ন্যাভিগেশন মেনু

মেহেরপুরে সবজির বাম্পার ফলন, কমদামে হতাশ কৃষক


মেহেরপুরে বাজারে উঠেছে শীতকালীন সবজি। এই মৌসুমে ব্যাপক ফলন হয়েছে শীতকালীন সবজির। তবে বাজারে সবজির দাম একেবারেই কম থাকায় ক্রেতারা খুশি হলেও হতাশ চাষীরা। দাম কম হওয়ায় উঠছে না উৎপাদন খরচ। এতে ক্ষতির মুখে পড়তে বসেছে মেহেরপুর জেলার চাষীরা।

সদর উপজেলার শোলমারী গ্রামের কৃষক আইজউদ্দিন আজকের বাংলাদেশ পোষ্টকে জানান, আড়াই বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করেন তিনি। বীজ থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলা পর্যন্ত ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হলেও মাত্র ১০ হাজার টাকায় বিক্রয় হয়েছে তার জমির ফুলকপি। এতে বিশাল লোকসানের মুখে পড়েছেন তিনি।

একই গ্রামের সবজি চাষী রুহুল আমিন বলেন, দেড় বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করে দাম না পাওয়ায় সময় হওয়ার স্বত্বেও ফসল কাটেননি। ভালো দাম পাওয়ার আশায় দেড় বিঘা জমিতে ফুলকপি ও ১৫ কাঠা জমিতে বিটকপি চাষ করেছি। ফুলকপি ঘরে তোলার সময় হলেও দাম না পাওয়ায় এখনো ফসল কাটিনি। ফুলকপি চাষে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হলেও ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার বেশি পাওয়ার আশা নেই। বিটকপি কাটছি। মনে হয় ৭ থেকে ৮ হাজারের বেশি দামে বেচতে পারবো না।

রুহুল আমিন ও আইজউদ্দিনের মতোই করুন অবস্থা জেলার অন্যান্য সবজি চাষীদের। ফুলকপি বিঘা প্রতি ৪ থেকে ৫ হাজার টাকায় ও বিটকপি ৭ থেকে ৮ হাজার টাকায় বিক্রি করছে কৃষক। পাইকারী বাজারে মূলা, সিম ও বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮-১০ টাকা কেজি দরে। টমেটো, পালংশাক, মিষ্টি কুমড়া, ধনেপাতারও চলতি মৌসুমে ব্যপক চাষ হয়েছে। ফলনও হয়েছে ভালো। একসাথে অনেক ফসল ওঠায় দাম পাচ্ছেনা চাষীরা।

জেলায় আলু ছাড়া অন্য কোনো কাঁচা সবজি সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। সংরক্ষণের অভাবে অল্প দামেই বেচতে হচ্ছে কৃষকের কষ্টে ফলানো ফসল।

চলতি মৌসুমে মেহেরপুরে ৪ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ হয়েছে। গত বছর ৩ হাজার ৭৪০ হেক্টর জমিতে চাষ হয় শীতকালীন সবজির। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় ৫১০ হেক্টর বেশি জমিতে হয়েছে সবজির চাষ।

একসাথে বেশি পরিমান সবজি উৎপাদন হলেও সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় একসাথেই বাজারে তুলতে হচ্ছে বেশিরভাগ সবজি। ফলে পাওয়া যাচ্ছে না কাঙ্খিত দাম।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক স্বপন কুমার খাঁ আজকের বাংলাদেশ পোষ্টকে বলেন, এ বছর অনেক বেশি সবজির চাষ হয়েছে। একসাথে অনেক সবজি বাজারে উঠায় দাম কমেছে। যদি সবজিগুলো ১০ থেকে ১৫ দিন সংরক্ষণ করা যেতো, তখন কৃষক সবজির কাঙ্খিত দাম পেতে পারতো। যেহেতু জেলায় কোন সংরক্ষণাগার নেই সেহেতু সেটা সম্ভব হয়নি।

তিনি আরও বলেন, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, জেলায় সবজি সংরক্ষণাগার তৈরী করবেন। এতে কৃষকরা তাদের সবজি সংরক্ষণ করতে পারবে এবং পর্যাপ্ত দাম পাবে। এছাড়া মেহেরপুর রেল লাইনের আওতায় আসলে মেহেরপুরের সবজি দেশের বিভিন্ন স্থানে যাওয়ার সুযোগ তৈরী হবে। ফলে কৃষক ভালো দাম পাবে।

সৈকত/সিবি/এডিবি