ন্যাভিগেশন মেনু

দিনাজপুরে ইটভাটার ধোয়ায় পুড়ছে ফসল, নিঃস্ব হচ্ছে কৃষক


দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার ৯নং হামিদপুর ইউনিয়নে বৈধ অবৈধ মিলিয়ে ১৯টি ইটভাটা। ১২.১৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই ইউনিয়নে প্রায় ৩২ হাজার ৫০০ লোকের বসবাস। এ ছাড়াও ইউনিয়নে রয়েছে একটি কলেজ, তিনটি মাদরাসা, একটি নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৮টি এতিমখানা।

এই ১৯টি ইটভাটার মধ্যে ছয়টি ইটভাটার বিষাক্ত ধোয়ায় পুড়ে গেছে এলাকার ধান, আম, লিচুসহ ৩০০ একর জমির ফসল। ফসল নষ্ট হওয়ায় নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে ভাটা এলাকাগুলোর আশেপাশের প্রায় তিনশ' কৃষক। বারবার প্রশাসনের সহায়তা চেয়েও সুরাহা হয়নি।

জানা যায়, ওই ইউনিয়নের দক্ষিণ পলাশবাড়ী ও বাঁশপুকুর মৌজার অর্ণব ব্রিকস, সোহাগী ব্রিকস, এ কে ব্রিকস, একতা ব্রিকস, এ আর বি ব্রিকস ও জোহরা ব্রিকস নামের এই ছয়টি ইটভাটা ১৩ ও ১৫ মে ভোরে বিষাক্ত ধোয়া ছাড়ে। এতে ওই দুই মৌজার ১০০ একর জমির ৫০টি আম বাগান, লিচু বাগান, বাঁশ বাগান, কলা, নারিকেল, জলপাই, জাম ও জলপাইসহ প্রায় ৩০ প্রকার ফসলের মাঠ নষ্ট হয়ে যায়। একইসাথে ২০০ একর জমির ধান নষ্ট হয়।

কৃষকদের ভাষ্য অনুযায়ী, এতে প্রায় দুই কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পার্বতীপুর উপজেলার ১২.১৯ বর্গকিলোমিটারের ৯নং হামিদপুর একটি ইউনিয়নেই রয়েছে ১৯টি ইটভাটা। যার বেশির ভাগ ইটভাটাই অবৈধ। দক্ষিণ পলাশবাড়ী ও বাঁশপুকুর মৌজার ৬টি ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসের ফলে ওই এলাকার ধানের গাছ পুড়ে যাওয়াসহ বাড়ির চারপাশের আম-কাঁঠাল ও অন্যান্য গাছের পাতা কুঁকড়ে গেছে। পুড়ে যাওয়া ফলগুলো মাটিতে ঝরে পড়ছে। ৫০টি আমবাগানের আমের নিচের অংশ পঁচে মাটিতে পড়ে যাচ্ছে। বাগানের আমগুলো বর্তমানে বিক্রির অনুপযোগী। ফলে ঘরে তোলার মতো কোন ফসলই নেই এই এলাকার কৃষকের।

দক্ষিণ পলাশবাড়ী ও বাঁশপুকুর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক নূর নবি, আরিফুল ইসলাম, দেলোয়ার হোসেন ও মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, হামিদপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ পলাশবাড়ী ও বাঁশপুকুর মৌজার ৬টি ইটভাটা গত ১৩ ও ১৫ মে ভোরে বিষাক্ত ধোয়া ছাড়ে। সেই ধোয়া ছাড়ার পর থেকেই ধীরে ধীরে এলাকার ধান, আম, লিচু, কাঠাল, বাঁশের ঝাড়, তেজপাতা, ইউক্যালিপটাস, কলা, সবজি, আমড়া, জলপাই, সুপারি, জাম্বুরা, পেয়ারা, লেবুসহ ৩০ প্রকার বিভিন্ন ফসল ও ফলের গাছ পুড়তে শুরু করে। ফলে কোনো ফসল ঘরে তোলার সাধ্য নেই এলাকার কৃষকদের।

এলাকার আমগুলোতে সবেমাত্র আটি জমতে শুরু করেছে। অথচ আমগুলোর নিচের দিকে কালো হয়ে পচন ধরছে।

তারা আরও বলেন, ওই ইটভাটা মালিকের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তারা আমাদেরকে পাত্তাই দিচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে গত ২৩ মে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর একটি স্বারকলিপি পেশ করা হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও ক্ষেত মালিকের পক্ষে স্মারকলিপি পেশকারী আজিজুর রহমান, মাসুদ রানা, কাশেম আলী ও রিয়াজুল মন্ডল বলেন, 'ইটভাটা মালিকরা এখনো পুরোনো পদ্ধতি (ফিস) ব্যবহার করে ভাটা চালাচ্ছেন। এ ভাটাগুলোর বিষাক্ত গ্যাস দিয়ে আমাদের বিভিন্ন ঘরে তোলামুখী ফসল পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। ইটভাটা মালিকরা বিভিন্ন কায়দায় প্রশাসনের কাছে করা অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে। আমরা এর স্থায়ী প্রতিকার চাই। যাতে আগামীতে ভাটার কারণে কোন ফসল নষ্ট না হয়।'

হামিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাদিকুল ইসলাম বলেন, 'ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসের ফলে এই এলাকার কৃষকদের ক্ষতি হয়েছে। তারা আমার কাছে এসেছিল। আমি তাদের ইটভাটা কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার জন্য বলেছি। আমাদের এই এলাকার অনেক কৃষকই বর্গাচাষী। তারা অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষ করে। এখন তাদের বেঁচে থাকার উপায় পর্যন্ত নেই।'

এ ব্যাপারে সোহাগী ব্রিকস-এর মালিক মঞ্জুরুর ইসলাম বলেন, 'ওই এলাকাগুলোতে বাগান কিংবা বসতি গড়ে ওঠার পূর্বেই ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। ইটভাটার গ্যাসের কারণে আম বা ধানের ক্ষতি হয়নি।'

পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাসিদ কায়সার রিয়াদ বলেন, গত ২৩ মে তিনশ কৃষকের স্বাক্ষরিত একটি স্মারকলিপি পেয়েছি। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানোনে হয়েছে। অভিযুক্ত ইটভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এএস/এস এ/এডিবি/