ন্যাভিগেশন মেনু

ভালো নেই সিরাজগঞ্জের মৃৎশিল্পীরা


ভালো নেই চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, উল্লাপাড়া, সলঙ্গা ও রায়গঞ্জ উপজেলার পালপাড়া গ্রামের মৃৎশিল্পীরা। যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে এ অঞ্চলের মৃৎশিল্পী। এ কারনে অনেকে এই পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশা ধরছেন। তারপরও এখনো শতাধিক পরিবার পুর্বপুরুষের পেশায় টিকে থাকতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

মৃৎশিল্পীদের অভিযোগ, সময়ের বিবর্তনে প্রযুক্তির উন্নয়নে প্লাস্টিক, মেলামাইল ও সিরামিকের জিনিসপত্রের সহজলভ্যতা এবং এসবের চাহিদা বৃদ্ধির কারনে কদর কমে গেছে মাটির তৈরি জিনিষের। ফলে মাটির জিনিষ তৈরি করে তাদের পোষাচ্ছেনা। কিন্তু তারপরও কর্মসংস্থানের অভাব ও বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতে এই পেশার সাথে জড়িয়ে রয়েছে অনেক পরিবার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু সলঙ্গা থানার পালপাড়া গ্রামের রয়েছে শতাধিক পাল পরিবার। আদি যুগ থেকে পাল বংশের লোকেরা এই পেশায় সম্পৃক্ত থাকায় তাদের পেশা অনুযায়ী গ্রামের নাম হয়েছে পালপাড়া।

পালপাড়া গ্রামের রনজিদ পাল, সোহাগি রানী পালসহ অনেকেই জানান, পালের নানা ইতিহাস ও ঐত্যিহ্যের কথা। তারা তাদের সন্তানদের অনেককে এই পেশায় সম্পৃক্ত না করলে ও জীবনের বাকি দিনগুলো তারা পুর্বপুরুষের পেশা নিয়েই থাকতে চান কিন্তু বছরের বেশিরভাগ সময় তাদের হাতে কাজ থাকেনা। গ্রামের হাট-বাজারে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তৈরি করা জিনিসপত্র নিয়ে অলস সময় বসে থাকতে দেখা যায় কুমারদের।

রায়গঞ্জ উপজেলার পালপাড়া গ্রামের রনজিত পাল জানান, 'দুই ছেলে আর এক মেয়ে নিয়ে ৫ সদেস্যের সংসারে অভাব অনটন এখন নিত্যসঙ্গী। বাপ দাদার পেশা আঁকড়ে থাকতে গিয়ে বসতভিটা ও আজ বন্ধকিভিটায় পরিণত হয়েছে। এই শিল্পকে বাঁচাতে হলে স্বল্পসুদে ব্যাংক ঋণ না দেওয়া হলে বিলীন হয়ে যাবে মৃৎশিল্প।'

সলঙ্গা গ্রামের শ্রীমর্তি পাল বলেন, 'আগের চেয়ে এখন মাটির দাম অনেক বেশি। তাছাড়া মাটি আমাদের এলাকায় পাওয়া যায় না। অনেক দুর থেকে মাটি আনলে খরচ বেড়ে যায়। তাই আমরা লাভের মুখ দেখিনা। এক সময় চলনবিলের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক প্রসার ছিল মাটির তৈরি ঘট, ধুপাতি, কলস, ডিয়ার, ফুলের টব, কলস, হাড়ি, পাতিল ও গামলার।'

তাড়াশ প্রেসক্লাবের সভাপতি সনাতন দাস বলেন, মৃৎশিল্পকে আধুনিকীকরণ করতে তাদের বিভিন্নভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার। পহেলা বৈশাখ এবং বিভিন্ন  অনুষ্ঠানে মাটির তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহার করা প্রয়োজন। মৃৎশিল্প ধ্বংসের কারন হলো বাজারে বিভিন্ন ধরনের মেলামাইন প্লাস্টিক ব্যবহারের কারনে। মাটির দাম বেশি হওয়ায় মৃৎশিল্প এখন বিলুপ্তির পথে।

এমএস/এমআইআর/এডিবি/