ন্যাভিগেশন মেনু

সিদ্ধিরগঞ্জে মাদ্রাসাছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা, শিক্ষকসহ গ্রেপ্তার ৭


নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে এক মাদরাসা ছাত্রকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার পর আত্মহত্যা বলে পরিবারের কাছে মরদেহ বুঝিয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় মাদরাসার শিক্ষক ও নিহতের বন্ধুসহ ৭জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

শুক্রবার (১২ মার্চ) সকালে নিহত ছাত্রের বাবা বাদী হয়ে সিদ্ধারগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করলে দুপুরে পুলিশ রসুলবাগ মাঝিপাড়ার রওজাতুল উলুম মাদরাসা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে। পরে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করে শিক্ষকদের আদালতে পাঠানো হয়।

নিহত মাদরাসাছাত্র রূপগঞ্জ উপজেলার শান্তিনগর এলাকার জামাল হোসেনের ছেলে সাব্বির হোসেন (১৪)। সে রওজাতুল উলুম মাদরাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো - মাদ্রাসার শিক্ষক শওকত হোসেন সুমন (২৬), জোবায়ের আহম্মেদ (২৬) ও আব্দুল আজিজ (৪২) ও সাব্বিরের ৪ সহপাঠী।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) এ এস এম শাহীন বলেন, ‘১০ মার্চ ১১টার দিকে মাদরাসার শিক্ষক জোবায়ের নিহতের পরিবারকে জানায় সাব্বির মাদরাসার ছাদে উঠার সিঁড়ির পাশে ফাঁকা রডের সাথে গলায় গামছা দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। পরে স্বজনরা পুলিশে কোন অভিযোগ না দিয়ে মাদরাসা থেকে মরদেহ নিয়ে রূপগঞ্জে নিজ এলাকায় দাফন করে। কিন্তু দাফনের আগে গোসলের সময় নিহতের শরীরে তারা একাধিক আঘাতের চিহ্ন দেখতে পায়।

তাই নিহতের বাবা অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন। পরে ৩ মাদ্রাসার শিক্ষক ও নিহতের ৪ বন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান বলেন, ‘অভিযোগে বলা হয়েছে নিহত শিক্ষার্থীকে মারধর করে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে প্রচার করা হয়েছে। বিষয়টি ময়নাতদন্তের পরই বলা যাবে এটা হত্যা না আত্মহত্যা। কবর থেকে লাশ তোলা হবে। তিন শিক্ষককে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। আর ৪ বন্ধুকে কিশোর আইনে পাঠানো হয়েছে।’

নিহত সাব্বির হোসেনের বাবা জামাল হোসেন বলেন, ‘১০ মার্চ সকাল সোয়া ৯টায় আমার ছেলে মাদরাসার শিক্ষক জোবাইয়েরের মোবাইল থেকে তার মাকে ফোন দেয়। ওইসময় সে সুস্থ ছিলো। তার মাকে বিভিন্ন বিষয়ে বলেছে। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ফোন দিয়ে ওর মাকে শিক্ষক জোবায়ের বলে, সাব্বির আত্মহত্যা করছে দ্রুত মাদ্রাসায় আসেন।’

তিনি বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা দ্রুত মাদ্রাসায় যাই। সেখানে যাওয়ার পর আমার সন্তানের লাশ দেখতে দেওয়া হয়নি। তার আগে (মাদ্রাসার শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটি) আমাদের একটি আলাদা রুমে নিয়ে বসিয়ে বলে, আগে কথা শুনেন পরে লাশ পাবেন।’

তখন তারা বলেন, ‘আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তোমরা যদি নিজের ছেলের লাশ নিয়ে যেতে চাও এবং নিজেরা ফাঁসতে না চাও তোমরা একে গোপনে নিয়ে যাও আর গোপনে আলাদাভাবে মাটি দিয়ে দাও। এমন কোনো কিছু করবা না যাতে এ মাদরাসার ক্ষতি বা বদনাম না হয়।

এ কথা বলায় আমি ও আমার স্ত্রী ভয় পেয়ে যাই। এরপর তাদের কথায় রাজি হয়ে কোন অভিযোগ না করেই মরদেহ দাফন করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘মরদেহ এনে বাড়িতে গোসল করানোর সময় আমরা, মহল্লাবাসীসহ সবাই দেখতে পাই। সাব্বিরের মাথায়, চোখের উপরে কপালে, ঠোঁটে ,দাড়ির নিচে ও গলায় আঘাতের চিহ্ন। আর পায়ে মারধরের চিহ্ন এবং শরীরটা থেথলানো। তখন এলাকাবাসী বলতে থাকে এটা আত্মহত্যা না তাকে হত্যা করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেকে পিটিয়ে কষ্ট দিয়ে মারা হয়েছে। তারা আমার ছেলেকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’

রওজাতুল উলুম মাদরাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন। তার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তার স্ত্রী পরিচয়ে বলেন, ‘তিনি এখন ঘুমিয়ে আছেন। এখন ডাক দেওয়া যাবে না। এ বলে ফোন রেখে দেন।’

এম এইচ এস/এমআইআর/এডিবি