ন্যাভিগেশন মেনু

উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় মেটাতে চট্টগ্রাম ওয়াসা পানির দাম দ্বিগুণ বাড়ানোর প্রস্তাব


চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে তীব্র গরমে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি সরবরাহ কমেছে। একদিকে পানিতে দেখা দিয়েছে মারাত্মক লবণাক্ততা। ফলে সুপেয় পানি পাচ্ছে না নগরীর অনেক বাসিন্দা। এতে চরম দুর্ভোগে আছে চট্টগ্রাম ওয়াসার গ্রাহকরা। এর মধ্যে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব মানতে নারাজ গ্রাহকরা।

এদিকে আবাসিকে পানির দাম ৩০ শতাংশ এবং অনাবাসিকে ৫০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিচ্ছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। গত ১৪ মার্চ চট্টগ্রাম ওয়াসার অনুষ্ঠিত ৭৯তম বোর্ড সভায় পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব আনা হয়। এতে ৬১ দশমিক ৩৪ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়। সভায় পানির দাম বৃদ্ধির বিষয়ে বোর্ড থেকে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। চট্টগ্রাম ওয়াসার বোর্ড সদস্য সিদ্ধার্থ বড়ুয়াকে আহ্বায়ক করা হয়।

বর্তমানে বাসাবাড়িতে এক ইউনিট (এক হাজার লিটার) পানির দাম গুনতে হচ্ছে ১৮ টাকা করে। নতুন প্রস্তাব করা হচ্ছে ২৩ টাকা ৪০ পয়সা করে। অনাবাসিকে (বাণিজ্যিক) প্রতি ইউনিট পানির বর্তমান দাম দিতে হচ্ছে ৩৭ টাকা করে। নতুন প্রস্তাবে ৫৫ টাকা ৫০ পয়সা করে।

গত ১৬ এপ্রিল বোর্ডের ৮০তম সভায় কমিটি প্রতিবেদন পেশ করে। এতে আবাসিকে পানির দাম ৩০ শতাংশ এবং অনাবাসিকে ৫০ শতাংশ বৃদ্ধিও সুপারিশ করা হয়।

চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, ‘চট্টগ্রাম ওয়াসা চাইলে প্রতি বছর ৫ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়াতে পারে। এবার ঘাটতি মেটাতে সমন্বয় করতে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবটি শিগগিরই মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, ‘পানির দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। আবাসিকে ৩০ শতাংশ এবং অনাবাসিকে ৫০ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়। এ প্রস্তাবে বোর্ড সদস্যদের সই বাকি আছে। দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে যাবে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর এ প্রস্তাব যাবে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে।’

চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া, অলংকারসহ নগরীর অনেক এলাকায় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারেনি। অনেক এলাকায় পানি থাকলেও তা লবণাক্ততা থাকায় ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

নগরীর বাকলিয়া এলাকার বাসিন্দা জয়শ্রী নন্দী বলেন, ‘ওয়াসার পানি অনেকসময় খুবই খারাপ অবস্থা। যা খাওয়া ও ব্যবহার জন্য অনুপযোগী। সুপেয় পানির নিশ্চিতে ওয়াসা কোনকিছু করতে পারেনি। প্রতিষ্ঠানটি অনিয়ম-দুর্নীতিতে ডুবেছে। এ এদিকে পানির সিস্টেম লস ৩০ শতাংশের বেশি। সিস্টেম লসের নামে এসব পানি নিয়ে চলছে বাণিজ্য।’

ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, ‘লবণাক্ততার কারণে ওয়াসার পানি সরবরাহ কিছুটা কমেছে। বর্তমানে দৈনিক ৪২ থেকে ৪৪ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে চাহিদা আছে ৫৫ কোটি লিটারের মতো। ঘাটতি পানি রেশনিং করে সরবরাহ করা হচ্ছে।’

উল্লেখ্য, বর্তমানে চট্টগ্রাম ওয়াসায় মোট পানির সংযোগ আছে ৮৮ হাজার ৭৭১টি। এর মধ্যে ৮২ হাজার ৬৪২টি আবাসিক, অনাবাসিক সংযোগ আছে ৬ হাজার ১২৯টি। সংযোগের মধ্যে ৯১ শতাংশ পানির ব্যবহার হচ্ছে আবাসিকে এবং ৯ শতাংশ পানির ব্যবহার হচ্ছে অনাবাসিকে।

গত ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর আবাসিকে ১৮ টাকা এবং অনাবাসিকে ৩৭ টাকা হারে নতুন করে নির্ধারিত হয় চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির দাম। বর্তমানে প্রতি হাজার লিটার পানির (আবাসিক-অনাবাসিক) বিক্রয়মূল্য পড়ছে ১৯ দশমিক ৭১ টাকা করে।

ওয়াসা সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম ওয়াসার ৭৯তম বোর্ড সভায় পানির দাম বাড়ানোর বিষয়টি তুলে ধরে হয়। রাঙ্গুনিয়া অবস্থিত শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার, ফেজ-২ এর খরচ বিবরণী অনুযায়ী বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল, বেতনভাতা ও চট্টগ্রাম ওয়াসার আওতাধীন বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সুদাসলসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে প্রতি হাজার লিটার পানির উৎপাদন ব্যয় হচ্ছে ৩১ দশমিক ৮০ টাকা। এতে প্রতি হাজার লিটার পানিতে ১২ দশমিক ৯ টাকা করে ঘাটতি হচ্ছে। এসব ঘাটতি পূরণ করতে পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। চট্টগ্রাম ওয়াসার আওতাধীন বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে নেওয়া সুদাসলসহ মোট ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ৫৫৮ কোটি ৩৯ লাখ ৭৯ হাজার ২০৩ টাকা। আগামী অর্থবছর থেকে এসব ঋণের টাকা শোধ করতে হবে ওয়াসাকে।