ন্যাভিগেশন মেনু

চট্টগ্রামে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো পেল জেলা প্রশাসকের আর্থিক সহায়তা


চট্টগ্রামের এয়াকুব নগরের টেকপাড়া বস্তিতে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া ঘরের এক পাশে বসে কাঁদছিলেন স্বামী হারা সুগন্ধা দাশ। অসুস্থ মেয়ে অর্পিতা দাশের অস্ত্রোপচারের জন্য রাখা ৫০ হাজার টাকা আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এসব টাকা কিভাবে পুনরায় যোগাড় করবেন সে চিন্তায় আত্মহারা মা সুগন্ধা দাশ। তাদের এমন অসহায়ত্বের সংবাদ পান চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।

সোমবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরের দিকে বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগে।

মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ডের সেই টেক পাড়া ও এয়াকুব নগরের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পরিদর্শন করেন। এসময় চিকিৎসার ৫০ হাজার টাকা অর্পিতা দাশের মায়ের হাতে তুলে দেন জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।

এদিকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে সবকিছু পুড়ে নিঃস্ব হরি কমল দাশের পরিবার। আগুনে পুড়ে যায় মেয়ে অঙ্কিতা দাশের সব বই ও ফরম ফিলাপের টাকা। অঙ্কিতা চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থী।

গণমাধ্যমে অঙ্কিতার বই পুড়ে যাওয়ার খবর প্রকাশিত হবার পর অনেকেই তাকে বই দেওয়ার জন্য ইচ্ছে পোষণ করেন।

পরে তার এইচএসসির ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের সবগুলো বই কিনে দিয়েছেন কোতোয়ালি থানা ছাত্রলীগের সভাপতি অনিন্দ্য দেব। ফরম ফিলাপের জন্য ১০ হাজার টাকা সহায়তা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

তিনি বলেন, নগরের বন্দর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মেয়ের অস্ত্রোপচারের জন্য অনেক কষ্টে জমিয়ে রাখা ৫০ হাজার টাকা আগুনে পুড়ে যায়। আমরা গণমাধ্যমে খবর দেখার পর এই মাকে মেয়ের চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা তুলে দিয়েছি। আমি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা বলব, যাতে কম খরচে কীভাবে অর্পিতার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায়।

সুগন্ধা দাশ বলেন, আমার অনেক কষ্টের টাকা ছিল, যা আগুনে পুড়ে যায়। মেয়ের অস্ত্রোপচারের জন্য টাকাটা জমিয়েছিলাম। এখন আমাকে ডিসি স্যার পুড়ে যাওয়া ৫০ হাজার টাকা সহায়তা করেছেন। সেজন্য প্রধানমন্ত্রী ও ডিসি স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা।

গত ২০১৭ সালে স্বামী পরিমল দাশকে হারান সুগন্ধা। এরপর ছেলে ও মেয়ের কথা ভেবে আর বিয়ে করেননি এই নারী। বড় ছেলের বয়স মাত্রই ২০। তিনি এখনো কিছু করেন না। ১৬ বছরের মেয়ে অর্পিতা নবম শ্রেণিতে পড়ছে পাথরঘাটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। বন্দর হাসপাতালে দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করা মায়ের আয়ে চলে সংসার। অর্পিতা অসুস্থ হয়ে পড়ায় পর বিপাকে পড়েছিলেন মা। তবে জেলা প্রশাসকের সহায়তা পাওয়ার পর তার সেই দুশ্চিন্তা আর নেই।

তাছাড়া আগুনে পুড়ে গেছে অঙ্কিতার শিক্ষা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সব কাগজপত্র ও ফরম ফিলাপের টাকা পুড়ে গেছে। এতে পুড়েছে তার বড় বোন কুয়াশা দাশের জন্য কেনা বিয়ের গহনা। আগুনে ছাই হয়েছে বিয়ের জন্য জমানো টাকা। আগুনের ভয়াবহতা থেকে বের করতে পারেননি কোন কিছুই। জেলা প্রশাসক থেকে আর্থিক সাহায্য ও বই পেয়ে খুশিতে কেঁদে ফেলেন অঙ্কিতা। তিনি বলেন, আমি এটা কল্পনা করিনি এত অল্প সময়ে আমার বই ও ফরম ফিলাপের টাকা যোগাড় হবে। আগুন পুড়ে যাবার পর আমার পরিবার নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। সংবাদ প্রকাশের পর আমার পরিবারের সঙ্গে অনেকেই যোগাযোগ করেছেন। অনেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ সহযোগিতা ও আন্তরিকতা কখনোই ভুলবার নয়। আমি এবং আমার পরিবার তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।