ন্যাভিগেশন মেনু

বাঁশখালীতে বাজারের পুকুর ভরাট, এসিল্যান্ডের অভিযান


বাঁশখালী পৌরসভার ৩০০মিটার দূরত্বে মিয়ার বাজার সংলগ্ন এলাকায় দুই’শ বছরের পুরাতন দারোগা পুকুরটি ভরাট করে ফেলা হচ্ছে। প্রতি রাতে পাহাড়ি মাটি ও জমির টপ সয়েল কেটে ট্রাকে করে ফেলা হচ্ছে পুকুরে। ৫ একর আয়তনের এই পুকুরটি ব্যবহার করতেন স্থানীয় হাজারো বাসিন্দা। বনবিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের নীরবতায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। 

ঐতিহ্যবাহী এই পুকুর ভরাট নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড় হলেও প্রশাসন নির্বিকার। ভূমিদস্যুরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদের সাহস পাচ্ছেন না। অপরদিকে প্রশাসন মিডিয়া ও জনপ্রতিনিধিদের মুখ বন্ধ করতে কয়েক লাখ টাকার দেন দরবার হয়েছে বলেও শুনা যাচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন কিছুদিন আগে ভরাট কাজ বন্ধ করে দিলেও আবারো শুরু হয়েছে ভরাট কাজ। এনিয়ে স্থানীয় লোকজন ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

গতকাল সরজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে, পুকুরের দুই তৃতীয়াংশ ভরাট করে ফেলা হয়েছে। একইসাথে এক’শ গজ দূরত্বে ব্রিটিশ আমলের আট একরের জায়গায় খননকৃত এতিহ্যবাহী কাজী পুকুরটিও ভরাটের প্রস্তুতি চলছে। এদিকে ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল খালেক পাটোয়ারী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। 

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ত্রিপুরা চরন দের মালিকানাধীন পুকুরটি হাজার হাজার নারী পুরুষ নিত্যকাজে ব্যবহার করে আসছিলেন। ত্রিপুরা চরনের ছেলেরা পুকুরটির মালিকানা বিক্রি করে দিলে নতুন মালিক আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিলে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান নির্মাণের জন্য মাটি ভরাট শুরু করে। এর আগে জলদি মিয়ার বাজারে মুন্সি পুকুরটি ভরাট করে মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছিল। বাজারের তিন শতাধিক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠা বিগত দিনে অগ্নি দুর্ঘটনায় দারোগা পুকুরের পানি ব্যবহার করেছে। বর্তমানে আধা কিলোমিটার এলাকার মধ্যে দারোগা পুকুর ও কাজী পুকুর ছাড়া আর কোন জলাশয় নেই ।

স্থানীয় জলদী মিয়ার বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, নির্বাচনের সময় সাধারণ মানুষের ব্যস্ততার সুযোগ নিয়ে ভূমি দস্যুরা রাতের অন্ধকারে পাহাড় কেটে লাল মাটি ও ধানি জমির উপরি অংশ কেটে নিয়ে পুকুর ভরাটের কাজ শুরু করে। শত বছরের পুকুরটি ভরাট হলে এলাকার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়বে। স্থানীয় মাটি ব্যবসায়ী টিপু ও শহীদুল্লাহ বর্তমান মালিক মো. হুমায়ুনের সাথে চুক্তি করে পুকুর ভরাটের কাজ চালিয়ে আসছে। এ বিষয়ে স্থানীয় লোকজন সোস্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ ও পুরাতন পুকুরটির ভরাট বন্ধের দাবি জানিয়ে আসলেও ভূমি দস্যুদের ভয়ে সরাসরি মুখ খুলতে পারছেন না। এই কাজে পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. ইসহাকও জড়িত আছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে বিষয়টি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন কাউন্সিলর ইসহাক।

ভরাট কাজে জড়িত মোহাম্মদ ফোরকান জানান, সাংবাদিকরা যাতে নিউজ না করে তার জন্য একজনকে টাকা দেয়া হয়েছে। তিনি সবাইকে ম্যানেজ করার কথা।

মাটি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ টিপু বলেন, ‘আমি কয়েক গাড়ি মাটি ফেলেছি। বাকি মাটি কে ফেলেছে জানি না।’ কালীপুর রেঞ্জের চেচুরিয়া বিট কর্মকর্তা পাহাড় কাটার বিষয়ে মামলা হয়েছে বলে জানান।

বাঁশখালী ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার আজাদুল ইসলাম জানান, ‘পুকুর ভরাট সম্পূর্ণ নিষেধ। আগুন নিয়ন্ত্রণে একমাত্র ভরসা পুকুরের পানি।’

বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার জানান, পুকুর ভরাটের বিষয়টি জানার পর লোকজন পাঠিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। পুলিশ প্রশাসনকেও এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। পুনরায় ভরাট কাজ শুরু করার বিষয়টি তার জানা নেই।