ন্যাভিগেশন মেনু

বেড়ায় চলছে শারদীয় দূর্গাপূজার প্রস্তুতি


হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শ্রী শ্রী শারদীয়া দূর্গাপূজা। দেশের হিন্দু ধর্মালম্বী জনগোষ্ঠি দেবী দূর্গাকে বরণ করে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। সারা দেশের ন্যায় পাবনার বেড়া উপজেলার হিন্দু ধর্মালম্বীরাও নিজেদের প্রস্তুত করছে তাদের আরাধ্য দেবী, মা দূর্গাকে তাদের অন্তরের ভালোবাসার শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদনের জন্য। করোনা মহামারির কারনে দূর্গাপুজার আনন্দ উৎসবে কড়াকড়ি হবে স্বাস্থ্যবিধি।

দুর্গাপূজা সমগ্র হিন্দুসমাজেই প্রচলিত। তবে বাঙালি হিন্দু সমাজে এটি অন্যতম বিশেষ ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব। আশ্বিন বা চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে দুর্গাপূজা করা হয়। আশ্বিন মাসের দুর্গাপূজা শারদীয়া দুর্গাপূজা এবং চৈত্র মাসের দুর্গাপূজা বাসন্তী দুর্গাপূজা নামে পরিচিত। শারদীয়া দুর্গাপূজার জনপ্রিয়তা বেশি।

উপজেলা সদর ছাড়াও ইউনিয়নের গ্রামগঞ্জে ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে প্রতিমা ও পূজা মন্ডপ তৈরীর কাজ। স্থায়ী পূজামন্ডপগুলোতে মেরামতসহ রঙের কাজ চলছে। প্রায় সব মন্দিরে প্রতিমা তৈরীর কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। কোথাও কোথাও প্রতিমায় একাধিকবার মাটির প্রলেপ দেওয়া হয়েছে। বেড়া উপজেলার ত্রিমোহনী গ্রামের মৃৎশিল্পী শশাঙ্ক পাল, মালধাপাড়া গ্রামের ষষ্ঠি পাল, চরপাড়া মহল্লার বিনয় পাল, পেচাকোলা গ্রামের প্রাণ গোপাল পালসহ আরও কয়েকজনের সাথে প্রতিমা তৈরী নিয়ে কথা হয়।

মৃৎশিল্পী শশাঙ্ক পাল জানায়, গতবছর আর এবছর হিসেবটাই ওলোট পালট হয়ে গেছে। গত পূজায় সে প্রকারভেদে মূর্তি প্রতি ৪০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা মজুরি নিয়েছিল কিন্তু এবার করোনাভাইরাসের কারনে সব হিসেব নিকেষের বাইরে।

মৃৎশিল্পী ষষ্ঠি পাল জানায়, প্রতিমার পোশাক পরিচ্ছদ যেমন, জর্জেটের শাড়ি, হরেক রকমের পুতি, চুমকি ও জরি কাজের লেস, ডাইমন্ড পুতি, গোল্ড চুমকি, সিটি গোল্ডের গহনা এ ধরনের সাজ-সজ্জা কিনে আনতে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা লেগে যায়, যা আগে মাটি আর রং দিয়ে তৈরী হতো, এবার প্রতিমার সাজসজ্জা অনেকটাই হ্রাস করা হচ্ছে।

প্রতিমা শিল্পী বিনয় পাল বলেন, প্রতিমার চালি তৈরীতে এখন কর্কশিট ব্যবহার করা হচ্ছে। আধুনিকতার বহি:প্রকাশ ঘটছে সর্বক্ষেত্রে। কর্কশিট দিয়ে প্রতিমার চালি তৈরী করতে অনেক বেশি খরচ হয়।

প্রত্যেক প্রতিমাশিল্পীই এবারের প্রতিমা তৈরীতে পূজা কমিটি অনেকটাই খরচ নিয়ন্ত্রন করছেন বলে জানান। প্রতিমার সাজসজ্জা তেমন জাঁকজমক পূর্ণ হবে না, অনেকটাই হবে সাদামাটা। বিগত বছরগুলোতে প্রতিমা সৌন্দর্য্য নিয়ে প্রতিমা তৈরীর শুরু থেকেই মন্দির কমিটি ভীষনভাবে সজাগ থাকতো এবং ভালো প্রতিমা তৈরী করতে পারলে প্রতিম শিল্পীকে পুরস্কৃত করা হতো। কিন্তু এবারে প্রতিমা তৈরীতে কোন প্রতিযোগিতা নেই। 

শারদীয়া দূর্গাপূজা উৎসবে মূর্তি তৈরীতে যেমন প্রতিযোগিতা হয় তেমনি গেট ও প্যান্ডেলের সাজ ও আলোকসজ্জা দূর্গাৎসবকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে। প্রতিযোগিতামূলক দূর্গাপূজার প্যান্ডেল ও আলোক সজ্জার প্রস্তুতি এবার নেই। ব্যস্ততা নেই ডেকরেটর ব্যবসায়ীদের। সাধারন সাদামাটা যে পুজা প্যান্ডেল তৈরী হচ্ছে তাতে শ্রমিকরা অলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে, নেই কোন তাড়াহুড়ো।

উপজেলা বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস সুত্র ও বাংলাদেশ পূজাউদযাপন পরিষদ বেড়া উপজেলা শাখার সভাপতি ভৃগু রাম হালদার জানান, বেড়া উপজেলায় এবার মোট ৫০ টি পুজামন্ডপে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। 

কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, বেড়াতে পূর্বেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি, সর্বোপরি প্রশাসন সব সময় সজাগ আছে এবং থাকবে বলেই আমাদের কোন আশঙ্কা বা আতঙ্কের কারন নেই।

পূজোর সময় আইন শৃঙ্খলার অবস্থা সমন্ধে জানতে চাইলে বেড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও শারদীয়া দূর্গাপূজা হিন্দু সম্প্রদায় যেন নির্বিঘ্নে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ধর্মীয় উৎসব পালন করতে পারে তার জন্য আমরা সর্বাত্নক ব্যাবস্থা গ্রহণ করবো। প্রত্যেকটি মন্দিরে আনসার বাহিনীর সদস্যসহ পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা ২৪ ঘন্টা সজাগ ও সর্তক পাহারায় থাকবে। ভ্রামমাণ পুলিশ টিমের সর্তক দৃষ্টি এড়িয়ে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর সুযোগ বা নাশকতার কোন আশঙ্খা নেই। বেড়া পৌর এলাকার বাইরের বিশেষ করে গ্রামের পূজো মণ্ডপ গুলোতে বিশেষ নজরদারি থাকবে।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর অমাবশ্যার অন্ধকারকে বিদীর্ন করে সূর্যের রক্তিম আভায় ধরনী আলোকিত হওয়ার (ভোর রাত) মূহুর্তে পবিত্র শ্রী শ্রী চন্ডী পাঠের মধ্যদিয়ে আলোয় আলোয় পৃথিবীর অন্ধকারকে দূর করে দিতে দুর্গতি নাশিনী দেবীদূর্গার আহ্বান করেছে এবং দেবীদূর্গাকে বরণ করতে প্রস্তুত হচ্ছে পৃথিবীলোক। আগামী ২১অক্টোবর দেবীদূর্গার বোধন-এর মধ্য দিয়ে শুরু হবে ৫ দিন ব্যাপী হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শ্রীশ্রী শারদীয়া দূর্গাপূজা।

সিবি/ এডিবি