ন্যাভিগেশন মেনু

বগুড়ায় লাখো মানুষের মেলায় লাখ টাকা দামের মাছ


পোড়াদহ মেলায় ৯ বছর বয়সি রাফিউল এসেছেন সবচেয়ে বড় মাছ কিনতে। বাবার হাত ধরে মেলার বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে বড় মাছের খোঁজে। দেখতে দেখতেই সামনে অনেক মানুষের ভিড়। সবাই বলছে এটা মাছ নয় মনে হচ্ছে তিমি।

প্রতিবছর বাংলা সনের পৌষের শেষ বুধবার এই পোড়াদহ মাছের মেলা বসে। সে অনুযায়ি এবার বসেছে এই মেলা। 

মেলাতে সিরাজগঞ্জ থেকে আসা সাকাত হোসেনের ৭৬ কেজির বাঘাইড় মাছটি দেখতে হাজার হাজার মানুষ ভিড় করে। তিনি ১ লাখ ৫ হাজার টাকায় মাছটি বিক্রি করেছেন বলে জানান।

মেলায় নজর কেড়েছে ৬০ কেজি ওজনের যমুনা নদীর অন্য একটি বাঘাইড় মাছ। মাছ ব্যবসায়ী শুকুর আলী মাছটির দাম হাঁকিয়েছেন ৯০ হাজার টাকা।

হরেক রকমের মাছের মধ্যে মেলায় এবার স্থান পেয়েছে তিন কেজির মিষ্টি মাছ। মিষ্টি বিক্রেতা জানান, তিনি মাছ আকৃতির ৩ কেজি মিষ্টি তৈরী করেছেন। এছাড়া তিনি আধা কেজি থেকে শুরু করে বিভিন্ন আকারের মাছ আকৃতির মিষ্টি বিক্রি করছেন। মেলায় প্রচার পেয়েছে যে মিষ্টি মাছ হিসেবে। মিষ্টি তিনি বিক্রি করছেন ৩০০ টাকা কেজি।

বগুড়ার গাবতলীর গোলাবাড়ীর ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলাকে ঘিরে মিলন মেলায় পরিনত হয়েছে গোটা এলাকা। এলাকার মানুষের ঘরে ঘরে যেনো উৎসব। মেয়ে-জামাইয়ের সাথে আত্মীয়-স্বজনে ভরা সব বাড়ি। বুধবার বিশাল আকৃতির মাছ, আর বড় বড় মিষ্টি কেনাবেচার মধ্য দিয়ে শেষ হলো ঐতিহ্যবাহী মেলা।

দুই শতাধিক বছরের ঐতিহ্যকে ধারণ করে পোড়াদহ মেলা (মাছের মেলা) বগুড়ার গাবতলী উপজেলার গোলাবাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দুরে ফাঁকা মাঠে এই মেলা বসেছে। পোড়াদহমেলা মানেই বিভিন্ন প্রজাতির বিশাল আকৃতির মাছের মেলা ও মাছের আকৃতির মিষ্টির পসরা। প্রতিবছর এ মেলাকে কেন্দ্র করে জমে ওঠে মাছের বাজার। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। 

এছাড়াও পোড়াদহ মেলা প্রাঙ্গণেও রয়েছে শতাধিক খুচরা মাছ বিক্রেতা। সারিবদ্ধভাবে এসব ব্যবসায়ীরা মাছের পসরা সাঁজিয়ে বসেছেন। দোকানে মাঝারি, ছোট বিভিন্ন জাতের মাছের পসরা সাঁজিয়ে বসেছেন তারা। মেলার পূর্বপ্রান্তে উত্তর-দক্ষিণসহ ও মাঝ দিয়ে লম্বালম্বীভাবে বসেছেন একাধিক দোকানের সারি।

গাবতলীর মহিষাবান এলাকার মাছ ব্যবসায়ি শুকুর আলী। প্রতিবছর সে মেলা বড় বড় আকৃতির মাছ নিয়ে হাজির হন। এবার তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। হাজির হয়েছেন বড় বড় সব মাছ নিয়ে।

মেলায় নিরাপত্তা বিষয়ে বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা আজকের বাংলাদেশ পোস্টকে জানান, ঐতিহ্যবাহী এই পোড়দহ মেলা। মেলার নিরাপত্তায় কাজ করছে পুলিশ সদস্যরা। বিশাল আকৃতির মাছের মেলা এই পোড়াদহ মেলা, যা বাঙালীর ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে লালন করে।

শফিকুল ইসলাম, ইমান আলীসহ একাধিক মাছ বিক্রেতা জানান, এ মেলায় গাঙচিতল, চিতল, বোয়াল, রুই, কাতলা, মৃগেল, হাঙড়ি, ব্লাককার্প, গ্রাসকার্প, সিলভার কার্প, বিগহেড, কালাবাউশ, পাঙ্গাসসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাঝারি ও বড় আকারের মাছ পাওয়া যাচ্ছে। এসব মাছ ওজনে ৫-২০ কেজি পর্যন্ত রয়েছে।

মাছ বিক্রেতারা জানান, প্রতি কেজি গাঙচিতল ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা, চিতল ৬০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা, বোয়াল ৭৫০ থেকে ১৫০০ টাকা, রুই ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা, কাতলা ৩৫০ থেকে ৭০০টাকা, মৃগেল ৩৫০ থেকে ৮০০ টাকা, হাঙড়ি ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা, গ্রাসকার্প ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, সিলভারকার্প ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, বিগহেড ৪০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা, কালাবাউশ ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, পাঙ্গাস ৩৫০ থেকে ৭০০ টাকা।

এএসবি/সিবি