ন্যাভিগেশন মেনু

বরই বেচে কোটি টাকা আয় করবেন সাখাওয়াত হাবিব


নওগাঁর সীমান্তবর্তী সাপাহার উপজেলা ইতোমধ্যে কৃষিপণ্য নির্ভরশীল এলাকা হিসেবে সারাদেশে সুনাম অর্জন করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় অন্যের জমি লিজ নিয়ে মিশ্র ফল বাগান তৈরি করে বেশ কয়েকজন সফলতা পেয়েছেন। তবে তাদের অন্যতম উপজেলার ফুটকইল গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা সাখাওয়াত হাবিব।

তার আম ও বরই বাগানে কাজ করছে লাকার শতাধিক পরিবার। শুধু সাখোয়াত নয়; এ রকম শতাধিক কৃষক মিশ্র ফলবাগান করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, তার আম গাছের সারির ফাঁকে ফাঁকে চারফুট উচ্চতার একেকটি গাছ। ডালে থোকায় থোকায় ধরে আছে বলসুন্দরী বরই। পরিপক্ব বরইগুলো দেখতে অনেকটা লাল ও সবুজাভ আপেলের মতো।

১১২ বিঘার বিশাল এই বাগানে এবারই প্রথম বরই ধরেছে। ইতোমধ্যেই অর্ধেক বরই বিক্রি হয়েছে। প্রতিদিন ১০০ মণ বরই নামছে তার বাগান থেকে। এবার বরই বিক্রি করে তিনি প্রায় কোটি টাকা আয় করবেন। গতবছর আমের মৌসুমে মিশ্র ফলের এই বাগান থেকে ২৫ লাখ টাকার আম বিক্রি করেছিলেন তিনি।

মিশ্র ফল বাগান করে সাখাওয়াত এলাকার অন্য কৃষকদের তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তার এই বাগান দেখে দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন বহু লোক আসেন। অনেকে তার কাছ থেকে মিশ্র ফলবাগান তৈরির পরামর্শ নেন। তার বিশাল এই মিশ্র ফল বাগানটি উপজেলা সদর থেকে চার কিলোমিটার দূরে শিরন্টি ইউনিয়নের ফুটকইল গ্রামের পাশে অবস্থিত।

১১২ বিঘা জমি জুড়ে দুই বছর আগে গড়ে তোলা এই বাগানে আম্রপালি, আশ্বিনা, বারি-৪ ও গৌড়মতি জাতের আম গাছ রয়েছে। তবে আম্রপালি জাতের আম গাছই বেশি। গাছের সারির ফাঁকা জায়গায় লাগিয়েছেন বলসুন্দরী, কাশ্মিরি আপেল, বেবি কুল, সেডলেস ও থাইকুল জাতের বরই গাছ। ১১ হাজার ৭০০টি বরই গাছের মধ্যে বলসুন্দরী জাতের বরই গাছই বেশি।

পাঁচ থেকে ছয় ফুট উচ্চতার আম গাছের সারির মাঝে চার থেকে সাড়ে চার ফুট উচ্চতার একেকটি বরই গাছ। এসব গাছের ডালে থোকায় থোকায় ধরে আছে বরই। আমের গাছগুলোতে মুকুল এসেছে। বিশাল সেই বাগানে ১০-১২ জন করে শ্রমিক বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে গাছ থেকে পাকা বরই ছিঁড়ছেন। বাগান থেকে সদ্যতোলা বরই কিনতে রাজশাহী ও পাবনাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসছেন পাইকাররা।

তরুণ উদ্যোক্তা সাখাওয়াত হাবিব আজকের বাংলাদেশ পোস্টকে বলেন, ‘বছরে প্রতি বিঘা জমি ২০ হাজার টাকা চুক্তিতে ২০১৯ সালে ফুটকইল গ্রামের ওই মাঠে ১১২ বিঘা জমি ১২ বছরের জন্য লিজ নেন। ওই বছরেই ইজারা নেওয়া জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির ১২ হাজার ৮০০টি আমের গাছ লাগান। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসের দিকে সেই বাগান পরিদর্শনে এসে সাপাহার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আম গাছের সারির ফাঁকা জায়গায় উন্নত বরই গাছ লাগানোর পরামর্শ দেন।

তার পরামর্শ মতো তিনি চুয়াডাঙ্গার জীবননগর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বরই গাছের চারা সংগ্রহ করেন এবং আমগাছের সারির ফাঁকে ফাঁকে ১ ফুট লম্বা সমপরিমাণ ১১ হাজার ৭০০টি বরই গাছের চারা রোপণ করেন। গত বছরের মে মাসে তিনি এসব চারা রোপণ করা হয়েছে। ১১২ বিঘা জমিতে বরই চাষ করতে তার প্রায় ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ২০০৭ সালে তার নিজের একটি মোটরসাইকেল ও মায়ের দেওয়া একটি গাভী বিক্রি করে ১ লাখ ১০ হাজার টাকায় পত্মীতলায় নির্মইল এলাকায় এক ব্যক্তির কাছ থেকে ১২ বিঘার একটি আমের বাগান তিন বছরের জন্য লিজ নেন। ওই বাগান পরিচর্যা করে পরের বছরই সেই বাগানের আম বিক্রি করে তিনি ৪ লাখ টাকা আয় করেন। লাভের সেই টাকা দিয়ে ১২ হাজার টাকা বিঘা চুক্তিতে ১২ বছরের জন্য নির্মইল এলাকায় আরও ২০ বিঘা জমি ইজারা নেন। সেখানে গড়ে তোলেন আমের বাগান। এরপর প্রতি বছর তার পুঁজি বাড়তে থাকে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় মিশ্র চাষ অধিক লাভজনক। মিশ্র বাগানে তেমন কোনো পরিচর্যা করতে হয় না। প্রথমে গাছ লাগানো এবং জমি তৈরির পর কীটনাশক ও যৎসামান্য পরিচর্যা ছাড়া কঠিন কোনো পরিচর্যা করতে হয় না।’

এ বিষয়ে সাপাহার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মজিবুর রহমান জানান, ‘সাখাওয়াত হাবিব যেন আরও বেশি লাভবান হতে পারেন সেজন্য তিনি তার আম বাগানের ফাঁকা জায়গা ফেলে না রেখে সেখানে বরই চাষ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। অনেক কৃষক সাখাওয়াতের মতো মিশ্র ফলবাগান গড়ে তোলার জন্য তাদের কাছে পরামর্শ নিতে আসছেন। আমের পাশাপাশি প্রতি বছরই উপজেলায় বরই চাষ বাড়ছে।’

বি এ আর/এমআইআর/এডিবি