ন্যাভিগেশন মেনু

অগ্নিঝরা মার্চের পঞ্চম দিন:

গায়েবানা জানাজা, ‘বাঁশের লাঠি তৈরি কর-পূর্ব বাংলা স্বাধীন কর’ শ্লোগানে মিছিল


৫ মার্চ, ১৯৭১। ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন নিহতদের স্মরণে গায়েবানা জানাজা পড়েন। ছাত্রলীগ ও ডাকসুর উদ্যোগে সর্বস্তরের মানুষ বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে থেকে লাঠি হাতে বিক্ষোভ মিছিল করে। ‘বাঁশের লাঠি তৈরি কর-পূর্ব বাংলা স্বাধীন কর’ শ্লোগান নিয়ে সর্বস্তরের মানুষের বিশাল লাঠি মিছিলে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে রাজপথ। 

মিছিলে একাত্মতা ঘোষণা করে ড. আহমদ শরীফের নেতৃত্বে শহীদ মিনারে শপথ নেন ঢাকার লেখক-শিল্পীরা। তাছাড়া, লাহোরে দেশের পূর্বাঞ্চলে সাম্প্রতিক আন্দোলনে নিহত শহীদদের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয় এবং সঙ্কটময় মুহূর্তে দেশের সংহতির জন্য বিভিন্ন মসজিদে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।

পাকিস্তান লেখক সংঘ, পূর্ব পাকিস্তান সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতি এদিন বিক্ষোভ মিছিল করে।

পূর্ব পাকিস্তান প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা নিরস্ত্র সাধারণ মানুষকে হত্যার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে একটি সমাবেশ করে। সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্যরা গণআন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে। তারা সংবাদপত্রের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিবাদে একটি বিক্ষোভ সমাবেশ করে। 

সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক কামাল লোহানী বিকেল তিনটায় প্রেসক্লাব চত্বরে সমাবেশের ডাক দেয়। পরে প্রেসক্লাব থেকে একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি বায়তুল মোকাররমে গিয়ে গণসমাবেশে রূপ নেয়।

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে হরতালের পর ব্যাংক খোলা থাকে। মসজিদে মসজিদে জুমার নামাজের পর শহীদানের আত্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকাসহ সারাদেশে প্রতিবাদ সভা ও শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়।

৫ম দিনের মতো হরতাল পালনকালে সশস্ত্রবাহিনী সদস্যদের গুলিতে টঙ্গী শিল্প এলাকায় ৪ জন শ্রমিক শহীদ হন এবং ২৫ জন শ্রমিক আহত হন। এ সংবাদে ঢাকায় জনসাধারণের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।

আওয়ামী লীগের এই প্রতিক্রিয়াকে পাকিস্তান পিপলস পার্টির পক্ষ থেকে অযৌক্তিক বলে অভিহিত করা হয়। এদিন সন্ধ্যায় সরকারিভাবে ঘোষণা দিয়ে কার্ফ্যু তুলে নিয়ে পাকিস্তানি সৈন্য ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। তবে তখন পরিস্থিতি ছিলো থমথমে।

পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো রাওয়ালপিন্ডির প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সাথে ৫ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আলোচনা করেন। বৈঠক শেষে পার্টির মুখপাত্র আবদুল হাফিজ পীরজাদা মন্তব্য করেন, জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত রাখার প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া যেভাই বিচার করা হোক না কেন, তা অত্যন্ত অবাঞ্ছিত এবং আদৌ যুক্তিযুক্ত নয়।

এদিন অবসরপ্রাপ্ত এয়ার মার্শাল আসগর খান বিকেলে করাচি থেকে ঢাকায় পৌঁছোন। তিনি রাতে বঙ্গবন্ধুর সাথে ধানমন্ডির বাসভবনে সাক্ষাৎ করেন।

রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদেশি বেতারে প্রচারিত ‘শেখ মুজিব ভুট্টোর সঙ্গে ক্ষমতা ভাগ ভাটোয়ারা করতে রাজি আছেন’ সংক্রান্ত সংবাদকে ‘অসদুদ্দেশ্যমূলক’ ও ‘কল্পনার ফানুস’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

এদিন তোফায়েল আহমদ ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দান থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সরাসরি রিলে করার জন্য ঢাকা বেতার কেন্দ্রের প্রতি আহ্বান জানান।

পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া গ্রুপ) আয়োজিত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের জনসভায় মতিয়া চৌধুরী বলেন, বাংলার স্বাধীনতা আন্দোলনের সংগ্রামকে সার্থক করার জন্য মুক্তিবাহিনী গঠন করতে হবে। সরকার যদি মনে করেন রক্ত নিয়ে বাঙালিকে দমন করা যাবে, তাহলে ভুল করেছেন। ঘটনা যাই ঘটুক, বাংলার বুকে স্বাধিকারের যে পতাকা আজ উড়ছে, তা নামানো যাবে না।

রাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ এক বিবৃতিতে বলেন, ঢাকা চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর সিলেটসহ বাংলাদেশের অন্যান্য স্থানে মিলিটারির বুলেটে নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষ, শ্রমিক, কৃষক ও ছাত্রদের হত্যা করা হচ্ছে। নির্বিচারে নিরস্ত্র মানুষকে এভাবে হত্যা করা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ছাড়া আর কিছুই নয়।

(তথ্যসুত্র: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ)

এডিবি/