ন্যাভিগেশন মেনু

অমিয় দত্ত ভৌমিক

আউটপুট এডিটর
অমিয় দত্ত ভৌমিক
Mar 30, 2021

মার্চ ১৯৭১

পাকবাহিনী বাঙ্গালি নিধনে মত্ত, ভারত বাড়িয়ে দেয় সাহায্যের হাত

পাকবাহিনী বাঙ্গালি নিধনে মত্ত, ভারত বাড়িয়ে দেয় সাহায্যের হাত

৩০ মার্চ ১৯৭১। বাঙালির স্বাধীনতা যুদ্ধ ও হানাদার বাহিনীর প্রতিরোধ পূর্ব বাংলায় ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরের মতো অন্য শহর ও গ্রামেও পাকিস্তানি হায়েনারা ঝাঁপিয়ে পড়ে। অপরদিকে ‘যার যা আছে তাই নিয়ে’ বীর বাঙালি স্থানে স্থানে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।এদিন পূর্ব পাকিস্তানের মুক্তিকামী নিরস্ত্র জনগণের উপর পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর নৃশংস হত্যাযজ্ঞে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী উদ্বেগ ও নিন্দা প্রকাশ করে বিবৃতি দেন। তিনি তাদের পার্লামেন্টে বলেন, “পূর্ব বঙ্গের সাড়ে সাত কোটি লোক তাদের স্বাধীনতার জন্য যে সংগ্রাম শুরু করেছেন, ভারত তাকে সাহায্য না করে পারে না। ভারত তাই সংগ্রামে সাহায্য করেই যাবে।”২৯ মার্চ দিবাগত রাতে অন্যদিনের তুলনায় ঢাকায় গোলাগুলি শব্দ খুব একটা শোনা যায়নি।সকালে সরকারি প্রেস ট্রাষ্টের মালিকানাধীন দ্য মর্নিং নিউজ (The Morning News) এক পৃষ্ঠায় খবর ছেপে আরেক পৃষ্ঠা সাদা রেখেই প্রকাশ করে।এদিনও সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ তুলে নেওয়া হয়। শহর ছেড়ে মানুষের গ্রামে যাওয়া থামেনি। শুধু ডেমরা আর কেরানীগঞ্জের পথেই লাখো মানুষ ঢাকা ছেড়ে যায় গত ৩ দিনে।৩০ মার্চ দ্বিতীয়দিনের মতো কেরানীগঞ্জ এলাকায় বিছিন্নভাবে পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিবিনিময় চলতে থাকে।এদিন তাজউদ্দীন আহমদ ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলামকে সঙ্গী করে কুষ্টিয়া জেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী টুঙ্গি গ্রামের এক সেতুর নিচে আশ্রয় নেন। এখানে বসেই তাজউদ্দীন আহমদ সিদ্ধান্ত নেন যে তারা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবেই ভারতে ঢুকবেন।চট্টগ্রামে স্বাধীন বাংলা বেতারের দুপুরের অধিবেশন শেষ হবার পরে পাকিস্তানী বিমান বাহিনীর প্লেনে বোমাবর্ষণ করে কালুরঘাট বেতার ট্রান্সমিশন এন্টেনাসহ ভবনের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। তবে কেউ হতাহত হয়নি। এদিন থেকে চট্টগ্রাম  পাকসেনা দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। নৌবাহিনীর গোলাবর্ষণও চলতে থাকে। রাতে কার্যত চট্টগ্রাম শহর হানাদার বাহিনীর দখলে চলে আসে। এদিন ও এর পরের কয়েকদিন চট্টগ্রামের লালখান বাজারে পাকসেনা, বিহারি এবং রাজাকাররা মিলে হত্যা করে প্রায় আড়াই হাজার বাঙালি। এদিন ‘ওয়াসার মোড়ের কল হতে পানি দেওয়া হচ্ছে’ এমন গুজব রটিয়ে জড়ো করা হয় বাঙালিদের। এরপর পাকিস্তানি সেনারা নির্মমভাবে গুলিকরে হত্যা করে শত শত বাঙালিকে। এরপর ওইদিন দুপুর থেকে বাঙালা দেখামাত্রই গুলি করে হত্যা করতে...


Mar 29, 2021

মার্চ ১৯৭১

পাকসেনা আর অবাঙ্গালিদের তাণ্ডব অব্যাহত, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যাওয়া হয় করাচি

পাকসেনা আর অবাঙ্গালিদের তাণ্ডব অব্যাহত, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যাওয়া হয় করাচি

২৯ মার্চ ১৯৭১। আগেরদিন সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত থেমে থেমে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় গোলাগুলির শব্দ আর মানুষ আর্তচিৎকার শোনা যায়। এদিনও সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কারফিউ তুলে নেওয়া হয়। রাস্তায় রাস্তায় দেখা যায় শহর ছেড়ে গ্রামে যাওয়ার চেষ্টারত মানুষের ঢল। শহরের বিভিন্ন প্রবেশ পথে সেনাবাহিনী চেকপোস্ট বসায়। পথচারীদের তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ করতে তৎপর দেখা যায়। ঢাকা আরিচা সড়কে কল্যাণপুর ব্রিজের কাছে অবাঙালিদের তৎপরতা গত দুদিনে বেড়ে যায়। এ পথে যাতায়াতকারীদের আটক ও তল্লাশি করা হয়। কাউকে সন্দেহ হলে ব্রিজের নিচে নিয়ে জবাই করা হয়।সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধুকে সেনানিবাস থেকে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে তেজগাঁও বিমানবন্দরে নিয়ে আসা হয়। তারপর রাতে সামরিক বাহিনীর একটি বিশেষ প্লেনে তাঁকে করাচি নিয়ে যাওয়া হয়।এদিন ঢাকার কেরানীগঞ্জ এলাকায় বিছিন্নভাবে পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের গোলাগুলি চলতে থাকে।বিকেল ৪টায় ময়মনসিংহে সেকেন্ড ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি অফিসার ও জওয়ানরা মেজর কে এম শফিউল্লাহর নেতৃতে স্বাধীন বাংলার প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করে এবং দেশমাতৃকার মুক্তির লড়াইয়ে জীবন বাজি রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করে। ব্যাটালিয়নের অফিসার এবং সৈনিকদের টাউন হলে একত্র করে তাদের আনুগত্য প্রকাশের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মেজর কে এম সফিউল্লাহ।২৯ মার্চ রাত দেড়টার দিকে পাকিস্তান আইনসভায় সর্বপ্রথম বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার জন্য ঐতিহাসিক প্রস্তাব উত্থাপনকারী আইনসভার সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ও তার বড় ছেলে দীলিপ দত্তকে কুমিল্লার বাসা থেকে পাকবাহিনী তুলে নিয়ে যায়। তাদের  আর কখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি।স্বাধীন বাংলা বেতারে তিনবেলায় ৩টি অধিবেশন প্রচার হয়। চট্টগ্রাম শহর আর শহরতলীর মুক্তিকামী মানুষের বাতিঘরে রূপ নেয় এই বেতার।এদিকে চট্টগ্রামের দক্ষিণ ও উত্তর থেকে বেলুচ রেজিমেন্ট ও চট্টগ্রাম সেনানিবাস এবং কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট থেকে অগ্রসরমান পাকসেনাদের শহরের খুব কাছে অবস্থান নেয়। সন্ধ্যা তাদের হামলা ও পাকিস্তানি নৌবাহিনীর গোলাবর্ষণের ফলে বিপর্যস্ত হয়ে বাঙালিসেনা, ইপিআর, পুলিশ ও জনতা এক পর্যায়ে পিছু হটতে থাকে।সন্ধ্যায় ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের অজ্ঞাত স্থান থেকে হেলিকপ্টারে করে শেখ মুজিবুর রহমানকে ঢাকা এয়ারপোর্টে এনে দ্রুত একটি বিশেষ বিমান যোগে করাচীর উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়।রাত ১১টায় জগদীশপুরের মহড়া থেকে প্রথম ইস্টবেঙ্গল ব্যাটালিয়নের সদস্যরা...


Mar 28, 2021

মার্চ ১৯৭১

সারাদেশে চলে হত্যযজ্ঞ, জিয়া নিজের ভুল সংশোধন করে মুজিবের নামে বেতারে বক্তব্য দেন

সারাদেশে চলে হত্যযজ্ঞ, জিয়া নিজের ভুল সংশোধন করে মুজিবের নামে বেতারে বক্তব্য দেন

২৮ মার্চ ১৯৭১। এদিন স্বাধীন বাংলা বেতারের সকালের অধিবেশনে মেজর জিয়া আগেরদিনের গভীর রাতে দেওয়া ভাষণের ভুল সংশোধন করে শেখ মুজিবের নামে পুনরায় বেতারে বক্তব্য দেন। এদিন “স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র” থেকে ‘বিপ্লবী’ শব্দটি মেজর জিয়ার পরামর্শে বাদ দেওয়া হয়।আগেরদিন সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হওয়া গোলাগুলির শব্দ ভোর হওয়ার সাথে সাথে থেমে যায়। সকাল ৭টা থেকে ১২টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিলের ঘোষণা হলেও পরে সময় বাড়িয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কারফিউ তুলে নেওয়া হয়। ঢাকা শহর পরিণত হয় এক ভূতুরে নগরীতে। সেই কালরাতের পর এদিন দুপুরের দিকে ঢাকা শহরের কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়। আতঙ্কিত দিশেহারা মানুষ ছুটে বেড়াচ্ছে এখানে সেখানে, কেউ স্বজন সন্ধানে কেউ খাদ্যের সন্ধানে। অধিকাংশ মানুষ যারা সরকারি চাকরি, ব্যবসা বা অন্যান্য কারণে একেবারেই ঢাকা ত্যাগে অপারগ, তারা ছাড়া আর প্রায় সকলেই শহর ছেড়ে গ্রামের চলে যাবার ব্যবস্থা করেন।দুদিন খবরের কাগজ বন্ধ থাকার পর এদিন দ্য পাকিস্তান অবজারভার প্রকাশ হয়। পাকিস্তানি সরকারের বিভিন্ন প্রেস নোটের বরাত দিয়ে তাদের খবরের ভরা ছিল ৪ পৃষ্ঠার কাগজ। এখানেই ছোট্ট করে শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তারের খবর বের হয়।এদিন প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিকভাবে গণহত্যার প্রতিবাদে এবং স্বাধীনতার প্রত্যয়ে বিশাল সমাবেশ ও বিক্ষোভ করে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাঙালি। লন্ডনের এ সমাবেশে অংশ নেন বিদেশিরাও।চট্টগ্রামের দক্ষিণ থেকে বেলুচ রেজিমেন্ট, উত্তর থেকে চট্টগ্রাম সেনানিবাস এবং কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট থেকে অগ্রসরমান পাকসেনাদের হামলায় বাঙালিসেনা, ইপিআর, পুলিশ ও জনতার প্রতিরোধ ব্যূহ টিকতে পারে না। তাই তাদের পিছিয়ে আসার কৌশল নিতে হয়।পাকিস্তানি নৌবাহিনী চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুর উপর গোলা নিক্ষেপ করে তাদের নৌবহর থেকে।সারাদেশে পাকবাহিনীকে প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়। দেশের বিভিন্ন জেলা ও মহকুমা শহরের পুলিশ, ইপিআর, ছাত্র-শিক্ষক, জনতা যার কাছে যা ছিল তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলায় ঝাঁপিয়ে পড়েন।এদিন থেকে বরিশালের পেয়ারাবাগান থেকে প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করে সিরাজ সিকদাররের পূর্ব পাকিস্তান (পূর্ববাংলা) সর্বহারা পার্টি।২৮ মার্চ রংপুরের বীর বাঙালিরা লাঠিসোঁটা, তীর-ধনুক, কোদাল, কাস্তে নিয়ে ক্যান্টনমেন্ট আক্রমণ করেছিলেন। মিঠাপুকুর অঞ্চলের উপজাতীয় সাঁওতাল তীরন্দাজ বাহিনীরা এই আক্রমণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এমন সময়...


Mar 27, 2021

মার্চ ১৯৭১

ভীত সন্ত্রস্ত মানুষ ছুটে আপনজনের সন্ধানে, স্বাধীনতার পক্ষে ভারতের সমর্থন

ভীত সন্ত্রস্ত মানুষ ছুটে আপনজনের সন্ধানে, স্বাধীনতার পক্ষে ভারতের সমর্থন

২৭ মার্চ ১৯৭১। ২৬ মার্চ সারাদিন ঢাকা শহরের এখানে সেখানে চলতে থাকে গুলি। রাতের আঁধার নেমে আসার সাথে সাথে গোলাগুলির আওয়াজও বাড়তে লাগলো। ২৭ মার্চ ভোর পর্যন্ত প্রধান জল্লাদমঞ্চ হলো পুরানো ঢাকা অলিগলি। এছাড়া মিরপুর, মহাম্মদপুরেও চললো পাকসেনা আর অবাঙালিদের নারকীয় তাণ্ডব।২৭ মার্চ সকালে বিভিন্ন জায়গা থেকে ধরে এনে রমনা কালী মন্দিরে ২৭ জনকে হত্যা করে পাকবাহিনী। ধারনা করা হয়, এখানে শহীদদের মধ্যে অধিকাংশই ইপিআর সদস্য।২৭ তারিখ সকালে কয়েকঘন্টার জন্যে কারফিউ তুলে নেওয়া হয়। ঢাকার ভীত-সন্ত্রস্ত মানুষ ছুটলো নিকটজনের সন্ধানে। কেউ পেলেন খুঁজে জীবিত তাদের, কেউ পেলেন স্বজনের পুড়ে যাওয়া কিংবা গুলিতে নিহত কুকুর-কাকে খাওয়া মরদেহ। পথে পথে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে মানুষের মরদেহ। রাজারবাগ পুলিশ লাইন বিধ্বস্ত, পুলিশ ব্যারাক-বাজার-বস্তি থেকে তখনও ধোঁয়া বেরুচ্ছে। হাসপাতালে তিল ধারণের জায়গা নেই চিকিৎসক, নার্স, আহত আর স্বজনের ভীড়ে।অসংখ্য মানুষকে হাতের কাছে যা পেয়েছে তাই পোঁটলা বেঁধে রিকশায় বা পায়ে হেঁটে ঢাকা শহর ছেড়ে যেতে দেখা যায়।কারফিউ শিথিল করার প্রথম সুযোগেই লালমাটিয়ার গোপন ডেরা থেকে ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলামকে সাথে নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ কেরানীগঞ্জের দিক দিয়ে ঢাকা ত্যাগ করেন।এদিন নিউ ইয়র্ক টাইমস, দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ, হিন্দুস্তান টাইমস-সহ বিশ্বের প্রধান খবরের কাগজে প্রথম পাতার উপরের অংশে স্থান পায় বাংলাদেশের খবর। মুখ্যত বলা হয়, ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে পাকিস্তানি বাহিনীর তৎপরতার কারণে পাকিস্তানের রাজনৈতিক সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের আশা শেষ হয়ে যায়, শেখ মুজিব বাংলাদেশ নামে পাকিস্তানের পূর্বাংশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনী শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করে। এর ফলে পূর্ব পাকিস্তানে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে।২৬ মার্চ আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম জেলা সাধারণ সম্পাদক এম.এ.হান্নান দুপুর ২টা ১০ মিনিটে এবং ২টা ৩০ মিনিটে আগ্রাবাদ চট্টগ্রাম বেতার থেকে মুজিবের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। এদিন সন্ধ্যায় আগ্রাবাদ বেতার ভবনের নিরাপত্তাহীনতার কথা ভেবে কয়েকজন বেতারকর্মী চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার ট্রান্সমিশন কেন্দ্রের স্টুডিও ব্যবহার করে স্বাধীন বাংলার বেতার কার্যক্রম শুরু করেন, নাম দেন “স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র”। এখান থেকেই ২৬ মার্চ কিছুক্ষণ পরপর শেখ মুজিবের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন...


Mar 25, 2021

মার্চ ১৯৭১

ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞ, গ্রেপ্তার হন বঙ্গবন্ধু

ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞ, গ্রেপ্তার হন বঙ্গবন্ধু

২৫ মার্চ, ১৯৭১। বাঙালী জাতির এক বিভীষিকাময় ভয়াল কালরাত। এদিন দুপুরের পর থেকেই ঢাকাসহ সারাদেশে থমথমে অবস্থা বিরাজ করতে থাকে। এদিন সকাল থেকেই সেনা কর্মকর্তাদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। হেলিকপ্টারে তারা দেশের বিভিন্ন সেনানিবাস পরিদর্শন করে বিকেলের মধ্যে ঢাকা সেনানিবাসে ফিরে আসে।এদিন ঢাকার ইপিআর সদর দপ্তর পিলখানাতে অবস্থানরত ২২তম বালুচ রেজিমেন্টকে পিলখানার বিভিন্নস্থানে অবস্থান নিতে দেখা যায়।২৫ মার্চ সকালে পাকিস্তান পিপলস্ পার্টি (পিপিপি) প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে ৪৫ মিনিট বৈঠক করে। তারপরই চলে যায় পাকিস্তান। আর এরই এক পর্যায়ে ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় কসাই টিক্কা খানকে গ্রিন সিগন্যাল দিয়ে গোপনে চোরের মতো করাচি পালিয়ে যায় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান।”অপারেশন সার্চলাইট” বাস্তবায়ন করতে ”বেলুচিস্তানের কসাই”খ্যাত জেনারেল টিক্কা খানকে দায়িত্ব দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সাথে ইয়াহিয়ার শঠতাপূর্ণ আলোচনা ছিল কেবলই একটি সময়ক্ষেপনের প্রক্রিয়া মাত্র।মধ্যরাতে পিলখানা ইপিআর, রাজারবাগ পুলিশ, নীলক্ষেত ঘুমন্ত মানুষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আক্রমণ করে পাকিস্তানের পিশাচ সেনারা। হানাদার বাহিনী ট্যাঙ্ক ও মর্টারের আঘাতে বিধ্বস্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা দখল নেয়। পাকিস্তানী হায়েনাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও। ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব ও জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মনিরুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৯ জন শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে চলে নৃশংসতম হত্যার সবচেয়ে বড় আঘাত। এখানে হত্যাযজ্ঞ চলে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত। হত্যাযজ্ঞ চলে সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে। গোটা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা পরিণত হয় ভুতুরে এলাকায়। সেনাবাহিনীর মেশিনগানের গুলিতে, ট্যাঙ্ক-মর্টারের গোলায় ও আগুনের লেলিহান শিখায় নগরীর রাত হয়ে উঠে বিভীষিকাময়। হানাদারেরা রাস্তার দুইপাশে ব্রাশফায়ার করে মেরে ফেলে অসংখ্য নিরীহ মানুষকে। মেডিকেল কলেজ ও ছাত্রাবাসে গোলার পর গোলা ছুঁড়ে হত্যা করা হয় অজস্র মানুষকে।এ ছাড়াও সেই রাতে একে একে দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সংবাদ, জাতীয় প্রেসক্লাবেও অগ্নিসংযোগ, মর্টার সেল ছুঁড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে পাক হানাদাররা। এ হামলায় জীবন দিতে হয় বেশ ক’জন গণমাধ্যমকর্মীকেও।অগ্নিসংযোগ করা হয় শাঁখারীপট্টি ও তাঁতীবাজারের অসংখ্য ঘরবাড়িতে। ঢাকার অলিগলিতে, বহু বাড়িতেও অগ্নিসংযোগ করা হয়।জাতিসংঘের ঘোষণায় ‘জেনোসাইড’-এর যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বাস্তবায়ন...


Mar 24, 2021

মার্চ ১৯৭১

বঙ্গবন্ধু-ইয়াহিয়া বৈঠক বাতিল, পাকিস্তানি সেনাদের বাঙালি নিধন শুরু

বঙ্গবন্ধু-ইয়াহিয়া বৈঠক বাতিল, পাকিস্তানি সেনাদের বাঙালি নিধন শুরু

২৪ মার্চ ১৯৭১। এদিন থকেই মূলত বাঙ্গালি নিধনের নিল নকশার বাস্তবায়ন শুরু করে পাকিস্তান সরকার। এদিন সৈয়দপুর, রংপুর, চট্টগ্রাম ও ঢাকার মিরপুরে বিহারীদের সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তানি সেনারা শত শত নিরীহ মুক্তিকামী বাঙ্গালিকে নির্বিচারে গুলিচালিয়ে হত্যা করে। বাতিল হয় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ইয়াহিয়া খানের চলমান বৈঠক।এইদিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের মধ্যকার পূর্বনির্ধারিত বৈঠকটি বাতিল হয়ে যায়।২৪ মার্চ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে সমাগত মিছিলকারীদের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আর আলোচনা নয়, এবার ঘোষণা চাই। আগামীকালের মধ্যে সমস্যার কোনো সমাধান না হলে বাঙালি নিজেদের পথ বেছে নেবে। আমরা সাড়ে সাত কোটি মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। কোনো ষড়যন্ত্রই আমাদের দাবিয়ে রাখতে পারবে না। বাংলার জনগণের ওপর কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হলে তা বরদাস্ত করা হবে না।’ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘কোনো রক্ত চক্ষু সহ্য করা হবে না। আমি কঠোর সংগ্রামের জন্য বেঁচে থাকবো কিনা জানি না। আমি যদি আপনাদের নির্দেশ দিতে না পারি তবে আপনারা আরও দৃঢ়তার সাথে ৭ কোটি বাঙালির মুক্তির জন্যে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।’তিনি আরও বলেন, ‘মানুষের মতো স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকবো, নয়তো সংগ্রামে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবো।’২৩ মার্চ রাত থেকে ২৪ মার্চ সকাল পর্যন্ত পাকসেনাবাহিনী সৈয়দপুর সেনানিবাসের পার্শ্ববর্তী বোতলাগাড়ী, গোলাহাট ও কুন্দুল গ্রাম ঘেরাও করে অবাঙালিদের সাথে নিয়ে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। এতে শতাধিক নিহত এবং অসংখ্য মানুষ আহত হয়। শহরে কারফিউ দিয়ে সেনাবাহিনীর সদস্য এবং অবাঙালিরা সম্মিলিতভাবে বাঙালির বাড়িঘরে আগুন দেয় এবং হত্যা অভিযান চালায়।রংপুর হাসপাতালের সামনে ক্ষুব্ধ জনতা ও সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে পাকসেনারা রংপুর সেনানিবাস সংলগ্ন এলাকায় নিরস্ত্র অধিবাসীদের ওপর বেপরোয়াভাবে গুলিবর্ষণ করে। এখানেও অর্ধশতাধিক নিহত এবং বহু আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।মিরপুরে অবাঙালিরা সাদাপোশাকধারী পাকসেনাবাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতায় বাঙালিদের বাড়িঘরের শীর্ষে ওড়ানো বাংলাদেশের পতাকা এবং কালো পতাকা নামিয়ে জোর করে তাতে আগুন দেয় এবং পাকিস্তানি পতাকা তোলে। রাতে বিহারীরা এখানে ব্যাপক বোমাবাজি করে আতঙ্কের সৃষ্টি করে।এদিন করাচি থেকে এমভি সোয়াত নামের একটি জাহাজ আসে। এতে পাঁচ হাজার ৬৩০ টন অস্ত্র আনা হয়। চট্টগ্রামে পাক সেনারা বন্দরের ১৭নং...


Mar 23, 2021

মার্চ ১৯৭১

পূর্ববাংলায় পালিত হয় প্রতিরোধ দিবস, ওড়ানো হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা

পূর্ববাংলায় পালিত হয় প্রতিরোধ দিবস, ওড়ানো হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা

২৩ মার্চ, ১৯৭১। এদিন প্রথমবারের মতো সারাদেশে স্বাধীন বাংলার পতাকা ও চলমান আন্দোলনে নিহত শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়।২৩ মার্চ সারাদেশে ‘পাকিস্তান দিবস’ বা ‘ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব দিবস’ বর্জন করে স্বাধীন বাংলা ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ ‘প্রতিরোধ দিবস’ এবং ন্যাপ (ভাসানী) ‘স্বাধীন পূর্ববাংলা দিবস’ হিসেবে পালন করে।আওয়ামী লীগ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর সদস্যদের সামরিক কায়দায় অভিবাদনের মধ্যদিয়ে সকালে ধানমন্ডির বাসভবনে শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে তুলে দেওয়া হয় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর বাসভবনে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। এ সময় ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ গানটি সমবেত কন্ঠে পরিবেশিত হয়। তাছাড়া, ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাধীন বাংলার পতাকা বিতরণ করা হয়।জয় বাংলা বাহিনীর পাঁচ শতাধিক সদস্য প্যারেড করে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে যান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে তাঁরা সেখানে অভিবাদন জানান। বঙ্গবন্ধু সালাম গ্রহণ শেষে জয় বাংলা বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত ভাষণে বলেন, বাংলার মানুষ কারো করুণার পাত্র নয়। আপনশক্তির দুর্জয় ক্ষমতাবলেই আপনারা স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনবেন। বাংলার জয় অনিবার্য।পাকিস্তান দিবসে ঢাকার প্রেসিডেন্ট ভবন ও সেনাবাহিনীর সদর দপ্তর ছাড়া বাংলাদেশে আর কোথাও পাকিস্তানের পতাকা ওড়েনি। যদিও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজকের দিনটিকে ‘ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব দিবস’ হিসেবে পালন করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সে অনুযায়ি ২৩ মার্চ সারা বাংলায় সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছিলেন।পাকিস্তান দিবসে ঢাকায় রমনা প্রেসিডেন্ট হাউজ, দিলকুশা গভর্নর হাউজ, ঢাকা বিমানবন্দর, সামরিক আইন প্রশাসকের দপ্তর ও ক্যান্টনমেন্টগুলো ছাড়া বাংলাদেশে আর কোথাও পাকিস্তানের পতাকা ওড়েনি।ঢাকায় সেক্রেটারিয়েট ভবন, হাইকোর্ট ভবন, পরিষদ ভবন, ইপিআর সদর দপ্তর, রাজারবাগ পুলিশ সদর দপ্তর, ঢাকা বেতার ভবন, ঢাকা টেলিভিশন ভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, টেলিফোন ভবন, হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টাল, প্রধান বিচারপতি ও মুখ্য সচিবের বাসভবনসহ সমস্ত সরকারি-বেসরকারি ভবন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলার পতাকা তোলা হয়। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করার সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সদস্যরা বাধা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে এর প্রতিবাদ জানায় ছাত্র-জনতা। প্রতিবাদের মুখে সেনাবাহিনী পিছু হটলে ইন্টারকন্টিনেন্টালে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়।ঢাকার নেপাল, ইরান, ইন্দোনেশিয়া ও চিনা দূতাবাসে প্রথমে পাকিস্তানি...


Mar 22, 2021

মার্চ ১৯৭১

বঙ্গবন্ধু-ইয়াহিয়া-ভুট্টোর বৈঠক, জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা

বঙ্গবন্ধু-ইয়াহিয়া-ভুট্টোর বৈঠক, জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা

২২ মার্চ ১৯৭১। অসহযোগ আন্দোলনের একুশতম দিন। সকাল সাড়ে ১১টায় প্রেসিডেন্ট ভবনে শেখ মুজিবুর রহমান, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও জুলফিকার আলী ভুট্টো সঙ্গে আলোচনায় মিলিত হন। বৈঠক চলে প্রায় ১ ঘন্টা ১৫ মিনিট। বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধু প্রেসিডেন্ট ভবনের বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আমার নির্ধারিত বৈঠক ছিল। সে অনুযায়ি আমি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করতে যাই। সেখানে মি. ভুট্টো উপস্থিত ছিলেন। আমি প্রেসিডেন্টকে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছি যে, ৪টি শর্ত পূরণ না হলে আমরা জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যোগদান করতে পারি না।’প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে নিজ বাসভবনে ফিরে আওয়ামী লীগপ্রধান শেখ মুজিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আন্দোলনে আছি এবং লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’আজকের আলোচনায় কতটুকু অগ্রগতি সাধিত হয়েছে বহু সাংবাদিকের এ রকম প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু খানিকটা উচ্চকণ্ঠে বলেন, ‘আলোচনায় অগ্রগতি সাধিত না হলে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি কেন? ’অপর এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘ইতোমধ্যে বাংলাদেশে গুরুতর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। জনগণের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।’২২ মার্চ সকালে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ২৫ মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেন, তাতে বলা হয়, ‘পাকিস্তানের উভয়াংশের নেতৃবৃন্দ এবং রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে সমঝোতার ক্ষেত্র অধিকতর প্রসারিত করার সুবিধার্থে ২৫ মার্চে আহূত জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করা হলো।’এদিকে রাজধানী ঢাকায় অবস্থানরত পশ্চিম পাকিস্তানের তিনটি পার্লামেন্টারি গ্রুপের নেতৃবৃন্দ ওয়ালী খান, দৌলতানা এবং মুফতি মাহমুদ প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্তে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করে এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা এখনো বিশ্বাস করি যে, যে কোন রকম জাতীয় ইস্যুতে আলোচনার এবং মীমাংসার সর্বাপেক্ষা উত্তম স্থান হচ্ছে জাতীয় পরিষদ।’এদিন ইয়াহিয়া খান মিয়া মমতাজ দৌলতানা, সরদার শওকত হায়াত খান, মওলানা মুফতি, খান আব্দুল ওয়ালী খান ও মীর গাউস বক্সের সাথেও আলোচনায় মিলিত হন।প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে কড়া সামরিক পাহারায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ফিরে দুপুরে ভুট্টো তার উপদেষ্টাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। পরেভুট্টোর নেতৃত্বে পিপলস পার্টি নেতারা সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট ভবনে যান এবং প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টাদের সাথে আলোচনায় বসেন।রাতে ভুট্টো হোটেল লাউঞ্জে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ‘‘প্রেসিডেন্ট...


Mar 21, 2021

মার্চ ১৯৭১

বঙ্গবন্ধু-ইয়াহিয়ার ৫ম দফা বৈঠক, ২৩ মার্চ প্রতিরোধ দিবস পালনের আহ্বান

বঙ্গবন্ধু-ইয়াহিয়ার ৫ম দফা বৈঠক, ২৩ মার্চ প্রতিরোধ দিবস পালনের আহ্বান

২১ মার্চ ১৯৭১। অসহযোগ আন্দোলনের বিশতম দিন। সকালে জাতীয় পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সাথে পঞ্চম দফা বৈঠকে মিলিত হন। ৭০ মিনিটের এই বৈঠকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ।বৈঠক শেষে প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সামনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে রাগত স্বরে বঙ্গবন্ধু বলেন, “বাংলাদেশের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।” সাংবাদিকরা আলোচনার ফলাফল জানতে নেতাকে চাপাচাপি করতে থাকলে তিনি আর কিছু বলতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে স্বীয় বাসভবনের উদ্দেশে যাত্রা করেন। বাসভবনে উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, “ইয়াহিয়া ও তার উপদেষ্টাগণের সাথে ৪টি শর্ত নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ওনারা আমার কাছে একটা কথাই বার বার বলছেন যে, আগে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসুক। আমি স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছি, এতো কিছু হওয়ার পরে আমার কাছে ওই ৪ দফা ছাড়া আর অন্য কোন কথা নাই। আমি আমার জনগণের কাছে যা বলেছি, বার বার তাই আমি আপনাদের কাছেও বলছি। এ ভিন্ন আমার অন্য কোন কথা নাই। আলোচনা সফল করতে হলে এখন প্রেসিডেন্টকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।” [তোফায়েল আহমেদ]ইয়াহিয়া খানের সাথে পঞ্চম দফা বৈঠকে মিলিত হওয়ার পূর্বে তাঁর নিজ বাসভবনে বিশিষ্ট আইনজীবী এ.কে.ব্রোহির সাথে এক সংক্ষিপ্ত আলোচনায় মিলিত হন।এদিন সকালে পাকিস্তানে নিযুক্ত মার্কন রাষ্ট্রদূত জোসেফ ফারল্যান্ড বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে তাঁর সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে মিলিত হন। মিঃ ফারল্যান্ড বঙ্গবন্ধুকে এমনকিছু প্রস্তাব দিয়েছিলেন যাতে বঙ্গবন্ধু তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে তৎক্ষণাৎ সেসব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন, “আমি আমার জনগণকে পাকিস্তানের শেয়ালদের হাত থেকে মুক্ত করে আমেরিকান বাঘদের হাতে তুলে দিতে পারি না।” [তোফায়েল আহমেদ]এদিনও মুক্তিকামী হাজার হাজার জনতার দৃপ্ত পদচারণায় ঢাকা অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। সর্বস্তরের মানুষের সম্মিলিত মিছিল ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান তুলে কেন্দ্রীয শহীদ মিনার অভিমুখে এগিয়ে চলে। সেখানে মুক্তি অর্জনের শপথ নিয়ে মিছিল যায় বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে। মিছিলকারীদের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, ‘আন্দোলন শিথিল হবে না’।এদিন শেখ মুজিব ভাসানীর কাছে বিশেষ দূত মারফত সংবাদ পাঠান।বিকেলে চট্টগ্রাম ন্যাপ প্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী পোলো গ্রাউন্ডে এক...


Mar 20, 2021

মার্চ ১৯৭১

বঙ্গবন্ধু-ইয়াহিয়ার ৪র্থ দফা বৈঠক, টিক্কা খানের ‘অপারেশন সার্চলাইট’ অনুমোদন

বঙ্গবন্ধু-ইয়াহিয়ার ৪র্থ দফা বৈঠক, টিক্কা খানের ‘অপারেশন সার্চলাইট’ অনুমোদন

২০ মার্চ ১৯৭১। অসহযোগ আন্দোলনের উনিশতম দিন। এদিন একদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের মধ্যে চতুর্থ দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় এবং অন্যদিকে জেনারেল টিক্কা খান পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে গোপন বৈঠকে বাঙালি নিধনের পরিকল্পনা ‘অপারেশন সার্চলাইট’ অনুমোদন দেয়।২০ মার্চ সকাল ১০টায় কঠোর সামরিক প্রহরায় রমনার প্রেসিডেন্ট ভবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের মধ্যে চতুর্থ দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর সাথে উপস্থিত ছিলেন তাঁর ছয়জন শীর্ষস্থানীয় সহকর্মী সৈয়দ নজরুল ইসলাম, খন্দকার মোশতাক আহমদ, এ এইচ এম কামারুজ্জামান, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, তাজউদ্দীন আহমদ ও কামাল হোসেন। ইয়াহিয়ার সঙ্গে ছিলেন বিচারপতি কর্নেলিয়াস, লেফটেন্যান্ট জেনারেল পীরজাদা ও কর্নেল হাসান।প্রায় সোয়া দুই ঘন্টা আলোচনা শেষে বঙ্গবন্ধু প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে বের হয়ে এসে দেশি বিদেশি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের আলোচনা এগিয়ে চলছে, কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার বলার নাই। সময় আসলে অবশ্যই আমি বিস্তারিত বলবো।’সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাব শেখ মুজিব জানান, ‘জয়দেবপুরে নিরস্ত্র জনতার ওপর সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণের ঘটনার প্রতি প্রেসিডেন্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমি আমার বক্তব্যে বলেছি। প্রেসিডেন্ট ঘটনাটি তদন্ত করে দেখবেন বলে আমাকে কথা দিয়েছেন।’এদিন বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রাক্তন নৌসেনাদের এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে তারা বঙ্গবন্ধু ঘোষিত মুক্তি সংগ্রামের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে সহযোগিতা করার জন্য একটি সম্মিলিত মুক্তিবাহিনী কমান্ড গঠনের জন্য সশস্ত্র বাহিনীর প্রাক্তন বাঙালি সৈনিকদের প্রতি আহ্বান জানান।সারাদিন মুক্তিপাগল জনতার দৃপ্ত পদচারণায় ঢাকার রাজপথ টালমাটাল হয়ে ওঠে। মিছিলের পর মিছিল যাচ্ছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অভিমুখে। সেখানে শপথ গ্রহণের শেষে একের পর এক শোভাযাত্রা বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাসভবনে গিয়ে সমবেত হয়। সেখানে সমাগত জনতার উদ্দেশে একাধিক সংক্ষিপ্ত ভাষণদানকালে মুজিব দৃঢ়তার সাথে ঘােষণা করেন, মুক্তিপাগল সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর চূড়ান্ত বিজয়কে পৃথিবীর কোনাে শক্তিই রুখতে পারবে না। বাংলাদেশকে কলােনি করে বাজার হিসেবে ব্যবহার করার দিন শেষ হয়ে গেছে। বাংলাদেশের মানুষের সার্বিক মুক্তি অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে। শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল পদ্ধতিতে জনগণ তাদের আন্দোলন চালিয়ে নিয়ে যাবেন। তাদের...


Mar 19, 2021

মার্চ ১৯৭১

জয়দেবপুরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দেশের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ

জয়দেবপুরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দেশের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ

১৯ মার্চ ১৯৭১। অসহযোগ আন্দোলনের আঠারোতম দিন। এইদিনে গাজীপুরের জয়দেবপুরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দেশের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ করা হয়। এদিন এই প্রতিরোধ আন্দোলনে চারজন বীর বাঙালি শহীদ হন। তাছাড়া আহত হন শত শত প্রতিবাদী জনতা।সেদিনও ছিল শুক্রবার। জয়দেবপুরের ভাওয়াল রাজবাড়িতে (বর্তমানে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়) অবস্থান ছিল দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের। এ রেজিমেন্টের ২৫-৩০ জন পশ্চিম পাকিস্তানি ছাড়া বাকি সবাই ছিলেন বাঙালি অফিসার ও সৈনিক।একদিকে চলছিলো স্বাধীনতার জন্য অসহযোগ আন্দোলন, অন্যদিকে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা বাঙালিদের দাবিয়ে রাখতে ষড়যন্ত্রের নীল নকশা এঁটে যাচ্ছিলো। এ ষড়যন্ত্রের একটি অংশ ছিলো বিভিন্ন সেনানিবাসে অবস্থানরত বাঙালি অফিসার ও সৈন্যদের বিচ্ছিন্ন করে কৌশলে তাদের নিরস্ত্র করা।পরিকল্পনা মতো ঢাকার ব্রিগেড সদর দপ্তর থেকে দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে নির্দেশ এলো, ১৫ মার্চের মধ্যে রাইফেল গুলিসহ ব্রিগেড সদর দপ্তরে জমা দিতে হবে। কিন্তু বাঙালি অফিসার ও সৈনিকরা অস্ত্র জমা দিতে অনিচ্ছুক। ওই সময় ঢাকার ব্রিগেড কমান্ডার পাকিস্তানী এক ব্রিগেডিয়ার নিজেই ১৯ মার্চ অস্ত্র ও গুলি আনতে জয়দেবপুরের যাওয়ার সময় বর্তমান চান্দনা চৌরাস্তায় হাজার হাজার বাঙালির ব্যারিকেডেের মুখে পড়ে।এদিনে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বর্তমান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক তার এক লেখায় যেভাবে দিনটির কথা বর্ণনা করেছেন:‘৯ মার্চ শুক্রবার আকস্মিকভাবে পাকিস্তানি ব্রিগেডিয়ার জাহান জেবের নেতৃত্বে পাকিস্তানি রেজিমেন্ট জয়দেবপুরস্থ (গাজীপুর) ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে নিরস্ত্র করার জন্য পৌঁছে যায়। একজন J.C.O  (নায়েব সুবেদার) জয়দেবপুর হাইস্কুলের মুসলিম হোস্টেলের পুকুরে (জকি স্মৃতির প্রাইমারি স্কুলের সামনে) গোসল করার সময় জানান যে, ঢাকা থেকে ব্রিগেডিয়ার জাহান জেব চলে এসেছে। খবর পেয়ে দ্রুত আমাদের তখনকার আবাসস্থান মুসলিম হোস্টেলে ফিরে গিয়ে উপস্থিত হাবিবউল্লাহ ও শহীদুল্লাহ বাচ্চুকে এ সংবাদ জানাই।শহীদুল্লাহ বাচ্চু তখনই রিকশায় চড়ে শিমুলতলীতে, মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি, ডিজেল প্লান্ট ও সমরাস্ত্র কারখানায় শ্রমিকদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে জয়দেবপুরে চলে আসার খবর দেওয়া হলে এক ঘণ্টার মধ্যে মাঠেই হাজার শ্রমিক জনতা চারিদিক থেকে লাঠিসোঁটা, দা, কাতরা (বল্লম), ছেনি, দোনালা বন্দুকসহ জয়দেবপুর উপস্থিত হয়। সেদিন জয়দেবপুর হাটের দিন ছিলো। জয়দেবপুর রেল গেইটে মালগাড়ির বগি, রেলের...


Mar 18, 2021

মার্চ ১৯৭১

সামরিক প্রশাসকের তদন্ত কমিটি প্রত্যাখ্যান করে তদন্ত কমিটি গঠন করেন বঙ্গবন্ধু

সামরিক প্রশাসকের তদন্ত কমিটি প্রত্যাখ্যান করে তদন্ত কমিটি গঠন করেন বঙ্গবন্ধু

১৮ মার্চ ১৯৭১। অসহযোগ আন্দোলনের সতেরোতম দিনে সরকারি বেসরকারি ভবনের ছাদে কালো পতাকা উড়িয়ে, অফিস আদালতে অনুপস্থিতিসহ বঙ্গবন্ধুর ঘোষিত সংগ্রামের কর্মসূচি চলতে থাকে।আগেরদিন ‘খ’ জোনের সামরিক আইন প্রশাসক যে তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন তা প্রত্যাখ্যান করে আওয়ামী লীগ। সেইসঙ্গে কমিশনের কাজে কোনভাবে সহায়তা না করার জন্যে তিনি জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোন্দকার মুশতাক আহমদ এবং চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত এম.এন.এ আবিদুর রেজা খানকে সদস্য করে বঙ্গবন্ধু একটি পাল্টা তদন্ত কমিশন গঠন করেন এবং তাঁদের সরজমিন তদন্তের জন্যে চট্টগ্রামে পাঠান।১৮ মার্চ সামরিক কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিশন প্রত্যাখ্যান করে বঙ্গবন্ধু এক বিবৃতি দেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন -'আমি দুঃখের সাথে বলছি যে, বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে আমি যে দাবি জানিয়েছিলাম, ঘোষিত “তদন্ত কমিশন” সে দাবি পূরণ করতে পারবে না। সামরিক আইন প্রশাসকের আদেশবলে এ তদন্ত কমিশন গঠন এবং সামরিক আইন কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের রির্পোট পেশ করার যে নির্দেশ দিয়েছেন তা অত্যন্ত আপত্তিজনক। কারণ এর শর্তাবলী পূর্বাহ্নে বিবেচ্য প্রধান প্রধান মৌলিক বিষয়গুলো নস্যাৎ এবং পৃথককৃত ঘটনাবলী সম্পর্কে তদন্ত করার পথ রুদ্ধ করে দেবে।এ তদন্ত কমিশনের একমাত্র বিবেচ্য বিষয় হলো - ‘২ মার্চ থেকে ৯ মার্চ পর্যন্ত কি পরিস্থিতিতে পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে বেসামরিক কর্তৃপক্ষকে সাহায্যের জন্যে সেনাবাহিনী তলব করা হয়েছিল। সুতরাং মৌলিক বিষয়টি এভাবেই স্থির করে দেওয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তদন্তের বিষয় ছিল বেসামরিক কর্তৃপক্ষকে সাহয্যের জন্যে জন্যে নিয়োগ না করে সেনাবাহিনীর নিয়োগ ও শক্তি প্রয়োগ রাজনৈতিক স্বার্থেই করা হয়েছিল কিনা? তাছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে প্রকৃতপক্ষে যেসব জোর-জুলুম করা হয়েছে এবং হাজার হাজার লোক হতাহত হয়েছে বলে সংবাদ পাওয়া গিয়েছে ‘কমিশন’-এর সে ব্যাপারে তদন্তের পথ রূদ্ধ করা হয়েছে। এর ফলে এমন কি হতাহতের সংখ্যা কতো এবং কোন পরিস্থিতিতে নিরস্ত্র জনগণের প্রতি গুলিবর্ষণ করা হয়েছে তারও তদন্ত করা যাবে না।সুতরাং ‘কমিশন’ কোনো সত্যিকার উদ্দেশ্য সাধন করতে পারবে না। ফলে, সত্যি ঘটনার মূল উদঘাটনের ব্যাপারে তদন্ত হবে না এবং এটা জনগণকে বিভ্রান্ত করার একটা ফন্দিমাত্র।সুতরাং আমরা এরূপ ‘কমিশন’ অনুমোদন করতে পারি না।...


Mar 17, 2021

মার্চ ১৯৭১

বঙ্গবন্ধু-ইয়াহিয়ার দ্বিতীয় দফা বৈঠক, সংগ্রামী দুর্গ গড়ে তোলার আহ্বান

বঙ্গবন্ধু-ইয়াহিয়ার দ্বিতীয় দফা বৈঠক, সংগ্রামী দুর্গ গড়ে তোলার আহ্বান

১৭ মার্চ, ১৯৭১। এদিনও অসহযোগ আন্দোলনের সভা, সমাবেশ, মিছিলে উত্তাল ছিল ঢাকাসহ সারাদেশ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে নির্দেশ দিচ্ছেন, বাংলার সব মানুষ তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করছেন। এদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সাথে দ্বিতীয় দফা বৈঠকে মিলিত হন। শেখ মুজিব কালো পতাকা শোভিত সাদা গাড়িতে চড়ে সকাল ১০টা ৫ মিনিটে প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রবেশ করেন এবং ১১টা ৬ মিনিটে বের হয়ে আসেন। এদিন বৈঠক প্রায় এক ঘন্টা চলে। প্রেসিডেন্ট ভবনে এই বৈঠক শুরু হয় কড়া সামরিক প্রহরার মধ্যে।আলোচনা শেষে অপেক্ষমাণ দেশি বিদেশি সাংবাদিকদের বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘দেখুন আমার বলার কিছুই নাই। আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। আমরা আবার আলোচনায় মিলিত হবো। পরবর্তী দফা আলোচনা কখন অনুষ্ঠিত হবে তার সময় এখনো নির্ধারণ হয় নাই।’তিনি আরও বলেন, ‘আমাদে সংগ্রাম অব্যাহত রয়েছে এবং লক্ষ্যে উপনীত না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে।’এরপর শেখ মুজিবুর রহমান প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে ধানমন্ডির বাসভবনে ফিরে যান। সেখানে পৌঁছালে দেশি বিদেশি সাংবাদিকদের অনুরোধে তিনি তাদের সাথে এক ঘরোয়া বৈঠকে মিলিত হন। জন্মদিনে তাঁর কামনা কি, এক বিদেশি সাংবাদিকের এই প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু জন্মদিনের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন - “আমার জীবনের সবচেয়ে বড় কামনা জনগণের সার্বিক মুক্তি।” সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, “আমি আমার জন্মদিন পালন করি না। এই দুঃখিনী বাংলায় আমার জন্মদিনই কী বা মৃত্যুদিনই বা কী? আমার আবার জন্মদিন কী? আমার জীবন নিবেদিত জনগণের জন্য।”পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আরও সৈন্য আনা হচ্ছে, সে সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু কিছু জানেন কি-না, বিদেশি এক সাংবাদিকের এ প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, আমার দেশের মাটিতে যা কিছু ঘটছে তার সব খবরই আমি রাখি।পরে বঙ্গবন্ধু দলীয় হাই কমান্ডের সাথে আলোচনায় মিলিত হন। আলোচনায় দলীয় হাই কমান্ডকে প্রেসিডেন্টের সাথে তার আলোচনা সম্পর্কে অবহিত করেন এবং সেই আলোকে পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করেন।মুজিব-ইয়াহিয়ার পরবর্তী বৈঠকের কোনো সময় নির্ধারণ না হওয়ায় জনমনে উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়। প্রতিদিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত উৎসুক জনতা তাদের আশা-আকাঙ্খার প্রতীক বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে ভিড় জমান। ১ মার্চ থেকে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনটি কেবল সর্বময় ক্ষমতার...


Mar 16, 2021

মার্চ ১৯৭১

বঙ্গবন্ধু-ইয়াহিয়ার বৈঠক, ভারতের ওপর দিয়ে বিদেশি প্লেন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা

বঙ্গবন্ধু-ইয়াহিয়ার বৈঠক, ভারতের ওপর দিয়ে বিদেশি প্লেন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা

১৬ মার্চ ১৯৭১। আজকের দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সকালে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে আড়াই ঘন্টাব্যাপী এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মিলিত হন। একদিকে অসহযোগ আন্দোলনের সভা, সমাবেশ, মিছিল অন্যদিকে মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক যেন সারাদেশকে আরও উত্তাল করে তোলে।শেখ মুজিবুর রহমান গাড়িতে কালো পতাকা উড়িয়ে এবং উইন্ডস্ক্রিনে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা লাগিয়ে সকাল সাড়ে ১০টায় প্রেসিডেন্ট হাউজে যান আলোচনা করতে। সেখানে ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত চলে এই বৈঠক।এ সময় বঙ্গবন্ধুর সাথে ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, খন্দকার মোশতাক আহমেদ, এম মনসুর আলী, এএইচএম কামরুজ্জামান ও ড. কামাল হোসেন। অন্যদিকে, ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে ছিলেন পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি কর্নেলিয়াস, জেনারেল টিক্কা খান, জেনারেল পীরজাদা, জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা, মেজর জেনারেল ওমর ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী।বৈঠকে বঙ্গবন্ধু ইয়াহিয়ার কাছে তার পুর্বঘোষিত চারটি শর্তের কথা ব্যক্ত করেন। প্রতিউত্তরে ইয়াহিয়া বঙ্গবন্ধুকে বলেন ‘সংবিধান তৈরির আগেই যদি সামরিক আইন প্রত্যাহার করা হয় তাহলে সাংবিধানিক জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।’আলোচনা শেষে শেখ মুজিব প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে বের হয়ে অপেক্ষমাণ দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের জানান, ‘আমি রাজনৈতিক সমস্যা সম্পর্কে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা করেছি। এটা এক দুই মিনিটের আলোচনায় সমাধানের বিষয় নয়। আরও আলোচনা হবে। কাল সকালে আমরা আবার আলোচনায় বসবো। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার বলার নেই।’তারপর বঙ্গবন্ধু প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে নিজ বাসভবনে ফিরে দলের শীর্ষস্থানীয় সহকর্মীদের সাথে আলোচনায় বসেন। গভীর রাত পর্যন্ত এই আলোচনা চলে।এই দিনে ভারত সরকার তাদের ভূখন্ডের ওপর দিয়ে সমস্ত বিদেশি প্লেন পূর্ব পাকিস্তানে যাতায়াতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিদেশি বিমানে পূর্ব পাকিস্তানে সৈন্য পরিবহন বন্ধ করার জন্যই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।১৬ মার্চ ভারতের সর্বোদয় নেতা জয়প্রকাশ নারায়ণ নয়াদিল্লীতে বলেন, জনসাধারণের গণতান্ত্রিক অধিকারে বিশ্বাসী বিশ্বের প্রতিটি মানুষ ও সরকারের উচিত শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশকে অকুন্ঠ সমর্থন দেওয়া।ময়মনসিংহে এক জনসভায় ন্যাপ প্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ অলঙ্কৃত করার জন্য শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি আহ্বান জানান।শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় খেতাব ‘তমঘা ই ইমতিয়াজ’...


Mar 15, 2021

মার্চ ১৯৭১

সেনাবাহিনী ছাড়া সবকিছু বঙ্গবন্ধুর নিয়ন্ত্রণে, ঢাকায় আসেন ইয়াহিয়া

সেনাবাহিনী ছাড়া সবকিছু বঙ্গবন্ধুর নিয়ন্ত্রণে, ঢাকায় আসেন ইয়াহিয়া

১৫ মার্চ ১৯৭১। উত্তাল-অগ্নিগর্ভ সারা বাংলা। শুধুমাত্র সেনাবাহিনী ছাড়া সর্ব ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু তথা আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। এদিনও পূর্ব বাংলায় অফিস আদালতে পূর্ণ কর্মবিরতি চলতে থাকে। ঢাকাসহ সারাদেশে সমাবেশ ও মিছিল চলতে থাকে। সরকারি ও বেসরকারি ভবনে এবং যানবাহনে কালো পতাকা ওড়ানো অব্যাহত থাকে।এদিন কঠোর নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে করাচি থেকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবু মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান ঢাকা বিমান বন্দরে অবতরণ করেন। বিমানবন্দরে সামরিক গভর্নর লে. জেনারেল টিক্কা খান তাকে স্বাগত জানান। কোনো সাংবাদিক ও বাঙালিকে এ সময় বিমানবন্দরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বিমান বন্দরে নেমে সময় ক্ষেপন না করে দ্রুত তিনি প্রেসিডেন্ট ভবনে চলে যান।প্রেসিডেন্ট ভবনের সামনে স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রামের একটি মিছিল প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অবস্থানের পর বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এবং বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকে।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাদা রঙের গাড়িতে কালো পতাকা উড়িয়ে ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে দেখা করতে যান। ১৬ মার্চ শুরু হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব-ইয়াহিয়া খানের পূর্বনির্ধারিত বৈঠক। স্বাধীনতার দাবিতে অটল থেকেই তিনি ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে আলোচনায় বসার ব্যাপারে সংকল্পবদ্ধ।এ প্রসঙ্গে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম তাঁর গ্রন্থ ‘একাত্তরের দিনগুলো’তে লিখেছেন, ‘... সিঁড়ির মুখ থেকে জামি চেঁচিয়ে ডাকল, মা, ভাইয়া, শীঘ্রই এসো, খবর শুরু হয়ে গেছে। টিভিতে শেখ মুজিবকে দেখাচ্ছে। হুড়মুড়িয়ে উঠে নিচে ছুটলাম। খবর খানিকটা হয়ে গেছে। শেখ মুজিবের গাড়িতে পতপত করে উড়ছে কালো পতাকা। দেখে প্রাণটা জুড়িয়ে গেল। প্রতিবাদের কালো পতাকা উঁচিয়ে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনায় গিয়েছেন শেখ মুজিব। এর আগে কোনদিনও পাকিস্তান সরকার বাঙালীর প্রতিবাদের এই কালো পতাকা স্বীকার করে নেয়নি। এবার সেটাও সম্ভব হয়েছে।’এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দু’জন ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী তাৎক্ষণিক পদত্যাগ করেন। এটিই ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালীন একমাত্র পদত্যাগ।১৪ মার্চ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন পাকিস্তান সরকারের দেওয়া খেতাব 'হেলালে ইমতিয়াজ' বর্জন করার পর ১৫ মার্চ সাংবাদিক, সাহিত্যিক আবুল কালাম শামসুদ্দিন 'সিতারা-ই খিদমত', অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী 'সিতারা-ই ইমতিয়াজ', নাটোরের জাতীয় পরিষদ সদস্য শেখ...


Mar 14, 2021

মার্চ ১৯৭১

দেশ চালাতে বঙ্গবন্ধুর ৩৫ নির্দেশনা, ‘পূর্ব পাকিস্তান’ কার্যত ‘বাংলাদেশ’

দেশ চালাতে বঙ্গবন্ধুর ৩৫ নির্দেশনা, ‘পূর্ব পাকিস্তান’ কার্যত ‘বাংলাদেশ’

১৪ মার্চ ১৯৭১। সামরিক আইন লঙ্ঘন করে বাঙালীর স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অসহযোগের আন্দোলন স্বতঃস্ফূর্ত অঙ্গশগ্রহণে এগিয়ে চলতে থাকে। বলতে গেলে ‘পূর্ব পাকিস্তান’ কার্যত তখন ‘বাংলাদেশ’। অফিস আদালত, বাড়ি, গাড়ি, দোকানপাট সব জায়গায় বাংলাদেশের পতাকা পতপত করে উড়ছে। পাকিস্তান রয়ে গেছে শুধু কাগজে-কলমে।আগের দিন ১৩ মার্চ জারিকৃত সামরিক বিধি নং ১১৫ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানালেও এদিন শেখ মুজিব এক বিবৃতিতে বলেন, “বাংলাদেশের মুক্তির স্পৃহাকে স্তব্ধ করা যাবে না। আমাদের কেউ পরাভূত করতে পারবে না, কারণ প্রয়োজনে আমরা প্রত্যেকে মরণ বরণ করতে প্রস্তুত। … আমি জনগণকে যে কোনো ত্যাগের জন্যে এবং সম্ভাব্য সব কিছু নিয়ে সে কোনো শক্তির মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে আবেদন জানাই।”এদিন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ দেশি বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনায় মিলিত হন। কিভাবে দেশের প্রশাসন চলবে এজন্য বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় ৩৫ দফা নির্দেশ জারি করা হয়।১৪ মার্চ বঙ্গবন্ধু ঘোষিত অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়ের কর্মসূচির শেষদিন ছিল। জাতীয় পরিষদ অধিবেশনে যোগদানের প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর চারদফা পূর্বশর্ত মেনে নেওয়ার দাবিতে ঢাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ছাত্র-শ্রমিক-পেশাজীবী সংগঠন এবং যুব মহিলা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে সভা-সমাবেশ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।এদিন সকালে বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে সংবাদপত্র প্রেস কর্মচারি ফেডারেশনের উদ্যোগে বায়তুল মোকাররমের সামনে সমাবেশ শেষে মিছিলসহ বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে গিয়ে তাঁর হাতে একটি আবেদনপত্র দেওয়া হয়। তাতে নেতারা যে কোনো নির্দেশ পালনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে অবিলম্বে একটি জাতীয় সরকার গঠন ও স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ ঘোষণার জন্য বঙ্গবন্ধুর প্রতি অনুরোধ জানান।১১৫নং সামরিক নির্দেশের প্রতিবাদে দেশরক্ষা বিভাগের বেসামরিক কর্মচারিরা নগরীতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। পরে তারা বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির বাসভবনে গিয়ে তাঁর সাথে দেখা করে বর্তমান আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন। এদিন স্বাধীনতাকামী মানুষ বেশ কিছু মিছিল বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে যান।এদিন সকালে ঢাকায় ন্যাপ (ওয়ালী) প্রধান ওয়ালী খানের সাথে শেখ মুজিবুর রহমানের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ধানমন্ডি ৩২ এ মুজিবের বাসভবনে রুদ্ধদ্বার প্রায় দেড় ঘন্টার এ আলোচনাকালে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এ.এইচ.এম কামরুজ্জামানসহ কয়েকজন আওয়ামী নেতা ও ন্যাপ নেতা গাউস বক্স বেজেঞ্জো উপস্থিত ছিলেন।বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধু অপেক্ষমাণ দেশি বিদেশি সাংবাদিকদের বলেন,...


Mar 13, 2021

মার্চ ১৯৭১

আওয়ামী লীগের প্রতি জাতীয় পরিষদের সংখ্যালঘু দলগুলোর সমর্থন

আওয়ামী লীগের প্রতি জাতীয় পরিষদের সংখ্যালঘু দলগুলোর সমর্থন

১৩ মার্চ, ১৯৭১। অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত ছিলো। স্বাধীনতা লাভের আকাঙ্খায় আন্দোলন-সংগ্রামে মুখর পূর্ব বাংলার জনপদ। প্রতিটি ঘরে ও ভবনের ছাদে উড়তে থাকে বাংলাদেশের পতাকা আর কালো পতাকা। চারদিকে চলতে থাকে সভা-সমাবেশ। অসহযোগ আন্দোলনের এক সপ্তাহেই দেশ পুরোপুরি অচল হয়ে পড়ে। এদিন জাতীয় পরিষদের সংখ্যালঘিষ্ট দলগুলো আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থন জানায়।পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যালঘু সংসদীয় দলগুলো লাহোরে এক বৈঠকে মিলিত হয়ে আওয়ামী লীগের ৭ মার্চের ভাষণে উত্থাপিত ৪টি দাবির প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে ২৫ মার্চের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠের হাতে কেন্দ্র ও প্রাদেশিক ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানায়।জমিয়াতুল উলামা-ই-ইসলামের নেতা মওলানা মুফতি মাহমুদের সভাপতিত্বে এ সভায় উপস্থিত ছিলেন, মুসলিম লীগ (কাউন্সিল) নেতা মিয়া মমতাজ দৌলতানা এবং সরদার শওকত হায়াত খান, জমিয়তে উলামা-ই-পাকিস্তানের মওলানা শাহ আহমদ নূরানি, জামায়েতে ইসলামীর অধ্যাপক আব্দুল গফুর, মুসলীম লীগ (কনভেনশন) এর জামাল মো. কোরেজা এবং স্বতন্ত্র সদস্য মওলানা জাফর আহমদ ও সরদার মওলা বক্স সুমরো। সভায় ন্যাপ (ওয়ালী) দলের কেউ উপস্থিত না থাকলেও তারা এ প্রস্তাব সমর্থন করে। কিন্তু মুসলীম লীগ (কাইয়ুম) এ প্রস্তাবের বিরোধীতা করে।এই সভায় জমিয়াতুল উলামা-ই-ইসলামের নেতা মওলানা মুফতি মাহমুদ তিনটি আহ্বান জানান।১) পূর্ব পাকিস্তান থেকে সামরিক আইন প্রত্যাহার।২) ২৫ মার্চের আগে ক্ষমতা হস্তান্তর।৩) সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া।১৩ মার্চ পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ ১১৫নং সামরিক আদেশ জারি করে আগামী ১৫ মার্চ সকাল ১০টার প্রতিরক্ষা বিভাগের বেসামরিক কর্মচারীদের কাজে যোগদানের নির্দেশ দেয়। এই সামরিক নির্দেশে বলা হয়, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজে যোগদানে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্টদের চাকুরিচ্যুত ও পলাতক ঘোষণা করে সামরিক আদালতে বিচার করা হবে। নির্দেশ অমান্যকারীদের সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হবে।এই সামরিক নির্দেশ জারির পর পরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, যখন আমরা সামরিক শাসন প্রত্যাহারের জন্য বাংলার জনগণের প্রচণ্ড দাবির কথা ঘোষণা করেছি ঠিক তখন নতুন করে এধরনের সামরিক নির্দেশ জারি পক্ষান্তরে জনসাধারণকে উস্কানি দেওয়ার শামিল।১৩ মার্চ মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী কিশোরগঞ্জের ভৈরবে এক জনসভায় বলেন, “বাংলাদেশ সম্পূর্ণ স্বাধীন, শ্লোগানের প্রয়োজন নাই”। এদিন তিনি রাজবন্দীদের মুক্ত করার জন্য ‘জেল ভাঙ্গা’ আন্দোলনের ডাক দেন।এদিন...


Mar 12, 2021

মার্চ ১৯৭১

পুরো বাংলা চলতে থাকে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে, শাপলাকে জাতীয় ফুল ঘোষণা

পুরো বাংলা চলতে থাকে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে, শাপলাকে জাতীয় ফুল ঘোষণা

১২ মার্চ ১৯৭১। অন্যদিনের মতো এই দিনটিতেও বাঙ্গালি জাতি পার করছিল এক উত্তাল সময়। এদিন শাপলা ফুলকে বাংলাদেশের জাতীয় ফুল হিসেবে ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।১২ মার্চ সারাদেশ ছিল আন্দোলন সংগ্রামমুখর। প্রতিদিনই ছোট বড় অসংখ্য মিছিল বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনে আসতে থাকে।বঙ্গবন্ধুর ডাকে সর্বত্র অসহযোগ চলমান। সরকারি আধাসরকারি কর্মচারিদের কর্মস্থল বর্জন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তালা, সরকারি ও বেসরকারি ভবন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাড়ি ও যানবাহনে কালো পতাকা ওড়ানোর মাধ্যমে অব্যাহত থাকে। পূর্ব বাংলায় পাকিস্তানী শাসন ব্যবস্থা বলে কিছু ছিলো না। শুধুমাত্র ক্যান্টনমেন্ট ছাড়া পুরো বাংলার সবকিছু পরিচালিত হতে থাকে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে।এদিন প্রায় অর্ধশত চারু ও কারুশিল্পীর উপস্থিতিতে পটুয়া শিল্পী কামরুল হাসানের আহ্বানে সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। আয়োজিত সভায় মুর্তজা বশির ও কাইয়ুম চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে  ‘চারুশিল্প সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করা হয়। এ সভায় শাপলা ফুলকে বাংলাদেশের জাতীয় ফুল হিসেবে ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঘোষণা শেষে মুক্তিকামী মানুষকে সেদিন আরও বেশি উৎসাহী করে তুলতে তারা প্রতিবাদী পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন বিলি করেন।চলচ্চিত্র প্রদর্শকরা অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ঢাকাসহ সারাদেশে অনির্দিষ্টকাল সিনেমাহল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।পূর্ব পাকিস্তানের সাংবাদিক ইউনিয়ন আন্দোলনকে জোরদার করতে, আরও সঙ্ঘবদ্ধ করতে রাজপথে নেমে আসে। পাকিস্তানবিরোধী স্লোগানে রাজপথকে উত্তাল করে তোলে।জাতীয় পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ জহিরুদ্দিন তার পাকিস্তানি খেতাব বর্জন করেন।প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগ দলের নেতা ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের জন্য পাঠানো খাদ্যবোঝাই মার্কিন জাহাজের গতি বদলে করাচি পাঠানোয় উৎকন্ঠা ও তীব্র নিন্দা জানান।প্রতিদিনের মতো এদিনও ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রলীগ, ফরওয়ার্ড স্টুডেন্ট ব্লক ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন শহরে মিছিল-সমাবেশ করে।ময়মনসিংহে এক জনসভায় ন্যাপপ্রধান আবদুল হামিদ খান ভাসানী সাত কোটি বাঙালীর মুক্তিসংগ্রামে শেখ মুজিবের নেতৃত্বের প্রতি তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীত্বের পদে লাথি মেরে শেখ মুজিব যদি বাঙ্গালীর স্বাধিকার অর্জনের আন্দোলনকে সঠিক ভাবে নেতৃত্ব দিতে পারে তাহলে তিনি ইতিহাসের কালজয়ী বীর হিসেবে অমর হয়ে থাকবেন”।১২ মার্চ পূর্ব পাকিস্তানের সিভিল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বাঙালি আমলারা স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। তারা আন্দোলনে অর্থের যোগান দিতে তাদের একদিনের বেতন দেওয়ার ঘোষণা দেন।বগুড়া জেলখানা...


Mar 11, 2021

মার্চ ১৯৭১

চলতে থাকে অসহযোগ আন্দোলন, ছাত্র ইউনিয়নের পূর্ববাংলা কায়েমের আহ্বান

চলতে থাকে অসহযোগ আন্দোলন, ছাত্র ইউনিয়নের পূর্ববাংলা কায়েমের আহ্বান

১১ মার্চ ১৯৭১। এদিনও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশ অনুযায়ি সরকারের সাথে সবধরনের অসহযোগিতা অব্যাহত রাখেন স্বাধীন বাংলার দাবিতে অবিচল সর্বস্তরের মানুষ। অসহযোগ আন্দোলনের সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে হাইকোর্টের বিচারপতি ও প্রশাসনের সচিবসহ সারা বাংলায় সরকারি ও আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা অফিস বর্জন করেন। বাংলার সর্বত্র ওড়তে থাকে স্বাধীন বাংলার পতাকা। সিনেমাহলগুলোতে বাংলাদেশের নতুন পতাকা প্রদর্শন এবং বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ বাজানো অব্যাহত থাকে।আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জননেতা তাজউদ্দিন আহমেদ এক বিবৃতিতে চূড়ান্ত বিজয়ের জন্য অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কঠোর শৃঙ্খলা রক্ষার আহ্বান জানান। অসহযোগ আন্দোলনের নেতা-কর্মী সমর্থকদের তিনি অভিনন্দন জানান। অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে বিশ্ববাসীর সমর্থন চান। গণআন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের জন্য ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের একদিনের বেতন আওয়ামী লীগের ত্রাণ তহবিলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।গণহত্যার প্রতিবাদে চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীর পাকিস্তান সরকারের এক চিত্রপ্রদর্শনীতে যোগদানে অস্বীকৃতি জানান। এসময় তিনি দেশের অন্য চিত্রশিল্পীদেরও যোগদানে বিরত থাকার আহ্বান জানান।১১ মার্চ ন্যাপ (ওয়ালী) পূর্ববাংলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ, পাঞ্জাব আওয়ামী লীগ সভাপতি এম. খুরশীদ, কাউন্সিল মুসলিম লীগ প্রধান মমতাজ দৌলতানার বিশেষ দূত পীর সাইফুদ্দিন ও ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘের সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি কে. উলফ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তাঁর ধানমন্ডির বাসভবনে আলাদা আলাদা বৈঠক করেন।এই দিনে ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবস উপলক্ষে নির্ধারিত সম্মিলিত সশস্ত্র বাহিনীর কুচকাওয়াজ ও অন্যান্য অনুষ্ঠান পাকিস্তান সরকার বাতিল ঘোষণা করে।এদিকে চট্টগ্রাম বন্দর অভিমুখে ৩২ হাজার টন গম নিয়ে ‘ভিনটেজ হরাইজন’ নামক একটি মার্কিন জাহাজ গতি ঘুরিয়ে পাকিস্তানের করাচিতে পাঠিয়ে দেওয়ায় সারাদেশের মানুষ উৎকণ্ঠা ও নিন্দা জানায়।এদিকে ছাত্র ইউনিয়নের উদ্যোগে বিকেল ৪টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে পথসভা ও খণ্ড মিছিল বের হয় এবং স্বাধীন পূর্ববাংলা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন আরও দুর্বার করে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে লিফলেট বিতরণ করা হয়।জনগণের প্রতি ছাত্র ইউনিয়নের স্বাধীন পূর্ববাংলা কায়েম করার সংগ্রামের যে আহ্বান ছিল তা হলো:১) রাজনৈতিক প্রচার অব্যাহত রাখুন। গ্রাম অঞ্চলে কৃষকদের মধ্যে ইহা ছড়াইয়া দিন।২) সর্বত্র ‘সংগ্রাম কমিটি’ ও ‘গণবাহিনী’ গড়িয়া তুলুন।৩) শত্রুর মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকুন।৪) যে...


Mar 10, 2021

মার্চ ১৯৭১

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে চলতে থাকে দেশ, চট্টগ্রামে অস্ত্র খালাসে শ্রমিকদের অস্বীকৃতি

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে চলতে থাকে দেশ, চট্টগ্রামে অস্ত্র খালাসে শ্রমিকদের অস্বীকৃতি

১০ মার্চ ১৯৭১। আওয়ামী লীগের ঘোষিত আন্দোলন কর্মসূচি সারাদেশে পালিত হয়। এদিনও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে সারাদেশে সরকারি ও আধাসরকারি অফিসের কর্মচারীরা কাজে যোগদান থেকে বিরত থাকেন। শুধু বেসরকারি অফিস, ব্যাংক ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকে।অনেক বাড়িতে ওড়তে থাকে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত স্বাধীন বাংলার পতাকা। রাজারবাগ পুলিশ লাইন, থানা ও হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির বাসভবনসহ সরকারি ও বেসরকারি ভবন, ব্যবসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কালো পতাকা ওড়ে। সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তিগত যানবাহনের পাশাপাশি পুলিশ বাহিনীর গাড়িগুলোও কালো পতাকা লাগিয়ে রাজপথে চলাচল করে।সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হল প্রাঙ্গণে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উদ্যোগে এক কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই কর্মীসভায় ছাত্রলীগ ও ডাকসু নেতাদের স্বাক্ষরিত স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের এক বিবৃতিতে বাঙালি সৈন্য, ইপিআর ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের প্রতি পাকিস্তানী উপনিবেশবাদী সরকারকে সহযোগিতা না করার আবেদন জানানো হয়।তাছাড়া, এই সভায় সরকারের গুম-খুন-হত্যা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে তখন পর্যন্ত যেসব বাড়ি বা প্রতিষ্ঠানে কালো পতাকা ওড়ানো হয়নি, সেখানে কালো পতাকা ওড়ানোর আহ্বান জানানো হয়।এদিন সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর বাসভবনে একদল বিদেশি সাংবাদিকদের সাথে সাক্ষাৎকারে দেন। বঙ্গবন্ধু এ সময় বলেন, সাতকোটি বাঙালি আজ নিজেদের অধিকার সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন। যে কোনো মূল্যে তারা এই অধিকার আদায়ে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। এ পর্যন্ত বাঙালিরা অনেক রক্ত দিয়েছে। এবার আমরা এই রক্ত দেওয়ার পালা শেষ করতে চাই। বাঙালি চায় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি। বঙ্গবন্ধু তাঁদের বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা কোনো আপস করব না।’ন্যাপ (ওয়ালী) পূর্ববাংলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ, পাঞ্জাব আওয়ামী লীগ সভাপতি এম. খুরশীদ, কাউন্সিল মুসলিম লীগ প্রধান মমতাজ দৌলতানার বিশেষ দূত পীর সাইফুদ্দিন ও ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘের সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি কে. উলফ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তাঁর ধানমন্ডির বাসভবনে পৃথক পৃথক বৈঠকে মিলিত হন।এদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, ক্ষমতাসীন চক্র প্রতিহিংসা-পরায়ণ মনোবৃত্তি নিয়ে বাংলাদেশর জনগণের বিরুদ্ধে গভীর চক্রান্তে লিপ্ত। সামরিক সজ্জা অব্যাহত রেখে বাংলার বুকে এক জরুরী অবস্থা কায়েম রাখার প্রয়াসী। তারা বাংলাদেশের সর্বত্র এক ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের ভীতসন্ত্রস্ত...