ন্যাভিগেশন মেনু

মিশর ভ্রমণ : নীলনদ ও পিরামিডের দেশে

মিশর ভ্রমন অভিজ্ঞতায় নতুন মাত্রা যোগ


পৃথিবীতে খুব অল্প কিছু স্থান মানুষের আগ্রহ জাগিয়ে তুলতে পেরেছে। মিশর এমন এক রহস্যে ঘেরা আরাধ্য স্থান যেখানে সভ্যতার শুরু হয়েছিল আজ থেকে সাত হাজার বছর আগে এবং ভ্রমণপীপাসুদের কাছে যা সবসময়ই রোমাঞ্চকর।

রহস্যের সাথে কিছুটা ভয়ের মিশেলে কল্পনার বাঁধভাঙা কঠিন কিছু নয়। তবে যখন সেখানে পৌঁছানো হয়, তখন সমীহা, আতঙ্ক, কৌতূহল নিবারণের শূন্যস্থানটিতে জমাট বাঁধে ইতিহাস।

নীলনদ, ফারাও, পিরামিড, মমি আর প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাস বিজড়িত দেশ মিশর।  ভৌগোলিকভাবে, মিশর উত্তর-পূর্ব আফ্রিকার একটি দেশ। তবে এর সিনাই উপদ্বীপ এশিয়া মহাদেশের অন্তর্গত। মিশরের উত্তর-পূর্বদিকে ইসরাইল, দক্ষিণ দিকে সুদান এবং পশ্চিম দিকে লিবিয়া অবস্থিত।

মিশর সবচেয়ে বেশি পরিচিত প্রাচীন মিশরীয় নগরায়ন, মিশরীয় শিল্পকলা, হায়ারোগ্লিফিক এবং আরও বেশি পরিচিত এর পিরামিডগুলোর জন্য। এই দেশটি ইসলাম ও খ্রিষ্টান ধর্মের বিভিন্ন মধ্যযুগীয় ঐতিহ্যের জন্যও পরিচিত। বরাবরই মিশর সারা বিশ্বের ভ্রমণকারীদের জন্য একটি আকর্ষনীয় স্থান।

তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি, বাস্তব অভিজ্ঞতায় ভ্রমন বই হিসেবে লেখা 'ইজিপ্টনামা'। স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রাচীন মিশরের ইতিহাস সমৃদ্ধ নগরী থেকে বর্তমান সময়ের পরিবর্তনকে চোখে দেখে লেখার কাজটি করেছেন রুম্মান মাহমুদ। রঙ্গিন সচিত্র বর্ণনায় পাঠক হারিয়ে যাবেন মমির দেশে।

গীজা থেকে যাত্রা শুরু আলেকজান্দ্রিয়ার পথে, দূরত্ব ২২২ কিমি। নীল নদের পূ্র্বপাড়ে কায়রো আর পশ্চিমে গীজা। পাঠক শুরুতেই জানতে পারবেন কেন মিশরে '৬ অক্টোবর' অথবা '১০ রমজান' নামে শহর, বিশ্ববিদ্যালয় আর হাসপাতাল তৈরী করা হয়েছে। ৬ অক্টোবর দিনটি আরবী ক্যালেন্ডারে ১০ই রমজান হয় বিধায় এরকম নামকরণ। ৬ অক্টোবর সিটি, ১৯৭৩ এর আরব-ইসরাইল যুদ্ধের স্মৃতিকে ধরে রাখার প্রয়াস। একই সাথে লেখকের আফসোস আমাদেরও তো ১৬ ডিসেম্বর শহর নামে বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা হাসপাতাল থাকার কথা ছিল।

রহস্যময় কাটাকম্ব সমাধিস্থলটি ঘুরে দেখার মতো একটি যায়গা। মহাবীর আলেকজান্ডারের নির্দেশে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। বীর আলেকজান্ডার মিশর বিজয়ের পর শত্রুপক্ষের ঘোড়াগুলোকেও হত্যা করে এখানে সমাহিত করেছিল। এছাড়াও কায়রোতে খান ই খলিলী মার্কেটে দ্রব্যসামগ্রীর দামের ও মানের বিভন্নতার অনেক বর্ণনা এই বইতে পাবেন পাঠকেরা।

ভূমধ্যসাগরের পাড় ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা আলেকজান্দ্রিয়া শহর, এ শহরের নামের সাথেই জড়িয়ে আছে মহান বীরের নাম- আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট। খ্রীষ্টপূর্ব ৩৩১ সালে এই  পরাক্রমশালী বীর এই শহরের প্রতিষ্ঠা করেন। গ্রীক, অটোমান, নেপোলিয়ন, ফ্রেঞ্চ শাসনকাল পালাবদলের পর ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় এখানে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে মিশর এর ভাইসরয় মোহাম্মাদ আলীর সময় এই শহর আরো উন্নত হয়।

পাঠক এবার লেখকের সাথে হাটতে বেরুবেন, মোনতাজা পার্ক এবং প্যালেসে, যেখানে রাজ পরিবার এবং তাদের অতিথীবর্গের অবকাশকালীন সময় অতিবাহিত করার জন্যই মূলত এই পার্ক এবং প্যালেসের সৃষ্টি। সর্বমোট ১৫০ একর জায়গার মধ্যে চোখ জুড়ানো ল্যান্ডস্কেপে রাজকীয় এ বাগানবাড়ী দেখলে মুগ্ধতা ছড়াবেই।

কাইতবে দূর্গ (Citadel of Qaitbay) যেখানে এক সময় বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের একটি, আলেকজান্দ্রিয়ার বাতিঘর অবস্থিত ছিল। ১৫শ শতাব্দীতে ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী যতগুলি দূর্গ আছে তার মধ্যে এটিকে সবচেয়ে শক্ত প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সুলতান কাইতবে মূলত শিল্প এবং স্থাপত্যের প্রতি বিশেষ আগ্রহী ছিলেন। এজন্যই তিনি সমগ্র মিশরে প্রায় ৭০ টিরও বেশী মসজিদ, মাদ্রাসা, ঝর্ণা, দূর্গ ইত্যাদি তৈরী করেন। এমনকি তিনি মক্কা, মদীনা এবং জেরুজালেমেও তার স্থাপনাশৈলীর বিকাশ ঘটান। কথিত আছে যে, এই দূর্গ বানাতে সুলতান কাইতবে প্রায় ১,০০,০০০ দিনারের বেশী খরচ করেন এবং ২ বছর সময় নেন।

লেখক এবার পাঠককে বইয়ের খবর জানাবেন:

আলেকজান্দ্রিয়ার বিখ্যাত লাইব্রেরী বা Bibliotheca Alexandria-কে লাইব্রেরী বললেও এটি মূলত একটি সংগ্রহশালা। প্রায় ৮ মিলিয়ন বইয়ের সমাহার রয়েছে এখানে।

বলা হয়ে থাকে মিশর নীল নদের দান, যা ছাড়া মিশর অসম্পূর্ণ। ইংরেজীতে নাম Nile, ৬,৮৫৩ কিমি লম্বা এই নদীকে পৃথিবীর দীর্ঘতম নদী বলে উল্লেখ করা হয়। অবাক করা তথ্য হল, হাতে গোনা কয়েকটি নদীর মধ্যে এটি একটি যা দক্ষিণ থেকে উত্তরে প্রবাহিত হচ্ছে যেখানে পৃথিবীর অধিকাংশ নদীই  উত্তর থেকে দক্ষিনে প্রবাহিত হয়।

রাজনীতির রঙিন ময়দান, তাহরীর স্কয়ার। তাহরির শব্দের অর্থ Liberation বা স্বাধীনতা। সেই অর্থে কায়রোর তাহরির স্কয়ার আমাদের রেসকোর্স বা বর্তমান সময়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মত। ২০১১ এর অভ্যুত্থান এবং প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের অব্যাহতি এখান থেকেই সংঘটিত হয়।

মিশরীয় সভ্যতার ১৯তম রাজবংশের সম্রাট রামেসিস-২। তার মৃতদেহ ফ্রান্সে রাসায়নিক পরীক্ষা ও যথাযথ ব্যবস্থার জন্য পাঠানো হয় এবং পাঠানোর সময় তাঁর সম্মানার্থে তাঁর পাসপোর্ট বানিয়ে পাসপোর্টে পেশার জায়গায় সম্রাট (মৃত) বা King (Deceased) লেখার কথা প্রায় প্রতিটি জায়গাতে উল্লেখ আছে! তাঁর মরদেহ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সামরিক স্যালুটের মাধ্যমে ফ্রান্স গ্রহন করে। প্রায় ৬৫ বছর সময়কাল ধরে শাসন করা এই সম্রাট মিশরীয় সভ্যতায় বেশ আলোচিত ব্যাক্তি।

ইজিপশিয়ান মিউজিয়ামের ভেতরে মিশরের সর্বশেষ দুই ডাইনেস্টির বিভিন্ন জিনিসপত্র সংরক্ষিত আছে। এর মধ্যে রয়েছে ফারাও সম্রাট তুতমসিস-৩, তুতমসিস-৪, আমেনোফিস-২, কুইন হ্যাটশিপসুট এবং ভ্যালি অফ দ্যা কিংস এবং কিং তুতেনখামুন এর সমাধিস্থল থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন জিনিষের সমাহার। অবাক করা বিষয় হলো, এত বিখ্যাত আর এত গুরুত্বপূর্ন স্থাপনা “মিশরের পিরামিড”এর সর্বপ্রথম এবং সবচাইতে বড় পিরামিডটির স্রষ্টা কিং খুফুর নিজের কোন বড় মূর্তি কোথাও পাওয়া যায়নি। ইজিপশিয়ান মিউজিয়ামে তার একটিই মাত্র মূর্তি আছে যেটির উচ্চতা খুব বেশী হলে ৩/৪ ইঞ্চি।

ব্রিটিশ স্থপতি এবং ইজিপ্টোলজিস্ট হাওয়ার্ড কার্টার যখন লুক্সর শহরে ঐতিহাসিক “ভ্যালি অব কিংস”বা সম্রাটদের সমাধীস্থল আবিষ্কার করেন তখন সম্রাট তুতেনখামেন-এর সমাধী থেকেই সবচাইতে বেশী ৫,৩৯৮ টি ঐতিহাসিক দ্রব্যাদি উদ্ধার করা হয়। প্রায় ১০০ কেজির বেশী স্বর্ণ এবং কাঠের তৈরী সম্রাটের কফিন ছাড়াও আরও অনেক দ্রব্যাদি সেখানে ছিল যেগুলি প্রদর্শনীর জন্য মিউজিয়ামে আলাদা একটি অংশ রাখা হয়েছে।

সম্রাজ্ঞী হ্যাটশিপস্যুট ফারাও সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় এবং অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নারী শাসক । তাঁর তৈরী করা সমাধীটি মিশরীয় ইতিহাসের অন্যতম বড় একটি নিদর্শন। হ্যাটশিপস্যুটের এই সমাধীসৌধকে মিশরীয় ক্লাসিক স্থাপত্যের আদর্শ নিদর্শন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ৩টি আলাদা আলাদা এবং বড় চত্বর মিলে এই সৌধ তৈরী করা হয়েছে।

কায়রো মিউজিয়ামে অনেক মূর্তি দেখা গেলেও যুগল মূর্তির সংখ্যা নেহায়েতই কম। সম্রাট রাহোটেপ এবং নফরেত (Rahotep and Nofret) এর পরিচয় নিয়ে কিছুটা ধোঁয়াশা থেকেই যায়।

মমি নিয়ে দুর্লভ তথ্য নিয়ে এবার লেখক পাঠকদের অবাক করে দেবেন। প্রথমদিকে মমি করা হত শুধু ফারাও রাজবংশের উত্তরসূরীদের। ধীরে ধীরে তা বিত্তবান সমাজের মধ্যেও প্রচলন ঘটে। তবে রাজবংশ এবং সাধারণ জনগনের মমি এবং মাস্ক-দুই ক্ষেত্রেই একটা পার্থক্য আছে। সেটা হলো, কেবলমাত্র ফারাও রাজবংশের কেউ হলেই তাঁর মমি এবং মাস্কে দুটি হাত ক্রস অবস্থানে বুকের উপরে থাকবে। রাজবংশ ছাড়া অন্য কারও ক্ষেত্রে হাত শরীরের পার্শ্বে থাকে।

হায়ারোগ্লিফিকস, প্যাপিরাস , পিরামিড আর স্ফিংকস ছাড়া মিশর ভ্রমনের গল্প অসস্পূর্ণ। পিরামিড ভ্রমনে কিছু নিষেধ মানতে হবে যেমন, পিরামিডের ভেতরে ছবি তোলা সম্পূর্ণ নিষেধ, কারও কাছে কোন রকম সাহায্য চাওয়া যাবে না, কারও কোন কথায় কান দেয়া যাবে না, উপহার হিসেবেও যদি কেউ কিছু দিতে চায়, কোনক্রমেই সেটা নেওয়া যাবে না।

পিরামিড এলাকায় বিভিন্ন ভিউ পয়েন্টে যাওয়ার জন্য ঘোড়ার গাড়ী কিংবা উট আছে। দরদাম নিজেই আগে থেকে করা করে নেওয়া ভাল।

পিরামিডের নির্মাণশৈলী সত্যিই অবাক করার মত।  বড় পিরামিডটি গ্রানাইট এবং চুনাপাথরের সর্বমোট ২.৩ মিলিয়ন ব্লক দিয়ে তৈরী। চুনাপাথর, পাথর জোড়া দেয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল। গ্রাণাইটের প্রতিটি ব্লকের ওজন ছিল ২৫-৮০ টন যেগুলি মূলত পানিপথে প্রায় ৮০০ কি মি দূরে আসোয়ান থেকে আনা হতো। মোটামুটিভাবে ৫.৫ মিলিয়ন টন চুনাপাথর, ৮০০০ টন গ্রানাইট এবং ৫০০,০০০ টন চুন, বালি আর পানির মিশ্রণ এই কাজে ব্যবহার করা হয়। সাধারণত বর্ষাকালে নদীতে যখন পানি থাকতো তখন নৌকায় করে এসব পাথর আনা হতো। পিরামিডে যে পরিমান পাথরের ব্লক ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলি দিয়ে একবার ইউরোপ প্রদক্ষিণ করা সম্ভব!

ধারণা করা হয় যে, এই পিরামিড তৈরীতে প্রায় ২০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ শ্রমিক কাজ করেছে। এবং এই কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন দূর্ঘটনায় যেসব শ্রমিক মৃত্যুবরণ করছে তাদেরকে সম্মান দেখানোর জন্য সম্রাট পিরামিডেরই পার্শ্বে একটি জায়গায় তাদের সমাহিত করছেন যাতে তারা রাজার পার্শ্বেই থাকতে পারে।

সম্রাট খুফু পিরামিডের পার্শ্বে তার স্ত্রীদের জন্যেও ছোট ছোট ৩টি পিরামিড নির্মাণ করেছেন যাতে করে মৃত্যুর পরেও স্ত্রীরা তার পার্শ্বেই থাকতে পারে।

আরো একটি অবাক করা তথ্য হল, মিশরীয় সভ্যতায় প্রাসাদ মূলত নদীর পূর্ব দিকে গড়ে উঠেছে আর সমাধীগুলি পশ্চিমে। সূর্য পুর্বে ওঠা আর পশ্চিমে অস্ত যাওয়াকে কেন্দ্র করেই এই বিশ্বাস ফারাও রাজাদের মনে জন্মেছে বলে প্রচলিত রয়েছে।

ভ্যালি অব দ্যা কিংস আসলে চারিদিকে উঁচু উঁচু পাহাড়ের মধ্যে গড়ে ওঠা উপত্যকা যেখানে ফারাও সম্রাটরা তাদের সমাধীস্থল নির্বাচন করে নিজেদের জন্য সমাধীস্থল গড়ে তুলেছেন। গবেষকরা এখানে সর্বমোট ৬৩ জন ফারাও সম্রাটের সমাধী খুঁজে পেয়েছেন যার মধ্যে বিখ্যাত সম্রাট তুতেনখামেন, রামেসিস-২,৩,৪ ছাড়াও আরও অনেক সম্রাটের সমাধী রয়েছে। বর্তমানে সম্রাট তুতেনখানমের সমাধীতে শুধুমাত্র তাঁর মূল কফিন ছাড়া বাকি সবকিছুই নিয়ে যাওয়া হয়েছে কায়রো মিউজিয়ামে। ভ্যালি অব দ্যা কিংস দেখলে ফারাও সম্রাটদের মৃত্যু, এর পরবর্তী জীবন এবং সেজন্য তাদের প্রস্তুতির কথা ভেবে অবাকই হতে হবে।

মিডল কিংডম এবং নিউ কিংডমের বিস্তৃতি ছিল প্রায় খ্রীষ্টপূর্ব ২০০০ সাল থেকে শুরু করে খ্রীষ্টপূর্ব ১০০০ সাল পর্যন্ত। খ্রীষ্টপূর্ব ৩২০০ সালে থেবসের অস্তিত্য ছিল বলে প্রমান পাওয়া গেলেও, প্রকৃত পক্ষে ১৫০০ - ১০০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দের ইতিহাস থেবসের ক্ষমতা আর ঐশ্বর্যের ইতিহাস। এখনকার দিনের লুক্সরের দর্শনীয় স্থানের সবগুলোই এই সময়েই নির্মিত।

লুক্সর হচ্ছে মিশরের খুব বিখ্যাত এবং ঐতিহাসিক কয়েকটি শহরের একটি। এ শহরকে পৃথিবীর সবচাইতে বড় খোলা যাদুঘর বলা হয়ে থাকে।

প্রাচীন কালের থেবস নীল নদের দুই পাড়েই বিস্তৃত ছিলো। তাই নীলের পূর্ব পাড়ে দেখতে পাবেন লুক্সর টেম্পল আর কারনাক টেম্পল। নীলের পশ্চিম পাশে দর্শনীয় স্থান গুলো হচ্ছে ভ্যালী অব দি কিংস, ভ্যালী অব দি কুইনস, ভ্যালী অব দি নোবলস, টেম্পল অব দি কুইন হাচেপসুট, রামিসিয়াম, হাবু টেম্পল, দার উল মাদিনা, কলোসি অব মেমনন সহ আরও অনেক কিছু।

নিজের চোখকে বিশ্বাস করা যায় না। এতো পুরাতন জিনিসগুলো!!! ক্ষত বিক্ষত হয়েছে সময়ের সাথে যুদ্ধ করতে করতে, তবে এখনো দড়িয়ে আছে। সেই রং, সেই ঐশ্বর্য এখনো চোখে পড়বে। সেই সাথে বেড়ে যাবে শ্রদ্ধা বোধ, সেই প্রাচীন কালের মানুষগুলোর সৃষ্টিশীলতার প্রতি।

রানী হাচেপসু খ্রীষ্টপূর্ব প্রায় ১৪০০ সালে এর নির্মান কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে তুতমোসিস ৩, আমেন হোতেপ ৩ এবং রামেসিস ২ এর নির্মান সম্পন্ন করেন। ৪টি অংশের মধ্য মাত্র ১টি অংশেই এখন দর্শনার্থীদের গমনাগমনের অনুমতি রয়েছে। অন্তত ৩০ জন ফারাও সম্রাট এই কমপ্লেক্স নির্মাণে সরাসরি যুক্ত ছিলেন।

লুক্সর টেম্পলের ভেতরের অংশ এখানে বিভিন্ন জায়গাতে দেয়ালের গায়ে অসামান্য নৈপুণ্যে গড়া দেয়ালচিত্র (relics) চোখে পড়বে। এখানেই রয়েছে সম্রাজ্ঞী হ্যাটশিপস্যুটের তৈরী সমাধীসৌধ। দেয়ালচিত্রে হযরত ইউসুফ (আঃ) এর ঘটনার দেয়ালচিত্রও দেখতে পাই।

খান-ই খলিলি বাজারটা মূলত টার্কিশ গ্র্যান্ড বাজারের মতো অনেকটা আমাদের নিউ মার্কেটের মতো। মসজিদে ঢুকলাম। অনেক বড় আর সুন্দর মসজিদ। আসরের নামাজ পড়ে ভেতরে ছবিও তুললাম। সামনে্র দরজা দিয়ে বের হলেই হযরত ঈমাম হোসেন (রাঃ) এর মাজার। সেখানে গিয়েও দেখে এলাম রাসূল (সাঃ) এর আদরের দৌহিত্রের মাজার।

ভ্রমণ পিপাসু মানুষের জন্য ভ্রমণ সব সময়ই আনন্দের। মিশর ভ্রমন অভিজ্ঞতায় নতুন মাত্রা যোগ করবে। ইজিপ্টনামা বইটি একই সাথে পাঠকের জ্ঞানকে যেমন সমৃদ্ধ করবে, একই সাথে ভ্রমণ গাইড বুক হিসেবে অজানাকে সহজেই জানতে আগ্রহ মেটাবে। পাঠক ইতিহাস সমৃদ্ধ এরকম খুব কম দেশই বিশ্বের মানচিত্রে খুজে পাবেন।