ন্যাভিগেশন মেনু

২০২৪ সালে স্মার্ট বন্দর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে চট্টগ্রাম বন্দর: চবক চেয়ারম্যান


চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বলেছেন, চট্টগ্রাম বন্দর ৩ মিলিয়ন কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ক্লাবে প্রবেশ করেছে। চলতি ২০২৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর ৩০ লক্ষ ৪ হাজার ৫০৫ টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করেছে। যা বছরের শেষে চট্টগ্রাম বন্দর প্রায় ৩.১ মিলিয়ন টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হবে, এটি গত বছরের প্রায় সমান। ২০২৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর কার্গো হ্যান্ডলিং ১১ কোটি ৮৩ লক্ষ ৪৫ হাজার ৫৭৬ মেট্রিক টন, যা বছর শেষে প্রায় ১২ কোটি মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে। এতে পূর্বের কার্গো হ্যান্ডলিং রেকর্ড অতিক্রম করবে।

বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ২০২৩ সালের সাফল্য ও ২০২৪ সালের কর্মপরিকল্পনা উপলক্ষে বন্দর ভবনে সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, কার্গো ও কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয় মূলত বাংলাদেশেরই অভ্যন্তরীন চাহিদা ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের প্রতিফলন। বিশ্ব অর্থনীতির এই প্রতিকূল অবস্থা সত্ত্বেও চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে কার্গো ও কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। গত তিন বছরে কোভিড-১৯ অতিমারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন, ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ প্রভাবের কারণে ২০২৩ সালের বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি অত্যন্ত মন্থর। World Economic Outlook (WEO), আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ২০২২ সালের ৩.৪ শতাংশ হতে ২০২৩ সালে ২.৮ শতাংশে নেমে আসবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল। বিশ্বব্যাপী দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং যুদ্ধের প্রভাবে সরবরাহ চেইনে বাধার (supply chain disruption) ফলে বিশ্ব অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের মন্থরতা পরিলক্ষিত হলেও বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের কোন প্রভাব পড়েনি। বরং বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে।

বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, বে-টার্মিনালে চারটি টার্মিনাল। এতে লিকুইট বাল্ব টার্মিনাল হবে। দুই মাসের বেশি তেলের রিজার্ভ হবে। এতে পেট্রোকেমিক্যাল বাড়বে। বে-টামিনালে বড় পরিসরে বিনিয়োগ হবে। বে-টার্মিনাল হলে বন্দরের আয় অনেকগুণ বাড়বে। এটি বিনিয়োগ বিদেশি অনেক প্রতিষ্ঠান আগ্রহী। চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে যৌথ উদ্যোগে টার্মিনাল নির্মাণের জন্য আবুধাবি পোর্ট গ্রুপ (এডি পোর্টস) ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব দাখিল করেছে। বে-টার্মিনালের কন্টেইনার টার্মিনাল-১ ও ২ নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য পিএসএ সিংগাপুর ও ডিপি ওয়ার্ল্ড সাথে আগামী বছরে চুক্তি স্বাক্ষর হবে বলে আশা করছি।

তিনি বলেন, দেশের জ্বালানী নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বে-টার্মিনালের ৪র্থ টার্মিনাল হিসেবে গ্যাস ও অয়েল টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে টার্মিনাল নির্মাণের জন্য একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ৩.৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব করেছে। লালদিয়া কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ডেনমার্কস্থ বিশ্ব বিখ্যাত টার্মিনাল অপারেটর এপিএম টার্মিনালস প্রস্তাব দিয়েছে যা বর্তমানে পিপিপি প্রকল্প হিসেবে প্রক্রিয়াধীন। ২০২৪ সালের ৩ জানুয়ারী বাংলাদেশ-ডেনমার্ক যৌথ প্ল্যাটফর্ম সভায় প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হবে। এ টার্মিনাল নির্মাণের কাজও আগামী বছর শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে।

এম সোহায়েল বলেন, ২০২৪ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে ৮ বিলিয়ন বিনিয়োগ হবে। অন্যদিকে বে-টার্মিনাল মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণকাজ ২০২৪ সালের মাঝামাঝিতে শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে। একটি দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি হচ্ছে দক্ষ বন্দর ব্যবস্থাপনা। আধুনিক বিশ্বে দক্ষ বন্দর ব্যবস্থাপনায় সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত দক্ষতার সাথে উক্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল অপারেশন ও ব্যবস্থাপনায় সৌদি আরব ভিত্তিক বেসরকারি গ্লোবাল টার্মিনাল অপারেটর আরএসজিটিআই সাথে সম্পৃক্ত করেছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও আরএসজিটিআই মধ্য গত ৬ ডিসেম্বর একটি কনসেশন চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের বন্দর অপারেশন ও ব্যবস্থাপনায় নতুন দিগন্তের উন্মোচন হয়েছে। এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন হবে আশা করছি। মধ্যপ্রাচ্যসহ দুরপ্রাচ্যের দেশগুলি তাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশকে একটি সম্ভাবনার দেশ হিসেবে বিবেচনা করে। কনসেশন চুক্তি স্বাক্ষরের সময় সৌদি আরবের বিনিয়োগ মন্ত্রী ৪০ জন বাণিজ্য প্রতিনিধিসহ দুইটি চার্টার্ড বিমানে বাংলাদেশে এসেছিলেন। সৌদি বাণিজ্য প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে বিভিন্ন সেক্টরে বিনিয়োগের আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন।

তিনি বলেন, আগামী বছর মাতারবাড়ি বন্দরের কাজও শুরু হবে। এটি কয়েকবছর পর আলাদা মাতারবাড়ি বন্দর কর্তৃপক্ষ হবে। প্রধানমন্ত্রীর ফাস্ট ট্র্যাকভূক্ত মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে ২০২৪ সালের মার্চ-এপ্রিল এ নির্মাণ শুরু হতে পারে।
এছাড়াও বিদেশিরা চ্যালেঞ্জ নিয়ে বন্দরের টার্মিনালগুলো নিদ্দিষ্ট সময়ের জন্য অপারেটর হিসেবে ব্যবহার করবে এবং সেটার জন্য তারা বন্দর কর্তৃপক্ষকে অর্থ প্রদান করবে। কিন্তু বন্দরের অধীনে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে। মেয়াদ শেষে এসব টার্মিনাল চট্টগ্রাম বন্দরে কাছে চলে আসবে। দেশের তিনটা বন্দর মিলে ১৬ মিলিয়ন টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হবে, যা চট্টগ্রাম বন্দরে ১২ মিলিয়ন হবে।একসময় দেশের জিডিপিতে মাতারবাড়ি ও বে-টার্মিনাল অবদান রাখবে।

অনুষ্ঠানে বন্দরের সদস্যবৃন্দ, বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক, মাতারবাড়ী সমুদ্র বন্দরের প্রকল্প পরিচালক, বন্দরের ডেপুটি কনজারভেটর ক্যাপ্টেন ফরিদুল আলম, সিবিএ নেতৃবৃন্দ, ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকগন উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরের জাহাজ সেবা এবং মালামাল হ্যান্ডলিং খাত থেকে মোট রাজস্ব আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ । সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ট্যারিফ অনুযায়ী যাবতীয় সেবা প্রদানের বিপরীতে মাশুল আদায় করে থাকে। ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের জুলাই-ডিসেম্বরের তুলনায় ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের একই সময়ে রাজস্ব আয় ৭% বৃদ্ধি, রাজস্ব ব্যয় প্রায় ১০% হ্রাস পেয়েছে এবং রাজস্ব উদ্বৃত্ত প্রায় ২২% বৃদ্ধি পেয়েছে।