ন্যাভিগেশন মেনু

চট্টগ্রামে চিকিৎসকদের ধর্মঘটে অসহায় রোগীরা, বন্ধ চিকিৎসাসেবা ও টেস্ট


চট্টগ্রামে বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক রক্তিম দাশ ও মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক রিয়াজ উদ্দিন শিবলুর উপর হামলার প্রতিবাদে চিকিৎসকদের ধর্মঘটে চিকিৎসা সেবা বন্ধ। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন চিকিৎসা বা বিভিন্ন টেস্ট করতে আসা রোগীরা দূর্ভোগে।

এই দুই চিকিৎসকের ওপর হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকাল ৬টা থেকে আগামীকাল বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকাল ৬টা পর্যন্ত চিকিৎসাসেবা দিবে না চিকিৎসকরা। এতে নতুন কোন রোগীকে ভর্তি বা চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে না বেসরকারি হাসপাতালগুলো। একই সাথে সকল ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা সেবাও বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে রোগীরা চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।

গত ১৮ এপ্রিল বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, চট্টগ্রাম শাখা, বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান সমিতি, বাংলাদেশ শিশু চিকিৎসক সমিতি, চট্টগ্রাম ও অন্যান্য চিকিৎসক সংগঠনের যৌথ সভায় এই সিদ্ধান্তে নেওয়া হয়েছে।

নগরীর প্রবর্তক মোড়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার এপিক হেলথকেয়ারে সকালে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ পাওয়া যায়। ডায়াগনস্টিক সেবা না দেওয়ার বিষয়টি প্রবেশপথে ব্যানারে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে সকালে দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা এ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে এসে অপেক্ষার পর সেবা না নিয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে রোগীদের। এতে অনেক জটিল রোগী ভোগান্তিতে পড়ছেন।

এপিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কক্সবাজার থেকে পরীক্ষা করাতে আছমা বেগম বলেন, আমরা অনেক দূর থেকে জানতে পারছি, আজকে কোন পরীক্ষা হবে না। আমি টেস্টগুলো গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মানুষকে চিকিৎসা সেবা এভাবে বঞ্চিক করা ঠিক নই। দাবি আদায়ের জন্য অনেক পন্থা থাকতে পারে।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য এপিক হেলথকেয়ারের কোনও কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। এসময় প্রবেশপথে থাকা কর্মচারীরা বলেন, কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আজ পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ রেখেছি। লোকজন এলে তাদেরকে বিষয়টি বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করছি।

বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. মোহাম্মদ ফয়সল ইকবাল চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে সোমবার রাতে বলা হয়, পটিয়া জেনারেল হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. রক্তিম দাশের ওপর হামলাকারী ছৈয়দ চেয়ারম্যানসহ অন্য আসামিদের গ্রেফতার ও চট্টগ্রাম মেডিক্যাল সেন্টারে এনআইসিইউতে কর্তব্যরত শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রিয়াজ উদ্দিন শিবলুর ওপর হামলার মূল আসামিসহ জামিনপ্রাপ্তদের জামিন বাতিলের দাবি ও অন্য আসামিদের গ্রেফতারের দাবিতে গত ১৭ এপ্রিল বিএমএ চট্টগ্রাম শাখা, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ চট্টগ্রাম শাখা, বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান সমিতি, বাংলাদেশ শিশু চিকিৎসক সমিতি ও অন্যান্য চিকিৎসক সংগঠনের যৌথসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিভিন্ন কর্মসূচি দেয়।

কর্মসূচির মধ্যে আছে- মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সব প্রকার প্রাইভেট প্র্যাকটিস (ব্যক্তিগত চেম্বার, হাসপাতালে নতুন রোগী ভর্তি, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নতুন রোগীর সেবা) বন্ধ থাকবে। বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকে আগের ভর্তি রোগীর চিকিৎসা সেবা চলবে। ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পূর্বের রোগীর রিপোর্ট ডেলিভারি দেওয়া যাবে, কোনও নতুন রোগী এন্ট্রি বা সেবা দেওয়া যাবে না।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে একই দাবিতে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সামনে চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠনের অংশগ্রহণে মানববন্ধন পালন করা হয়।

উল্লেখ্য, গত ১০ এপ্রিল পটিয়ায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত এক রোগীকে চিকিৎসা দিতে দেরি করার অভিযোগে ডা. রক্তিম দাশকে মারধর করা হয়। উক্ত ঘটনায় পরেরদিন রাতে হাসপাতালটির নির্বাহী পরিচালক এস এইচ খাদেমী বাদী হয়ে পটিয়া থানায় মামলা করেন। মামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ সৈয়দসহ ৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ১০-১২ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
অন্যদিকে গত ১৪ এপ্রিল নগরের বেসরকারি হাসপাতাল মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক শিশুর মৃত্যুর পর রিয়াজ উদ্দিন শিবলু নামে এক চিকিৎসককে মারধর করে রোগীর স্বজনেরা। এ ঘটনায় রাতে হাসপাতালটির ব্যবস্থাপক ইয়াসিন আরাফাত বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। মামলায় একজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ৭–৮ জনকে আসামি করা হয়।