমানে পদোন্নতি পেয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার হিসেবে রাজাপুরে আছেন এবং প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী হিসেবে জনগণের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এর মাঝে ২০১৭-২০২২ সাল পর্যন্ত( প্রায় পাচ বছর) বরিশালের রহমতপুর কৃষি প্রশিক্ষণ ইনিস্টিউট এবং হর্টিকালচার সেন্টারে কর্মরত ছিলেন। তখন তার নিজ জন্মস্থান বাবুগঞ্জ উপজেলার মানুষের সরাসরি  সেবা করার সৌভাগ্য হয়েছিল বলে তিনি নিজেকে ধন্য মনে করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুই ছেলে  সন্তানের জননী।

শিক্ষা ও চাকুরীর ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী ক্যাটাগরীতে উপজেলা পর্যায়ে "শ্রেষ্ঠ জয়িতা" নির্বাচিত হওয়ায় তিনি   উপজেলা প্রশাসন ও  উপজেলা পরিষদ, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, মা বাবা, পরিবার আত্নীয় স্বজন এবং পরম শ্রদ্ধেয় শিক্ষকমণ্ডলী, বন্ধুবান্ধবসহ যাদের আজকের তার এই অবস্থানের জন্য বিশেষ অবদান রয়েছে,  যারা সব সময় পাশে থেকে মানুষের জন্য ভালো কাজ করার উৎসাহ জুগিয়েছেন,অনুপ্রেরণা দিয়েছেন সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন । 
সকলের কাছে  দোয়া চেয়েছেন যেন দেশ ও  মানুষের জন্য সততা ও নিষ্ঠার সাথে  কাজ করে যেতে পারেন।

বাবুগঞ্জ মহিলা বিষায়ক কর্মকর্তা শামিমা ডলি বলেন,  কৃষি কর্মকর্তা মোসা. শাহিদা শারমিন আফরোজ বাবুগঞ্জের গর্ব। তিনি শিক্ষা ও চাকুরীর ক্যাটাগরিতে  বাবুগঞ্জ উপজেলা পর্যায়ে সাফল্য অর্জনকারী নারী শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত হয়েছেন।  
তাকে দেখে এ প্রজন্মের নারী শিক্ষার্থীরা অনুপ্রেরণা পাবে বলে আমরা আশাবাদী।