ন্যাভিগেশন মেনু

সরিষার হলুদ ফুলে দুলছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন


হেমন্তের ফসল তুলতে না তুলতেই শীতের আগমনে সরিষার হলুদ ফুলে ভরে গেছে সাতক্ষীরার মাঠ। শীতকালে বাংলাদেশের গায়ে জড়ায় হলুদ চাদর। সরিষার হলুদ ফুলে ফুলে ভরে গেছে মাঠের পর মাঠ। যেদিকে তাকানো হয় শুধুই হলুদ আর হলুদ। একবার তাকালে চোখ ফেরানো যায় না। যেন কেউ বাসন্তী রঙ’র শাড়ি গায়ে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এ রূপ চিরায়ত রূপসী বাংলার। গ্রাম বাংলার দিগন্ত রেখায় মিলেছে হলুদের মেলা।

হেমন্তের শেষে শীতের প্রারম্ভে দুই ঋতুর মাঝ বরাবর বৈচিত্রময় স্নিগ্ধ সকালে শিশির ভেজা হলুদ বর্ণের সরিয়ার ফুলের ডগায় ফোঁটা ফোঁটা শিশির বিন্দু। হলুদের চাদরে ঢাকা বিস্তৃত ফসলের মাঠ। চির সবুজের বুকে এ যেনো কাচা হলুদের আলপনা।

ঋতুচক্রের এমন নতুন রূপকে কবি সাহিত্যিকরা নানাভাবে বর্ণনা করেছেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের কথায় ‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হইতে দুই পা ফেলিয়া, একটি ঘাসের শিষের উপর একটি শিশির বিন্দু', যুগে যুগে যথার্থই৷

২০২০-২১ মৌসুমে সাতক্ষীরা জেলার ১১ হাজার ৫০০ হেঃ জমিতে সরিষা আবাদে,সরিষা ফুলের হলুদের সমারোহে সজ্জিত এবং সরিষার প্রতিটি ফুলের ন্যায় দুলছে ১ লক্ষ ৮০ হাজার ৫৪০ জন কৃষকের মুখে রঙিন স্বপ্নের হাসি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সাতক্ষীরার সূত্র অনুযায়ী, চলতি রবি মৌসুমে হেক্টর প্রতি ১.৩৫ মেঃটন ফলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে জেলার সাত উপজেলায় ১১ হাজার ৫০০ হেঃ জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদরে ৩ হাজার ৭০০ হেঃ জমিতে ৪ হাজার ৯৯৫ মেঃটন, কলারোয়ায় ৫ হাজার ৫১০ হেঃ জমিতে ৭ হাজার ৪৩৯ মেঃটন, তালায় ৪৬০ হেঃ জমিতে ৬২১ মেঃটন, দেবহাটায় ১ হাজার ১৩০ হেঃ জমিতে ১ হাজার ৫২৫ মেঃটন, কালিগঞ্জে ৪৫০ হেঃ জমিতে ৬০৮ মেঃটন , আশাশুনি ১৯০ হেঃ জমিতে ২৫৬ মেঃটন ও শ্যামনগর ৬০ হেঃ জমিতে ৮১ মেঃটন। ১১ হাজার ৫০০ হেঃ জমিতে সরিষা আবাদে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ হাজার ৫২৫ মেঃটন।

তবে জেলার সাত উপজেলার মধ্যে সাতক্ষীরা সদর, কলারোয়া ও তালা উপজেলার কৃষকরা কম সময়ে অধিক লাভবান ও উচ্ছ ফলনশীল বীজ পাওয়ায় সরিষা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।

সরজমিনে সাতক্ষীরা সদর উপজেলাসহ, কলারোয়া, তালা ও দেবহাটা উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দেখা যায়, কৃষকদের আবাদকৃত জাতের মধ্যে বারি-১৪,১৫,১৭ বিনা-৪,৯ ও স্থানীয় জাত উল্লেখ যোগ্য। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাদ হচ্ছে বারি-১৪ ও ১৫ জাতের সরিষার। এ মৌসুমে কৃষকরা বিঘা প্রতি ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা খরচে  ৭ থেকে ৮ মন সরিষা ঘরে তুলতে পারবে। যার বাজার মুল্য ১১ থেকে ১২ হাজার টাকা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (খামারবাড়ি) সাতক্ষীরা’র উপ-পরিচালক মোঃ নুরুল ইসলাম জানান, এবছর জেলায় সরিষা আবাদে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছিল ১১ হাজার ৫শ’ হেঃ জমি। তবে অল্প সময়ে উচ্চ ফলনশীল সরিষা চাষে অধিক ফলন পাওয়ায় কৃষকরা সরিষা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ফলে দিনে দিনে লাভজনক ফসল হিসেবে সরিষার কদর বেড়েছে জেলার কৃষকদের কাছে। অধিক আগ্রহে  সরিষা আবাদের ফলে, আমাদের নির্ধারিত আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে।

সিবি/ওআ