ন্যাভিগেশন মেনু

যতদূর দৃষ্টি যায় শুধু হলুদ আর হলুদ


বিস্তৃত দিগন্তজুড়ে সরিষা ক্ষেত। যতদূর দৃষ্টি যায় শুধু হলুদ আর হলুদ। ফুলের সমারোহ দেখে দৃষ্টি জুড়িয়ে যায়। মনে শিহরণ জাগে। বিশেষ করে শীত মৌসুমেই সরিষা চাষ বেশি হয় দিনাজপুরে। দৃষ্টিনন্দন এমন দৃশ্য দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসে মানুষ। বিশেষ করে শিশুরা সময় কাটাচ্ছে ক্ষেতেই। তাদের সরিষা ক্ষেত যেনো একটি বিনোদন কেন্দ্র।

দিনাজপুরে সারাবছরই নানা ধরনের ফসল উৎপন্ন হয়। দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলায় কৃষি ভিত্তিক উপজেলা হিসেবে মনে করা হয়। এই এলাকার মাটি কৃষির জন্য অত্যন্ত উপযোগী। প্রত্যেক কৃষকেরাও অনেক পরিশ্রম করেন। তাই কম খরচ আরও বেশি লাভের আশায় এবার সরিষা আবাদের দিকে ঝুঁকছেন কৃষকরা।

গত কয়েক বছরে এই এলাকার চাষিরা মধ্যবর্তী ফসল হিসেবে সরিষা আবাদ করে ব্যাপক লাভবান হচ্ছেন। এ বিষয়ে চাষি মকবুল আজকের বাংলাদেশ পোস্টকে জানান, আমন এবং বোরো চাষের মধ্যবর্তী সময়ে সরিষা চাষ করলে মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়। পরের ফসলের জন্য খুব বেশি চাষ করতে হয় না। জৈব সারও দিতে হয় না। অন্যদিকে মাত্র দুটি চাষ দিয়েই সরিষা চাষ করা যায়। সরিষা আবাদে কোনো প্রকার সেচ লাগে না। সার ও কীটনাশকও প্রয়োগ করতে হয় না। কোনো রকম বীজ ফেলে দিলেই আবাদ হয়ে যায়। ফলে কম খরচে বেশি লাভ পাওয়া যায়। কম সময়ে সরিষার ফসল ঘরে তোলা যায় বলে একটি জমিতে তিন বার আবাদও করা যায়। আর এসব কারণেই এই উপজেলায় দিন দিন সরিষাার আবাদ বাড়ছে।

তিনি জানান, সরিষা শাক হিসেবেও বেশ সুস্বাদু। এক একর জমিতে সরিষা আবাদ করতে চাষিদের খরচ হয় মাত্র ১৫ হাজার টাকা। প্রতি একরে ১৫ মণ সরিষা উৎপাদন করেন তারা। বাজারে ২ হাজার টাকা মণ দরে সরিষা বিক্রি হয়। ফলে খরচের দ্বিগুণ লাভ করছেন চাষিরা। এ বছর আবহাওয়া অত্যন্ত ভাল থাকায় ফলনও ভাল হবে বলে আশা করছেন তারা।

চাষি ফুলমতি জানান, 'গতবার এক বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছিলাম। এবার তিন বিঘা জমিতে আবাদ করেছি। এ ফসলটা বোরো এবং আমন চাষের জন্য উপকারী। তাছাড়া বাড়তি আয়ও হচ্ছে। তৃতীয় ফসল হিসেবে সরিষা চাষ করে বাড়তি আয় করতে পারছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর ফলন বৃদ্ধি পাবে।' দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণের উপ-পরিচালক মো. তৌহিদুল ইকবাল জানান, 'কৃষি বিভাগ থেকে এ বছর উপজেলাগুলোতে প্রায় ২৫ হাজার চাষিকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রণোদনা সহায়তা দেয়া হয়েছে। কৃষকদেরকে উন্নত জাতের বীজ ও সার সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়াও সরিষা ক্ষেতে মৌমাছি চাষ করলে ১৫ থেকে ২০ ভাগ ফলন বেড়ে যাবে।'

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, গত ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে দিনাজপুর জেলাতে ১১ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করেন এই এলাকার চাষিরা। কিন্তু ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে তা বেড়ে গিয়ে প্রায় ১৩ হাজার ৯৯৮ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে। দিনাজপুরে সরিষা চাষের সাথেই একই সাথে চাষ করা হচ্ছে মৌমাছি চাষ। এতে করে সরিষা চাষিরা অধিক লাভবান হচ্ছেন। 

এএস/এডিবি