ন্যাভিগেশন মেনু

আলোহীন দেয়ালে আটকা দৌলতদিয়ার কয়েক হাজার পতিতা


ইয়াসমীন আক্তার: বাংলাদেশে অনুমোদিত কয়েকটি পতিতালয়ের মধ্যে দৌলতদিয়া পতিতালয় একটি। বাংলাদেশে এ মুহূর্তে সর্ববৃহৎ পতিতাপল্লী হিসেবে নাম লিখিয়েছে পদ্মা নদী ঘেসা রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া পতিতা পল্লী। এ পতিতা পল্লীতে রয়েছে কয়েক হাজার ভাগ্যবিড়ম্বিত পতিতা।

দেশের বৃহত্তর পতিতা পল্লীটির অবস্থান রাজবাড়ী জেলার দৌলতদিয়ার পদ্মাঘাটে। প্রতিদিন এ পথে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে চলাচল করেন।

দুষ্কৃতীদের কারণে এ পল্লীটি এখন দেশের অন্যতম ক্রাইম জোন হিসেবেও পরিচিত।

যখন আমাদের চারপাশের মেয়েরা কথা বলে নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর সফলতা নিয়ে তখন  দৌলতদিয়া পতিতালয়ের চার হাজার নারী যৌন-কর্মী আজ আলোহীন দেয়ালের ভেতর থেকে বাইরে এসে আলোকিত জগতের উদার প্রাঙ্গনে দাঁড়ানোর সুযোগ থেকে বঞ্চিত। তারা আজ গভীরতর অন্ধকার এক জগতের স্থায়ী বাসিন্দা।

অবাক করার মত বিষয় হলেও সত্য যে -১৮ বছরের নিচে কোন নারী যৌন পেশায় লিপ্ত হতে পারবে না বলে আইনানুগ নিষেধাজ্ঞা সত্বেও নাবালিকা কিশোরীদরকে আটকে রেখে জোরপূর্বক যৌনকর্মে লিপ্ত হতে বাধ্য করার অভিযোগও রয়েছে।

শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন সব সময় সহ্য করা করতে হয় এছাড়া অনাহারেও থাকতে হয়। অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে, আত্মহত্যার মত ঘটনাও ঘটে এই পল্লিতে। তারা বরাবরই শক্তিশালী চক্রের হাতে জিম্মি।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সহজ সরল মেয়েদের ভাল কর্মসংস্থানের আশ্বাস অথবা প্রেমের ফাঁদে ফেলে দালালরা এইসব পতিতালয়ে নিয়ে এসে বিক্রি করে দেয়, আবার অনেকে আসে পেটের দায়ে।

তবে অসহায় নারীরা যখন বুঝতে পারেন তারা প্রতারিত হয়েছেন, তখন তাদের আর কিছু করার থাকে না। এদিকে মেয়ে কেনা-বেচার মাধ্যমকেও প্রচুর টাকা দেই এইসব চক্র।

তবে এখন দিন বদলেছে, পাল্টেছে এখন এখন অনেক চিত্র। পুলিশি তৎপরতায় দালাল, চাঁদাবাজ, নারী পাচারকারী এবং অসহায় যৌনকর্মী ও আগতদের নির্যাতনকারী চক্রের হোতারা এখন কোণঠাসা। গ্রেপ্তার এড়াতে তারা রয়েছেন আত্মগোপনে।

আর এই শৃঙ্খলা আনতে রাজবাড়ীর নবাগত পুলিশ সুপার দেননি ছাড়। হোতাদের সাথে সম্পর্ক ও মাদক বিক্রির দায়ে এক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার পাশাপাশি চার পুলিশ কর্মকর্তাকে করেছেন ক্লোজ।

সেই সাথে পল্লীর চার পাশে থাকা ৭টি দরোজা করেছেন তালাবন্ধ এবং মূল গেটের সামনে বসিয়েছেন পুলিশ বক্স।

এতে করে পল্লীর বাসিন্দা হয়েছেন আনন্দিত। তারা এখন অপতৎপরতাকারীদের নির্যাতন থেকে হয়েছেন মুক্ত।

সম্প্রতি দৌলতদিয়া পতিতা পল্লীর তিন শতাধিক শিশুকে দেয়া হয় রং পেনসিল, চিত্রাঙ্কন খাতা ও স্কুল ব্যাগ।

রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান পিপিএম ব্রিফিংয়ে বলেন, ওই সব শিশুরা রং পেনসিলের আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলবে তার মনের রং। যা তাদের জীবনের চলার পথে আনবে অনুপ্রেরণা।

ব্রিফিং-এ উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ সালাহ উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফজলুল করিম, সহকারী পুলিশ সুপার (পাংশা সার্কেল) লাবীব আব্দুল্লাহ, রাজবাড়ী থানার ওসি স্বপন কুমার মজুমদারসহ জেলা পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারা।

ওয়াই এ  / এস এস